পার্পেচুয়াল আতঙ্ক
মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
প্রকাশনীঃ বাতিঘর প্রকাশনী
প্রচ্ছদঃ বাপ্পী খান
প্রথম প্রকাশঃ অমর একুশে বইমেলা ২০২৩
পৃষ্ঠা : ২২৫
মুদ্রিত মূল্যঃ ৩৬০৳
ব্যাক্তিগত রেটিং : ৯/১০
লেখকের বড্ড প্রেমে পড়ে গেলাম আবার। আবার কেন? কারণ ঐ যে 'লোলার জগৎ'। লোলার জগৎ পড়ার পর এবছর বই কেনার তালিকায় সবার আগে স্থান পেয়েছিল এই 'পার্পেচুয়াল আতঙ্ক'। প্রচুর কল্পবিজ্ঞান পড়া হলেও অভিনব প্লট খুব কমই থাকে তার মধ্যে। কিন্তু সাইফূল ইসলাম ভাই, রীতিমত কাপিয়ে দিয়েছেন তার এই অভিনব, মৌলিক মনোমুগ্ধকর প্লট স্থাপন করে। অভিনব হলেও মজার ব্যপার তিনি কিন্তু প্রচলিত বিজ্ঞানের ব্যাত্বয় ঘটাননি এখানে। আর বিজ্ঞানটাকে তিনি এমনভাবে উপস্থাপন করেন যেন এটা ডালভাত। বিজ্ঞান না জানলেও তরতরিয়ে পড়ে ফেলতে পারবেন আপনি।
এবার আসি গল্প নিয়ে। বইটিতে গল্পের দুটো টাইমলাইন আছে। যেটা এক পরিচ্ছেদ পরপর সমান তালে এগিয়ে গেছে। চলুন সেই দুটো টাইমলাইনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।
আকাশছোঁয়া এক দেয়ালের ভেতর শত শত বছর ধরে বন্দী হয়ে আছে একটি জনপদ। এই দেয়ালটিকে তারা মনে করে তাদের ঈশ্বর। তারা মনে করে এই দেওয়ালের অপর পাশে আছে দৈত্য, দানো। তারা বিশ্বাস করে এই দেওয়াল-ঈশ্বর তাদেরকে নিরাপদ রাখে এবং রাখছে। তাই দেওয়ালকে রীতিমত পুজো করে তারা। দেওয়ালের ওপাশে যাওয়ার চিন্তা মানেই ঈশ্বরের বিরোধীতা করা, শয়তানকেই অনুসরণ করা। পুরোহিতরাও তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে প্রটেক্ট করে যাতে এই জনগোষ্ঠীর কেউ ওই দেওয়াল পার হয়ে যেতে না পারে। কিন্তু এক তরুণ ছেলে 'রুমি', সে পুরোহিতদের এসব গালগপ্প একদম বিশ্বাস করে না। সে জানতে চায় দেওয়ালের ওপাশে কি আছে! সে মনে করে তাদেরকে একটা দেওয়ালের ভেতর বন্দী করে রাখা হয়েছে। এবং এটা নিশ্চয়ই কারো একজনের পূর্বপরিকল্পিত।
অপর টাইমলাইনে পাবেন আমাদের মহান বিজ্ঞানী প্যানহাল কোহেন কে। তিনি তার যুগের চেয়েও এগিয়ে থাকা জ্ঞান আর বিজ্ঞানশক্তি দিয়ে বানিয়ে ফেলেছেন আজীবনের আকাঙ্ক্ষিত 'পার্পেচুয়াল ইঞ্জিন'। যা দিয়ে আমরা পেতে পারি জ্বালানিবিহীন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ শক্তি। যার মাধ্যমে নিমেষেই সমাধান হয়ে যায় সভ্যতার জটিল সব সমস্যার। পরিবেশ দূষণ থাকবে না, দৈহিক পরিশ্রম কমে আসবে অনেকাংশে, অসুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে না ফলে মানুষ সৃজনশীল সব কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন। কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যায় সবার মনে। তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রানুসারে শক্তির বিনাস কিংবা সৃষ্টি নেই, শক্তি কেবল একরূপ থেকে আরেক রূপ ধারণ করে মাত্র। তাহলে কিভাবে তিনি এটি সম্ভব করলেন? অথচ তিনি কিন্তু থার্মোডাইনামিক্সের সূত্রের ব্যত্যয় না ঘটিয়েই সভ্যতার এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি করে ফেলেছেন। এবং তৈরির কৌশল রেখেছেন সবার অগোচরে। কিন্তু তিনি এর সাইড এফেক্ট সম্পর্কেও অবগত ছিলেন।
তার মতে ঠিক চার পাচশ বছর পর এই ইঞ্জিনগুলো ধ্বংস করে দিতে হবে। নাহলে পৃথিবী পতিত হবে নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে। আর এই ইঞ্জিনগুলো ধ্বংস করার সম্পূর্ণ নীল নকশাও তিনি তৈরি করেন। কেননা সাধারণ কোন কৌশলে এটা ধ্বংস করা যাবে না। ধ্বংস করলে চেইন রিয়াকশনের মাধ্যমে পৃথিবী সেই ধ্বংসের মূখেই পতিত হবে। আর এজন্য ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ তিনজন ব্যক্তির জন্যও তিনটা গোপন বার্তাও রেখে যান।
তার মতে ঠিক চার পাচশ বছর পর এই ইঞ্জিনগুলো ধ্বংস করে দিতে হবে। নাহলে পৃথিবী পতিত হবে নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে। আর এই ইঞ্জিনগুলো ধ্বংস করার সম্পূর্ণ নীল নকশাও তিনি তৈরি করেন। কেননা সাধারণ কোন কৌশলে এটা ধ্বংস করা যাবে না। ধ্বংস করলে চেইন রিয়াকশনের মাধ্যমে পৃথিবী সেই ধ্বংসের মূখেই পতিত হবে। আর এজন্য ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ তিনজন ব্যক্তির জন্যও তিনটা গোপন বার্তাও রেখে যান।
এটা মাত্র গল্পের শুরু। এরপর একদিকে চলতে থাকে ডানপিটে বিজ্ঞানমনষ্ক রুমির গোপন পরিকল্পনা, কিভাবে দেওয়াল টপকানো যায়। অপরদিকে দেখতে পাওয়া যায় পার্পেচুয়াল ইঞ্জিনের সুফল ও কুফল দিকগুলো। ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে একের পর এক রহস্য। আসতে থাকে নতুন নতুন সব চরিত্র। বিশেষ করে শ্যাপা আর বহ্নি দুই বিপরীত মেরুর দুইজন চরিত্রকেও ভালোবেসে ফেলতে পারেন। সব মিলিয়ে আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে বইটা। বই সম্পর্কে আরো গভীরে যাওয়া মানেই স্পয়লার দেওয়া। সেটা আমার একদম পছন্দ না।
এখন প্রশ্ন বইটির কমতি কি ছিল? আমার কাছে সেটার পরিমাণ খুব কম। শেষ অংশটা রোলারকোস্টারের মতো মারাত্মক দ্রুত এগিয়েছে। আরেকটু রহে সহে হলে বেশি উপভোগ্য হতো। এই তাড়াহুড়োইটুকুই যা কমতি। টাইমলাইনের সময়কালটা উল্লেখ করলে পাঠকদের একটু বুঝতে সুবিধা হতো। তবে আমার কাছে এটা খানিকটা টুইস্টের মতোই লেগেছে। আর দু একটা বানান ভুল আমি কখনোই ধর্তব্যের মধ্যেই নি না। কেননা ওটা সম্পাদনার অংশ। গল্পে এফেক্ট পড়ে না।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Aisu Rahman
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।