শ্বাপদ সনে গ্রাফিক নভেল – নাবিল মুহতাসিম Swapad Sone by Nabil Muhtasim

শ্বাপদ সনে গ্রাফিক নভেল – নাবিল মুহতাসিম Swapad Sone by Nabil Muhtasim

শ্বাপদ সনে গ্রাফিক নভেল – নাবিল মুহতাসিম ছবি - অ্যান্ড্রয়েড অনীক

ভূমিকা
দ্য হিউম্যান কাইমেরা'র ভূমিকায় লিখেছিলাম: এ বইটিতে কিলো মিটারের পর কিলো মিটার ইতিহাসের বর্ণনা আছে। হাতে-পায়ে ধরে, করজোড়ে মিনতি করে, সবিনয় প্রার্থনা জানিয়ে বলেছিলাম, ইতিহাসে যাঁদের আগ্রহ কম, তাঁরা যেন এ বইটা না কেনেন। এত আবেদন-নিবদনের পরেও কিছু বিদগ্ধ পাঠক বইটি কিনেছেন এবং পড়ে হতাশ হয়েছেন। মন্তব্য করেছেন, ইতিহাসের গাড্ডায় পড়ে হারিয়ে গেছে উপন্যাসের পাত্র-পাত্রী, ফুরিয়ে গেছে তাদের চিত্রায়নের জন্যে প্রয়োজনীয় পরিসর। এখানেই শেষ নয়, তাঁদের দ্বিতীয় অসন্তোষ হলো, দুম করে শেষ করে দেওয়া হয়েছে কাহিনি। সুদীর্ঘ ইতিহাসের খরা পেরিয়ে উপন্যাস যখন ডালপালা মেলতে শুরু করেছে, তখনই ঘ্যাচাং করে কেটে দেওয়া হয়েছে এর গোড়া। সত্যি কথা বলতে কী, মানুষের জীবনে আর উপন্যাসে খুব একটা পার্থক্য নেই। কেউ কেউ দু'বছর ধরে রোগে ভুগে, নিজে কষ্ট পেয়ে, অন্যকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে তারপর মরে। কেউ আবার হার্টফেল কিম্বা অন্য কোন কারণে দুম করে পড়ে আর মরে। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে এই পড়লো আর মরলো ধরনের মৃত্যুই বেশি পছন্দ। মরতে যখন হবেই, তখন তাড়িতাড়ি মরাই ভালো। এতে অন্যেরাও রক্ষা পেলো, আর আমিও মরে বাঁচলাম। প্রকৃতির বেলায়ও এ কথা সত্যি। হাজার কোটি বছর ধরে তিলতিল করে এ পৃথিবী গড়ে উঠলেও, রোজ কেয়ামতের দিন ধ্বংস হবে মাত্র সাতদিনে কিম্বা তারও কম সময়ে! বক্তব্য যা বলার, তা বলা হয়ে গেলে, কাহিনি টেনে লম্বা করার কী মানে? সমাপ্তির আবার ছোটো, বড়ো কী? তবুও পাঠকের কথাই শেষ কথা। কাস্টমার ইজ অলওয়েজ রাইট। জনতা জনার্দন। তাঁরা যেভাবে চান, সেভাবেই লিখতে হবে। তাঁদের কথা মাথায় রেখে, এ বইয়ে ইতিহাসের বর্ণনা পুরোপুরি বাদ দিয়েছি। সেই সাথে প্রলম্বিত করেছি সমাপ্তি। সত্যি কথা বলতে কী, উপন্যাসের একেবারে মাঝখান থেকেই শুরু হয়েছে ওটা। গড়িয়েছে পাতার পর পাতা। ভয়ে ভয়ে আছি। ট্র্যান্স সাইবেরিয়ান রেল লাইনের মতো এত লম্বা সমাপ্তি পড়তে গিয়ে পাঠকেরা আবার ফেঁসে না যান! ছোটো করলেও বিপদ, বড়ো করলেও খতরা। এ যেন— এগুলেও নির্বংশের ব্যাটা, পেছালেও নির্বংশের বেটা! আমার লেখালেখির একটাই উদ্দেশ্য: পাঠকের বিনোদন। ভারী ভারী শব্দে গভীর দার্শনিক তত্ত্বের বহিঃপ্রকাশ আমাকে দিয়ে হবে না। ওসবের জন্যে হরিশংকর জলদাস কিম্বা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসেরা আছেন। এঁরা যদি ইগল হন, তো আমি চামচিকে। এ কথা বলার পেছনে একটি কারণ আছে। কেউ কেউ এমনটা মনে করেন, ইতিহাসে আমার ছিটেফোঁটা জ্ঞান যা আছে, সেইটে বোঝানোর জন্যে আমার একটা সচেতন প্রচেষ্টা থাকে। বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, জ্ঞান জাহির করার মেলা জায়গা আছে। ক্লাসরুম, সেমিনার, কনফারেন্স, জার্নাল — স্থানের অভাব নেই। প্রজ্ঞার প্রদর্শনী করে পাঠককে উৎপীড়ন করা এক অমাজনীয় অপরাধ। এ কাজে সজ্ঞানে সম্পৃক্ত হবো, এইটে ভাবলে বলবো, আমি সুবিচার পেলাম না। প্রকৃত ঘটনার অতি ক্ষুদ্র অংশই আমি লেখার চেষ্টা করি। কাহিনির প্রয়োজনে যেটুকু দরকার, শুধু সেটুকুই— তা-ও হাজার বার চিন্তা করে তারপর। এ উপন্যাস লেখার পেছনে বিবলিওফাইলের ফুয়াদ, সাব্বির ও তৌফির হাসান উর রাকিবের অনুপ্রেরণা কারেন্টের মতো কাজ করেছে। এদের চাপ-ই লেখার টেবিলে জোর করে বসিয়ে রাখে আমাকে। এই ছেলেগুলো না থাকলে, রুবেল কান্তি নাথে'র কথাই সত্যি হতো: “দাদা, আপনার মতো অলস লোক এ দেশে নেই!” ড. মুহম্মদ আলমগীর তৈমূর পরিচালক আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট ৩১১৪ ২ অগাস্ট ২০২১

শ্বাপদ সনে গ্রাফিক নভেল REVIEW
"শ্বাপদ সনে" নাবিল মুহতাসিমের লেখা একটি সাড়াজাগানো হরর থ্রিলার। প্রকাশের পরেই এই বইটি পাঠকদের কাছে ব্যাপক সারা ফেলে দ্যায়। এই বইটির ওপর একটি গ্রাফিক নভেল গত বছর বেরিয়েছে। সমস্ত ছবি এঁকেছেন অ্যান্ড্রয়েড অনীক। কিন্তু খুবই দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি এই গ্রাফিক নভেলের ছবির মান মোটেই ভালো নয়। কিছু কিছু জায়গায় ছবি মোটামুটি ভালো কিন্তু সার্বিকভাবে ছবির গুণমান মোটেই পদের নয়। তবে নাবিল মুহতাসিমের অসাধারণ স্ক্রিপ্ট পাঠকদের শেষ পাতা পর্যন্ত আটকে রাখে। গল্পের নায়ক জামশেদ একজন বাংলাদেশের শ্যুটার। জামশেদ একটি আন্তর্জাতিক শ্যুটিং প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে। এরপরের ঘটনার শুরু হয় প্রায় বছর দশেক বাদে। জামশেদ ওনার শিল্পপতি বাবার অবর্তমানে ব্যাবসার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু ঘটনাচক্রে একটি খুনের দায় এড়াতে এক প্যারানর্মাল ইনভেস্টিগেটর সাংবাদিক বন্ধুর সঙ্গে ঢাকার থেকে অনেক দূরে এক প্রত্যন্ত গ্রামে গা ঢাকা দিতে বাধ্য হয়। এদিকে ওই গ্রামে কয়েক মাস যাবৎ ঘটে চলেছে একের পর এক দুর্ঘটনা। একের পর এক গ্রামবাসী খুন হচ্ছে অজানা কোন কিছুর হাতে। জামশেদের প্যারানর্মাল ইনভেস্টিগেটর সাংবাদিক বন্ধুর মতে, এটা সেই কিংবদন্তি শ্বাপদ যা গ্রামের পাশের রহস্যময় জঙ্গলে কয়েকশ বছর ধরে বাস করছে। শ্বাপদের শেষ আক্রমণ গুলো ঘটেছিল ১৯৭১ এর বাংলাদেশ স্বাধীন হবার সময়ে। পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগে এত বছর পরে আবার কেন গ্রামবাসীদের হত্যা শুরু হল। রহস্যময় জঙ্গলের এক পুরোনো মন্দিরে জামশেদ কিসের অস্তিত্ব অনুভব করে। কে আছে এই ঘটনাগুলি ঘটার পেছনে? এই রহস্যের উদ্ঘাটন করতে হলে পাঠককে ডুব দিতে হবে কোনমতে প্রাণ হাতে নিয়ে ফেরা একজনের অবিশ্বাস্য জবানবন্দীর গভীরে। জামশেদ কি পারবে এই ঘটনাগুলির সমাধান করতে? পাঠক একবার পড়তে শুরু করলে ছাড়তে পারবেন না।

রিভিউটি লিখেছেনঃ Priyabrata Ray

Post a Comment

0 Comments