সুন্দরবনে সাত বৎসর - বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় Sundarbane Sat Batsar by Bibhutibhushan Bandyopadhyay

সুন্দরবনে সাত বৎসর - বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় Sundarbane Sat Batsar by Bibhutibhushan Bandyopadhyay

বই - সুন্দরবনে সাত বৎসর 
লেখক - বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়

(ভূমিকা)
আলোচ্য বিষয় হলো এক কালজয়ী সাহিত্যিকের রচনা পড়ে পাঠ প্রতিক্রিয়া জানানো! প্রসঙ্গত বলি পাঠ প্রতিক্রিয়াটি হলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত "সুন্দরবনে সাত বছর নিয়ে। এই প্রথম কোনো কিশোর সাহিত্য নিয়ে পাঠ-প্রতিক্রিয়া লিখছি। নাহ্ কোন ভুলত্রুটি ধরার মত খৃষ্টতা দেখাতে পারব না, আসলে প্রিয় লেখক এর লেখা বোধহয় সোজা মননে প্রবেশ করে ছড়িয়ে যায় মস্তিষ্কের কোনাচে আছে আর তার রেশ থেকে যায় আজীবন, রক্তপ্রবাহের মতো মিশে থাকে অন্তরতন্ত্রীর অলিন্দে।]
(কাহিনী অংশ)
তেরো বছরের একটি বালক নীলু জেদপূর্বক নিজের দাদামশায়ের সাথে গঙ্গাসাগর মেলায় যায়। সেখান থেকে আরাকান দস্যুদের দ্বারা
বজরাসহ অপহৃত হয়ে তাদের বাসস্থান সুন্দরবনে আসে। সমবয়সী মগ বালক মংউন তার সর্বক্ষণের সাথী হয়।
ক্রমশঃ ভয়সংকুল, পদে পদে বিপদবহ স্থান সুন্দরবন এর সাথে পরিচিতি ঘটে নীলুর। শহরে বিলাসযাপন ছেড়ে ক্রমে বন্য জীবনে অভ্যস্ত হয় সে। যদিও বাড়িতে যাওয়ার জন্য একটিবার নিজের
গর্ভধারিনী ছোঁয়া পাওয়ার জন্য তার অন্তরের আকুলতা চরমভাবে প্রতিমুহূর্তে তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। ওদিকে মনু নীলুকে আপন ভাইয়ের মত ভালবাসে নিজের বাবাকে বারংবার অনুরোধ এর মাধ্যমে নীলুকে বিক্রি করে দেয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। প্রতিনিয়ত নীলুর পরিচয় হয় সুন্দর বনের রাজা বাঘ ছাড়াও জলের বাঘ অর্থাৎ হাতার, কুমির, হরিণ, গন্ডার, আজগর ইত্যাদি হিংস্র পশুদের সাথে এতদিন যাদের বইয়ের পাতায় পড়েছিল তারা যেন ভাষর হয়ে নীলুর জীবনযাপনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে পড়ে।
বনবিবির টাকে গ্রাম্য মানুষদের পূজা,আজন্মলালিত সংস্কার, বনবিবির প্রতি ভক্তি বিশ্বাস নীলুকে আকৃষ্ট করে। সেখানে স্নেহময় এক নারীর পরশ নতুন করে নীলুকে তার মায়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। বারংবার মনুর দ্বারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসাতে নীলুও মনুকে একসময় নিজের ভাই হিসেবে ভেবে নিতে থাকে। নীলুর মনে আর কোন দ্বিধা থাকে না। মগের ট্যাঁক নামক স্থানের নৈসর্গিক শোভায় মুগ্ধ নীলু বারংবার সেখানে যেতে চায় এতদিন নিবারণ ও মনু তার সঙ্গী হয়ে তাকে একা না ছাড়লেও একবার বনদপ্তর এর লোক এসে পড়লে নিলু তাদেরকে নিজের অপহৃত অবস্থার কথা না জানিয়ে স্বেচ্ছায় থাকার কথা বললে সকলের আস্থা অর্জন করে। একদিন একটি নৌকায় ন একাই রওনা দেয় মগের ট্যাঁকের উদ্দেশ্যে তারপর দিকভ্রান্ত নীলু অনাহারে,তৃষ্ণায় মৃত্যুর মুখে এগিয়ে গেলে ঝিনুক সংগ্রহকারী দের দ্বারা প্রাপ্ত হয়। তাদের সাথে আবার শুরু করে তার নতুন জীবন। চাঁদডুবির চরের ধ্বংসাবশেষে প্রাচীন সভ্যতা কিংবা ইদ্রিস খালির চরে অশরীরীদের বাস নতুন নতুন রহস্যের সঞ্চার করে নীলুর মনে।
কাহিমকালীর চরে এক বয়স্ক মানুষ নীলুর মন জিতে নেয় নিরাসক্ত মানুষটিকে নীলু ভালোবেসে ফেলে। লাখ লাখ টাকার মুক্তো ঘরের কোনায় অবহেলায় ফেলে যে মানুষ দিনের পর দিন গুজরান করছে এমন নির্লোভ মানুষ দেখে নীলুর জীবন সম্পর্কে নতুন উপলব্ধি হয়। অবশেষে নীলু সাত বছর পর ফিরে আসে আপন গৃহে সেখানে কি নীলু তার অভাগী গর্ভধারণীকে দেখতে পেল? তার দাদামশাই কি বেঁচে ছিল? তারপর নীলু কি করল? সে কি আবার ফিরে গেল সেই সুন্দরবনের দাদুর কাছে? শেষের টুকু আর বললাম না, যে সকল পাঠক বইটি পড়ে নি তারা একবারটি আমার পাঠ প্রতিক্রিয়ার পর বইটি পড়ক এ কামনা করি তবেই আমার আমার পাঠ প্রতিক্রিয়ার সার্থকতা।
(আমার মত)
ছোটদের বই মানেই শুধুমাত্র ছোটদের জন্য বিবেচ্য হবে এমন কোন কথা নেই বড়রাও সমানভাবে রোমাঞ্চিত হবে বইখানি পড়লে। এখানে রহস্য, রোমাঞ্চ অ্যাডভেঞ্চারের পাশাপাশি জীবনবোধের সামঞ্জস্যতা নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে।
(অন্য লেখকের মত) 
তাইতো রাজ শেখর বসু এই বইখানি প্রসঙ্গে বলেছেন- সুন্দরবনের স্থান নিসর্গ, নদী, সমুদ্র, নানারকম গাছপালা, বন্য জন্তু অ্যাডভেঞ্চার সম্বলিত একটি বই রূপকথা বা ডিটেকটিভ বই পড়ার থেকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করবে ছেলেমেয়েদের।

রিভিউটি লিখেছেনঃ Rakhi Bhaumk

Post a Comment

0 Comments