The Last Queen
Chitra Banerjee Divakaruni
HarperCollins Publishers India
সাম্প্রতিক ইংরাজি সাহিত্যে চিত্রা ব্যানার্জী দিবাকারুণি পরিচিত এবং সমাদৃত লেখিকা। ইতিহাস আধারিত উপন্যাস রচনা, বিশেষ করে ঐতিহাসিক চরিত্রের জবানিতে কাহিনী নির্মাণ বড়ো সহজ কাজ নয়। চিত্রা ব্যানার্জী এই উপন্যাসে সেই কাজটি করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে।
নাতিদীর্ঘ উপন্যাসটি রচিত হয়েছে জিন্দন কৌরের আত্মকথনের ভঙ্গিমায়। জিন্দন কৌর-পঞ্জাবকেশরী রণজিৎ সিং-এর কনিষ্ঠা পত্নী, রণজিৎ সিং এর কনিষ্ঠতম বৈধ সন্তান-মহারাজা দলীপ সিংয়ের জননী। সামান্য কুকুর প্রতিপালকের কিশোরী কন্যা হয়ে ওঠেন পঞ্জাবকেশরীর যোগ্য সহধর্মিনী, স্বামীর মৃত্যুর পর যিনি সন্তানের অধিকার সুরক্ষিত করতে, আত্মমর্যাদা অটুট রাখতে চোখে চোখ রেখে লড়ে যান প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রতিপক্ষ কখনো রাজপরিবার, রাজদরবারের প্রভাবশালীজন, কখনো বা ধুরন্ধর কূটকৌশলী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, অথবা ব্রিটিশ সরকার। অসম অবিরাম সংগ্রামে জিন্দন ভাগ্যের পরিহাসে হারাতে থাকেন একের পর এক শুভাকাঙ্ক্ষীকে, দীর্ণ হন কাছের মানুষের বিশ্বাসঘাতকতায়, এবং আবেগের বশে, কখনো বাধ্য হয়ে নিয়ে ফেলেন কিছু ভুল সিদ্ধান্ত, যা তছনছ করে দেয় শিখদের গর্ব খালসা বাহিনীকে, শেষ করে দেয় স্বাধীন পঞ্জাবের অস্তিত্ব। যে অবগুন্ঠিতা নারী পুরুষবেষ্টিত দরবারে একক ব্যক্তিত্বে সম্মানাই ছিলেন, যাকে খালসা বাহিনী মা বলে জানত, সেই যোদ্ধা অশ্বারোহী নারীকে "পরোপকারী,আধুনিকতার ধ্বজাধারী ব্রিটিশ সরকার Messalina of Punjab বলতে দু'বার ভাবে নি।
এতদসত্ত্বেও, নির্বাসিত জিন্দন, পলাতক জিন্দন, হাতবল, হাতস্বাস্থ্য জিন্দন ব্রিটিশদের কাছে ত্রাস।
রাজপরিবারের অন্দরমহলের কূটনীতি, সার্থক রানির গড়ে ওঠা, রক্তমাংসের মানবীর সর্বস্ব পণ করে লড়ে যাওয়া, ঔপনিবেশিক চিন্তার মুখোশ উন্মোচনের এই কাহিনী, এক প্রেমকাহিনীও বটে। শুধু রণজিৎ সিং ও তার সহধর্মিনীর প্রেম নয়, রাজা আর সাধারণ এক মেয়ের প্রেম নয়, এই প্রেম জন্মভূমি ও তার প্রতি দায়বদ্ধ মানুষের।
যেহেতু ফিকশন, তাই সকল ঘটনাকে সর্বাংশে সত্যি ভাবার কারণ নেই। তবে লেখিকা প্রধানত তথ্যনিষ্ঠ থেকেছেন। দ্বিতীয়ত, যেহেতু, জিন্দন মুখ্য চরিত্র, তাই তার বয়ান থাকা কাঙ্খিত ছিলই, কিন্তু বহু বর্ণময় চরিত্রের সমাবেশ যেখানে ঘটেছে, এমন উপন্যাসে, জিন্দন ঘনিষ্ঠ আরো কয়েকজনের জবানি থাকলে হয়তো আরো বর্ণময় হয়ে উঠত সেইসময়। কারণ, ঐতিহাসিক উপন্যাসে সমকাল নিজেই অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, ক্ষেত্রবিশেষে কাহিনীর নিয়ন্ত্রক। মাত্র একজনের বয়ানে সমকাল যথাযথভাবে উপস্থাপিত হতে ঈষৎ বাধা পেয়েছে উপন্যাসে বলে মনে হল।
আজ আর জানার উপায় নেই সত্যিই জিন্দন তার ব্যক্তিজীবনে চিন্তা ভাবনায় কতখানি অতিক্রম করতে পেরেছিলেন সে যুগের সীমাবদ্ধতাকে, তার কর্মকান্ড থেকে আমরা অনুমান করতে পারি মাত্র। কিছুক্ষেত্রে উপন্যাসে উনিশ শতকের জিন্দনের চিন্তাভাবনা একুশ শতকের আধুনিক যুক্তিবাদী শিক্ষিতা নারীর মনোজগতের প্রতিফলন যেন। উনিশ শতকের পটভূমিতে এ ধরণের বাচনভঙ্গি বা যুক্তিবিস্তার আমার সামান্য চোখে লেগেছে।
কিন্তু পড়তে শুরু করলে আর থামা যায় না, এমনই গুণ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের এবং লেখিকার কলমের।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Tridhara
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।