বই: চন্দ্রকলা ও চন্দন পুরুষ
লেখক: হিমাদ্রী কিশোর দাশগুপ্ত
প্রকাশনী: পত্রভারতী
লেখকের পরিচয় সম্বন্ধে কিছু বলার নেই। বর্তমান কালে অন্যতম সেরা অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীর স্রষ্ঠা। তাঁর লেখা সুদীপ্ত ও হেরমানের অ্যাডভেঞ্চার মনে রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে। এছাড়াও লিখেছেন প্রাপ্তবস্তুদের জন্য ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত কাহিনী। যার মধ্যে অন্যতম এই বইটি।
প্রধানত তিনটি গল্প রয়েছে।
প্রথম, চন্দ্রকলা ও চন্দন পুরুষ: কামসূত্র রচয়িতা বাৎস্যায়নের সাথে জৈন মহাপুরুষ পারশভনাথ র কথোপকথন। এর মাধ্যমে উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে মানুষের জীবনে অগ্রাধিকার কে পাবে কাম, ধর্ম না সত্য? যখন বাৎস্যায়ন ঠিক করেই নিয়েছিলেন তার রচিত বিখ্যাত কামসূত্রর উপসমহারে কাম কেই সর্বোচ্চ স্থান দেবেন তখন কি এমন ঘটলো যে তিনি নিজের মত পরিবর্তন করতে বাধ্য হলেন !!!
দ্বিতীয়, সম্রাট ও সেনাপতি: মোঘল সম্রাট আকবর র শেষ জীবনের কাহিনী। যেখানে তিনি একে একে সবাই কে হারিয়ে মৃত্যু পথযাত্রী। তাঁর সভা আলো করা আবুল ফজল, বীরবল, তানসেন প্রায় সকলেই চলে গিয়েছেন সে রাজ্যে যা তাঁর পক্ষে জয় করা অসম্ভব ।। রয়ে গেছেন শুধু রাজা মান সিংহ যার তলোয়ার তাঁকে দিল্লির মসনদে সব থেকে বেশি সুরক্ষা দিয়েছে।। তিনি নিজেও শুনতে পান পরপার যাত্রা। ধ্বনি। কি হবে তাঁর সাম্রাজ্যের? কে বসবে তিলতিল করে গড়ে তোলা তাঁদের বংশের সেই মসনদে কিভাবে হবে জাহাঙ্গীর পরবর্তী বাদশা??? কে উত্তর দেবে তাঁর মনের গভীর সংশয় পূর্ণ প্রশ্নের।
তৃতীয়, বারুদ সিপাহী বিদ্রোহের আগে ইংরেজু র দখল করলো মাম্রাজ প্রেসিডেন্সি র ছোট রাজ্য শিভাগঙ্গাই বিধবা রানী ভেলু বাই ছোট কন্যা কে নিয়ে আশ্রয়ে নিলেন মহীশূর নৃপতি হায়দার আলীর কাছে। অসীম দারিদ্র্য দুঃখ উপেক্ষা করে পড়ে গেলেন ইংরেজ দের বিরুদ্ধে কিন্তু নাতি স্বীকার করলেন না।। তবে এ কাহিনী তাঁর সেনা প্রধান আরো এক বীরাঙ্গনা নারী কুইলি। যে অন্যান্য নারীদের মত ঘর বাঁধতে চেয়ে পেলো যুক্ত রণাঙ্গন।। কি হলো তাদের এই অসম লড়াই ব্রিটিশ দের বিরুদ্ধে !! একজন স্ত্রী আশা আকাঙ্খা বলিদান দিয়ে রক্ষা করলেন তাঁর রানীর মান কিন্তু কিভাবে?
এসব উত্তর জানতে হলে পড়তেই হবে চন্দ্রকলা ও চন্দন পুরুষ।। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত অন্যতম সেরা কাহিনী।। পরপর তিনটি গল্পই মনে খুশির রেশ টেনে দেয়। প্রথম কাহিনী যেখানে কাম, রতিক্রিয়া প্রেম, ধর্ম, সত্য কে তুলে ধরছে সেখানে দ্বিতীয় কাহিনী আনছে সময়ের নিদারুণ পরিহাস র কাহিনী যা ভারত শাহেনশা কেও একজন অত্যন্ত নিরুপায় সাধারণ মানুষ বানিয়ে দিচ্ছে আর শেষ কাহিনী নিয়ে আসছে ব্রিটিশ আমলের রূঢ় বাস্তব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে সুখ শান্তি ঐশ্বর্যা চাওয়া পাওয়া সবার থেকে বড় আত্মসম্মান আর মাতৃভূমির প্রতি প্রেম।
তাই ইতিহাস প্রেমী রা আর সাহিত্য প্রেমীরা উভয় দের জন্যই অন্যতম সেরা বই যা পড়ে নিরাশ হবেন না।
রিভিউটি লিখেছেনঃ
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।