জ্যাঠামশায়ের তালা - উল্লাস মল্লিক Jethamoshoyer Tala by Ullas Mallick

জ্যাঠামশায়ের তালা - উল্লাস মল্লিক Jethamoshoyer Tala by Ullas Mallick

জ্যাঠামশায়ের তালা
উল্লাস মল্লিক
 

উল্লাস মল্লিকের লেখা মানেই সেখানে একটু হালকা মজার ছোঁয়া থাকে। এ গল্পটিও তার ব্যতিক্রম নয়। ছোটদের পুজোর ছুটির মুডের সঙ্গে এ গল্প চমৎকার খাপ খায়। মফস্বলের একটি পরিবার বিয়ে বাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে যাবে। সে সময় পাড়ায় খুব চুরি হচ্ছে। অতএব বাড়ি ফাঁকা করে বিয়ে বাড়ি যাওয়া যথেষ্ট ঝুঁকির কাজ। কিন্তু বিয়ে বাড়ির নেমন্তন্ন ছাড়তে ছোট থেকে বড় কেউই রাজি নয়। অতএব আগের দিন মেলায় গিয়ে বাড়ির কর্তা জ্যাঠামশাই একটি হাতি তালা কিনে আনলেন। যে তালা নাকি হাতিতে ভাঙতে পারে না। যদিও এর প্রমাণ কোনো খদ্দের দাবি করলে তালাওয়ালা গম্ভীরভাবে তাকে দুটো হাতি জোগাড় করে আনতে বলে। অত এব বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। অতঃপর দরজায় সেই তালা দিয়ে সপরিবারে বিয়ে বাড়ি যাওয়া। কিন্তু ফিরে আসার পথে আবিষ্কার হয় জ্যাঠামশায়ের পকেটে চাবি নেই। মাঝরাতে বাড়ির মেয়েদের বন্ধ ঘরের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে পরিবারের পুরুষেরা একের পর এক পথের মধ্যে চাবি খুঁজতে বার হন এবং রহস্যময়ভাবে তাঁদের আর ফেরার নাম থাকে না। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় চাবি খুঁজতে বিয়ে বাড়ি অব্দি পথ গিয়ে প্রত্যেকেই নিমন্ত্রণ কর্তার ভ্রান্তিতে আর একবার পংক্তিভোজে বসে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আবিষ্কার হয়েছে দরজার তালাতেই চাবি আটকে রয়েছে। ততক্ষণে অবশ্য অনেকের দুবার নেমন্তন্ন খাওয়া হয়ে গেছে।
মূল ঘটনা যতটা মজাদার তার সঙ্গে তাল রেখে ছোট ছোট প্রসঙ্গ গুলি কিছু কম আকর্ষণীয় নয়। আইসক্রিমপ্রিয় ছোট মেয়েটির এক ঘন্টা ধরে একটু একটু করে আইসক্রিম খাওয়া দেখে জ্যাঠামশাস্ত্রের মন্তব্য, স্লো সাইকেল রেসে বাবলি নিঃসন্দেহে চ্যাম্পিয়ন হবে; চোর ঠেকাতে বাড়িতে কুকুর কিনে আনলে পরের দিন সেই কুকুরটির চুরি হয়ে যাওয়া; নেমন্তন্ন খাওয়ার জন্য বাড়ির বড়দেরও ছোটদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছেলেমানুষি আকুলতা; পথের মধ্যে চাবি খুঁজতে গিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া নানা বাতিল জিনিস ভরা পলিব্যাগকে বিয়ের উপহার ভেবে বিনীতভাবে কন্যা কর্তার গ্রহণ করা; বাড়ির ছেলেদের দ্বিতীয়বার নিমন্ত্রণ খাওয়ার ঘটনা শুনে তখনো হাতের আইসক্রিম শেষ না হওয়া বাবলির দ্বিতীয়বার চাবি খুঁজতে যাওয়ার শখ; এমন ছোট ছোট মজার বিষয়গুলিও অতিরিক্ত প্রাপ্তি।
সমস্ত গল্পের মধ্যে মধ্যবিত্ত জীবনের একটি সরল খোলামেলা আবহাওয়া পাওয়া যায়। এ সেই মঞ্চষলের মধ্যবিত্ত যারা এখনও সপরিবারে বাঁচে। পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক যেখানে আজও অটুট। কৃত্রিম মাপা জীবনের চালচলনের বদলে খোলামেলা সহজ জীবনবোধের মধ্যে জীবনের উচ্চতা এবং আন্তরিকতা যেখানে হারিয়ে না গিয়ে যত্নের সঙ্গে সংরক্ষিত। অভ্যাসের মাপা জীবনের বাইরে গিয়ে গল্পটি এই সরল খোলামেলা জীবনের সামনে পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেয়।

রিভিউটি লিখেছেনঃ NIRMALYA MANDAL 

Post a Comment

0 Comments