উপন্যাস বিকেলের মৃত্যু
লেখক- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
Hero worship কাকে বলে? রোম্যান্টিক গল্পের সঙ্গে অ্যাকশন আর মাফিয়া মিশে গেলেই কি সেটা আমাদের চিরচেনা action genre এর মধ্যে পড়ে? যেখানে গল্পের নায়ক সুপারম্যান, অতি বাস্তব বা প্রায় অবাস্তব পটভূমিকায় নায়িকাকে উদ্ধার করে আনে রূপকথার
রাজপুত্রের মত?
পরিচিত ছক অনুযায়ী দেখা গেলে hero worship অনেকক্ষেত্রে গল্পের নায়কেরই জয়গান করে। কিন্তু চেনা পটভূমিকায় রচনা হওয়া সত্ত্বেও এই উপন্যাস যে একঘেয়ে সহজেই অনুমেয় হয়ে ওঠেনি, তার কারণ অবশ্যই শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জাদু কলম। আমাদের ডাল, ড্যাব, আনড্রামাটিক জীবনেও তো ঘটে যায় কত মেলোড্রামা। ঝড় শেষে বেরিয়ে আসা মানুষটা আর কখনোই আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে
না।
পারেনি লীনাও। গল্পের শুরু এক মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে, বাবা-মা- দাদা, চেনা পরিচিত সব সম্পর্কের প্রতি তিতিবিরক্ত লীনা কাজ নেয় এক গোমড়ামুখো বসের সেক্রেটারি হিসেবে। লীনা সুন্দরী, শিক্ষিত, বিত্তবান, কল্পনাপরায়ণ। তার প্রেমিক দোলন তাকে ভয় পায়, ইনসিকিউরিটি কমপ্লেক্সে ভোগে, তবুও লীনা নিজেকে প্রতাপশালী হিসেবে দেখতে ভালোইবাসে। বাবা মার মধ্যে ব্যক্তিত্বের সংঘাত দেখে সে বিরক্ত। দোলনের সঙ্গে তার ব্যক্তিত্বের সংঘর্ষ কখনোই হবে না, এটাই তার সন্তুষ্টি।
অন্যদিকে সম্পূর্ণ অন্য মেরুর চরিত্র লীনার বস ববি রয়। ইলেক্ট্রনিক্স, উইজার্ড ববি রয় তাঁর নিজের কাজের দুনিয়ার বাইরের জগৎ সম্পর্কে নেহাতই অজ্ঞ। কিন্তু প্রচন্ডরকম বাস্তববাদী আর নারীচরিত্র সম্পর্কে নেহাতই উদাসীন এই মানুষটা হঠাৎই জড়িয়ে পড়েন আতঙ্কবাদীদের জালে। নিজেকে বাঁচাতে, স্বপ্নের প্রজেক্টকে বাঁচাতে ববি রয় বাধ্য হন লীনাকে এই আগুনখেলায় সামিল করতে। কিন্তু তারপর? বর্ষীয়ান বিজ্ঞানী রবীশের স্বপ্নের প্রকল্প নীল মঞ্জিল কি আদৌ সুরক্ষিত থাকবে? কতদূর ছড়ানো এই আন্তর্জাতিক চক্রান্তের জাল? কীই বা হবে লীনা? এই সমস্ত কিছু নিয়েই বিকেলের মৃত্যু”। বেশ টানটান, মেদহীন অথচ তীক্ষ্ন লেখনী, বাস্তববাদী পটভূমিকায় সার্থক চরিত্রায়ণ। আর শেষের টুইস্টটা বেশ উপাদেয়, মিসেস ভট্টাচার্য থেকে লীনা হয়ে ওঠার যাত্রাপথ যথার্থই উপভোগ্য।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Sharbari
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।