কম্পাস
স্মরণজিৎ চক্রবর্তী
স্মরণজিৎ বাবুর কম্পাস পড়লাম; পড়ে একটা অদ্ভুত বিষণ্ণতা মনের মধ্যে ছাড়িয়ে গেল অনেকটা ট্রেনে জানালার ধারে বসলে বাইরের তীব্র হাওয়ার ঝাপটা যখন মুখে এসে লাগে, তখন হাওয়ার সাথেই মিশে থাকে সূক্ষ্ম ধুলোর গুঁড়ো, ধুলো যখন চোখে এসে পড়ে, চোখ খুলে রাখা হয়ে ওঠে দুষ্কর কিন্তু হাওয়ার পরশ লাগলেই মনটা ভারী ভালো হয়ে যায়, সেরকমই কেমন অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতি, পেয়েও যেন না পাওয়ার ব্যথা আর মুখ ফুটে সবটা না বলতে পারার যন্ত্রণার মত ঘিরে ধরে, ছেয়ে রাখে অস্তিত্বের আকাশ ।
পরীক্ষা চলছিল বলে বেশ কিছুদিন বিশেষ কিছু পড়া হয়নি, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই ঝটিতি বেগে পড়ে ফেললাম বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঔরস, ডার্বি আর শ্রীজাতের শালিমারে সংঘাত আর তারপরেই স্মরণজিৎ বাবুর বেশ কয়েকটা বই নাড়াচাড়া করার পর শেষমেষ থিতু হয়েছিলাম কম্পাসে। সত্তরের দশকের উত্তাল বাংলায় নিজের পারিপার্শ্বিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দাঁড়াতে শেখা এক কলেজছাত্রের জীবন, প্রেম, পরিবার, বন্ধুবর্গ আর লেখালেখি প্রচেষ্টার গল্পের সমান্তরালে বয়ে চলে ২০১৪ সাল, পথ হারিয়ে ফেলা, জনজোয়ারে ভেসে চলা অসংখ্য যুবকের মাঝে আরেক যুবকের কাহিনী, পারিপার্শ্বিক মানুষগুলোর জিগস পাজলের মত ভেঙে পড়া জীবনের টুকরোগুলোকে যে অপরুপ মমতায় জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু জীবনের পাজল সলভ করা এতটাই দুঃসাধ্য যে, প্রতিমুহূর্তেই তা আবার ভেঙে ভেঙে পড়ে। শেষমেষ পড়ে থাকে শুধু সেই ভাঙা গড়ার খেলা, কলকাতা শহর আর অনেক উঁচুতে উত্তরের আকাশের নিঃসংগ ধ্রুবতারা। সেই ধ্রুবতারাই যেন টেনে ধরে দাঁড় করায় মানুষকে, পথের পানে ঠেলে দিয়ে পথের দেবতা সেজে বলে ওঠে, "মূর্খ বালক, পথ তো তোমার শেষ হয়নি.... কোলাহলময় ব্যস্ত শহরে, হাজার মানুষের ঠাসাঠাসিতে, প্রতিদিনের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে চূর্ণ জাহাজের পাটাতন জোয়ারের আর ভাটার টানে কেঁপে ওঠার পরেও আদীপ্ত বা জিতেন্দ্র কি শেষমেষ পারে কম্পাস আর ধ্রুবতারাকে সম্বল করে জীবনতরীতে ভেসে যাওয়ার রসদ জোগাড় করতে?
রিভিউটি লিখেছেনঃ সত্যজিত বন্দ্যোপাধ্যায়
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।