বৃশ্চিক বৃত্ত - সুপ্রিয় চৌধুরী Brichikbritta by Supriyo Chowdhury

বৃশ্চিক বৃত্ত - সুপ্রিয় চৌধুরী Brichikbritta by Supriyo Chowdhury

বইয়ের নাম – বৃশ্চিকচক্র 
লেখকের নাম পিয়া সরকার 
পাবলিকেশন আনাড়ি মাইন্ডস 
প্রথম প্রকাশ 1 ফেব্রুয়ারি 2022 
মূল্য 400 টাকা
পেজ 360
জনরা রহস্য উপন্যাস


নেপাল থেকে পাচার হয়ে ভারতে আসছে রাশি রাশি নাবালিকা তাদের বেশ কিছুজন হারিয়ে যাচ্ছে। না যৌনপল্লির অন্ধকারে নয়, তাদের হদিশ পাচ্ছে না কেউই৷ কোথায় আছে তারা? এই সত্য উদ্ঘাটনে গোয়েন্দা দপ্তরের দরকার পড়ে স্বেচ্ছা-অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার রুদ্রনারায়ণ চৌধুরীকে৷ এক আন্তর্জাতিক ‘হিউম্যান স্কিন ট্রাফিকিং' এর অপরাধ চক্রের শিকার এই মেয়েরা৷ কী হচ্ছে এরপর? একদা পুলিশ অফিসার রুদ্র কি খুঁজে পাবে তাঁদের? এ এক স্বল্পজ্ঞাত অথচ রোমহর্ষক আন্তর্জাতিক অপরাধ আখ্যান৷

নামটা আনকমন দেখে পড়ে ফেললাম।
কিছুটা বাড়িতে কিছুটা ট্রেনে। ঝরঝরে গল্প তরতর করে এগিয়ে চলে। ইন্সপেক্টর রুদ্রনারায়ণ ব্যানার্জী এবং তাঁর স্ত্রী হাইমাই কর্পোরেট শ্রীপর্না মিত্র। চরম বিলাসবহুল ও হাইটেক জীবন থেকে স্বেচ্ছায় ঝপ করে গিয়ে পড়লেন সুন্দরবনের অজ্ঞাত বাদাবনে। গরিবগুর্বো বউমেয়েদের নিয়ে সেলফ হেল্প খুলতে ব্যাকড্রপে অবশ্য প্রথম সন্তান শিশু মিমোর আকাল প্রয়াণ ছিলো। প্রথমে একটু অতিনাটুকে মনে হয়েছিল। পরে ভাবলাম বাস্তবেও এরম উদাহরণ গাদাগাদা আছে। যাইহোক একদিন সোঁদরবনের নদী পাড়ে লাগলো নাও। আকুল কণ্ঠে রুদ্রের সাহায্যে চাইলেন।
এককালের বিশ্বস্ত সহযোগী মজিদ সাহেব? কী কেস? না, নেপাল থেকে ভারতে পাচার হওয়া বেশ কিছু সুন্দরী কিশোরী স্রেফ গায়েব হয়ে যাচ্ছে। এরপর বহু বাচ্চার সম্ভাব্য মর্মান্তিক এবং অশুভ কোনো পরিণতির কথা বিচার করে রিটায়ারমেন্ট ভেঙে মাঠে নামলেন বজ্রকঠিন অথচ মনে কুসুমকোমল দাপুটে এক্স পুলিশ অফিসার রুদ্র। অভিজ্ঞ আব্দুল মজিদ, ইন্টেলিজেন্ট ও ডেডলি সন্তোষী, কালাপাহাড় সুনীল আর মজারু ড্রাইভার তারক মিলে পুনর্গঠিত এফিসিয়েন্ট টিমকে নিয়ে ভেদ করলেন সেই ভয়াবহ রহস্যজাল এবং উদ্ধার করলেন বহু কিশোরীকে।
সুপ্রিয় চৌধুরীর লেখার স্টাইল মুগ্ধ করেছে আমাকে। অযথা ইনফো ডাম্পিং করেননি। অথচ যেখানে প্রয়োজন পড়েছে কলমের আঁচড়ে | বুঝিয়েছেন তিনি গভীরে যেতে চান। সবচেয়ে অদ্ভূত লেখেছে বর্তমান বাংলা থ্রিলারের ট্রেন্ড ভেঙে অহেতুক গালাগাল রগরগে যৌনতার বদলে তিনি ব্যবহার করেছেন সংযত ডায়ালগ রোম্যাস্টিক মেদুরতা। স্টোরিলাইনের দু-একটা ইমপ্রোবাবিলিটি আমি জাস্ট আনদেখা করেছি ভালো গল্পবলা শোনার লোভে।

রিভিউটি লিখেছেনঃ Arunava Malty অরুণাভ মাইতি

review
যেহেতু এটা একটি রহস্য উপন্যাস। (আমার মতে লাস্ট 10 বছরে ( শেষ মৃত পাখি) পর এটা সেকেন্ড বেস্ট সেহেতু প্লট এর টুইস্ট আর এর রহস্য বিশদে আলোচনা করবো না।
শুধু বলতে পারি উপন্যাস টা অনেক টা পেঁয়াজের মতো।
তার প্রতিটি অধ্যায় এর মধ্যে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। আপনি একটি করে অধ্যায় পড়বেন। আর একটি করে পেঁয়াজের আস্তরণ খুলবেন। শেষ অব্দি রুদ্ধশ্বাস আর টুইস্ট এর পর টুইস্ট আপনাকে প্রতি মুহূর্তে কাহিনীর সঙ্গে জড়িয়ে রাখবে। শেষ অব্দি গিয়ে আপনি যখন রহস্য উদ্ধার করবেন আপনি সেই মুহূর্তে পেঁয়াজের শেষ খোলস অব্দি পৌঁছে যাবেন। আর ভাববেন এতক্ষণ ধরে টানা পড়ে আপনার হাত পা ঘাড় ব্যাথা ওহহ সর্বশেষ চোখ ব্যাথা করলেও আপনি যে এতো কষ্ট করে এইহ উপন্যাস টি পড়েছেন। আপনার সব পরিশ্রম সার্থক আর প্রান্টি দিচ্ছি আপনি বইটা শেষ করে আপনি আরো একবার বইটা পড়তে বাধ্য।
যেহেতু এটা একটা রহস্য উপন্যাস।
তাই স্পয়লার বাঁচিয়ে যতটা পারি বলার চেষ্টা করবো।আর যেহেতু এটা আমার মতে সেকেন্ড বেস্ট (বেস্ট শেষ মৃত পাখি) রহস্য উপন্যাস তাই বিষদে আলোচনা করবো না।
আপনাদের পড়েই এইই বইটার পুরো মজা আর আনন্দ নিতে হবে। আমি শুধু চেষ্টা করবো আপনারা যাতে পড়ার জন্য বইটা আপনাদের উইশ লিস্ট রাখুন। এতো ভালো বই পড়ার থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না।
আপনারা যারা রহস্য উপন্যাস ওই গোয়েন্দা গল্প পড়েন অনেক সময় দেখবেন সেই সব পুস্তকের গোয়েন্দারা বাস্তব গোয়েন্দা থেকে অনেক আলাদা। লেখক অনেক অবাস্তব যুক্তি দিয়ে প্লট লেখেন আর রহস্যের সমাধান করেন। কিন্তু এই দশকের যত গোয়েন্দা গল্প আমি পড়েছি সবার থেকে আলাদা আর সত্যি সত্যিই রক্ত মাংসের চরিত্র মনে হয় দর্শনা বোস কে। পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিলো 2020 সালের পূজা বার্ষিকী " একচালা টে প্রকাশিত বৃশ্চিক এর মাধ্যমে আর সত্যি বলতে কি এই পুলিশ গোয়েন্দা আসলেন আর মন জয় করে নিলেন। আমার মতো অনেক পাঠক এর মন জয় করে নেবার পর লেখিকার ফেসবুক পেজ আর অন্য জায়গায় পাঠকেরা দাবি করতে থাকে তার পরবর্তী অভিযান খুব শীঘ্রই প্রকাশ পাক। সেটাই বজায় রেখে লেখিকা দর্শনা বোস এর দুইটি অভিযান নিয়ে একমালটে বই আকারে প্রকাশ করেন সেটাই বৃশ্চিকচক্র নাম দিয়ে।

প্রথম উপন্যাস বৃশ্চিক
আর দ্বিতীয় উপন্যাস বৃশ্চিক চক্র
এই উপন্যাস দুটি জুড়ে লেখিকা যে ভাবে দর্শনা বোস কে বাস্তব গোয়েন্দা পুলিশ হিসেবে তুলে ধরছেন সেটা তখন আপনারা পড়বেন বুঝতে পারবেন তার বুদ্ধি প্রখর আর অবজেকশন আর ঠান্ডা মাথায় ডিসিশন নেওয়ার ক্ষমতা গোয়েন্দা প্রেমী হিসাবে আপনি দর্শনা বোস কে ভালোবাসতে বাধ্য। বইটির দুটি উপন্যাস একে অপরের পরিপুরক ওহ জড়িত। তাই প্রথম উপন্যাস এর অনেক অজানা উত্তর আপনি | দ্বিতীয় উপন্যাস এ পেয়ে যাবেন সেই সঙ্গে একটি গোয়েন্দা কি রক্ত মাংসের চরিত্র হয়ে উঠে তা বুঝতে পারবেন।

বৃশ্চিক এই উপন্যাসের এর পটভূমি বর্ধমান এর নবগ্রাম। আর সেখানেই খুন মৌপ্রিয়া হালদার। সেটা দিয়ে তদন্ত শুরু। মৌপ্রিয়া কেনো, কে মারলো আর সাথে চলে অনেক সন্ধেহ ময় চরিত্র দের তাদের নিয়ে তদন্ত করতে নামে আর কাহিনী টে তার বিশ্লেষণ মন জয় করে নিতে বাধ্য আর উপন্যাস টি শেষে চমক ওহ পরবর্তী উপন্যাস শুরু হবার সূত্রপাত।
বিশ্চিকচক্র বাস্তবধর্মী গোয়েন্দা কাছাকাছি। দর্শনা বোস এই উপন্যাসের শুরুতে আমরা জানতে পারি ডিপার্টমেন্ট এনকোয়ারি ফলে আট মাস সাসপেন্ড এর পর পুনরায় চাকরির পোষ্ট পায় পুরুলিয়া বাঘমুন্ডি গ্রামে। ডিউটিতে জয়েন করতে আসার ট্রেন এ পরিচয় হয়। নিরঞ্জন সেন যিনি একজন সাংবাদিক। ডিউটি জয়েন করার প্রথম দিন মৃত্যু হয় ভবেশ বাউরি আর তার মৃত্যু নিয়ে যাবতীয় রহস্যের সূত্রপাত। প্রথমে বলে রাখি এই কাহিনীর অনেক শাখা অনেক প্রশাখা তাই আপনারা যখন পড়বেন ধীরে সুস্থে পড়বেন কিনেই বইটিতে রাজনীতি,মাফিয়া, মাওবাদী ষড়যন্ত্র এক কথায় পারফেক্ট পলিটিক্যাল থ্রিলার। আর রহস্যের সঙ্গে আপনারা একাত্মবোধ করবেন। দর্শনা বোস পেঁয়াজের খোসার মতো একটি স্তর ছাড়াতে থাকে আর অন্য স্তরে পৌঁছাতে থাকে শেষে পৌঁছে যায় একদম গভীর এ সর্বশেষ স্তর। আর রহস্যের গভীরে পৌঁছালে দর্শনা বোস এমন একটা রহস্যের মুখোমুখি হয় তার উত্তর জানার চেষ্টায় ছিল তার জীবনের পুরো অংশ জুড়ে। কি সেই রহস্য জানতে হলে পড়তে হবে এই বইটা
আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো আপনার অতি অবশ্যই এই বইটা পাঠ করবেন। আর না পড়লে এর নিজেকে এতো ভালো বই পড়ার থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবে।

রেটিং – এটা এমন একটা বই আমি মনে করি প্রতি পাঠক হিসেবে তাদের উইশ লিস্ট অতি অবশ্যই এই বইটা রাখা উচিত। আর পলিটিক্যাল থ্রিলার হিসাবে বাংলা সাহিত্য এর স্থান প্রথম দিকে থাকবে তাই  আমার ব্যাক্তিগত ভাবে আমি ১০ এর মধ্যে ২০

রিভিউটি লিখেছেনঃ Bapon Da

Post a Comment

0 Comments