বাবলি - বুদ্ধদেব গুহ Babli by Buddhadeb Guha

বাবলি - বুদ্ধদেব গুহ Babli by Buddhadeb Guha

বাবলি 
বুদ্ধদেব গুহ


গল্পটা শুরু হয় অভিকে দিয়ে..অভি তার বসের স্ত্রীর বনঝি কে ডিমাপুরে নামিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পায়। বসের স্ত্রীর বনঝি বাবলির চেহারা এমন নয় যে চোখে পড়ে বেশ একটু মোটার দিকে মুখ চোখও যে ভীষণ সুন্দর তা নয় তবে সব মিলিয়ে বেশ মিষ্টি যার ভালো নাম দময়ন্তী তার সাথে অভির পরিচয় খুব অল্পই তাই নাগাপুর হিলস এ অচেনা একটা মেয়েকে নিয়ে যেতে হবে ভেবেই বেশ নার্ভাস লাগছিল তার. কিন্তু বাবলি তাদের যাত্রাটাকে মোটেই অপসৃয়মান হতে দেয়নি বরং বেশ মাতিয়ে রেখেছিল...একটু একটু করে বাবলি আর অভি পরস্পরেতে মুগ্ধ হচ্ছিল..ভগবান হয়তো অন্যকিছুই চেয়েছিলেন.. ডিমাপুরের প্রায় 20 মাইল আগে অভির গাড়ি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো. বাবলির বেশ আনন্দ হচ্ছিল কিন্তু অভি বেশ টেনশন এ ছিল..সামনের একটা কুড়ে ঘরে বেশ মজা ঠাট্টার মধ্যে আর কিছুটা রোমান্টিক মোমেন্ট এ তাদের রাত কাটলো. দুজনের অনুভূতি আরো একটু গাঢ় হলো বলে মনে হলো... একটু আগে যেটা ঠাট্টা ছিল সেটা আর কোনোমতেই ঠাট্টা রইলো না ওরা দুজনেই একই সঙ্গে অদ্ভুতভাবে আবিষ্ট এক সীনক্রোনাইজেশানের মধ্যে বুঝতে পারলো যে দুজনের মধ্যে এমন কিছু একটা হয়ে গেলো, এই মুহূর্তে হয়ে গেছে; যা হবে বলে তাদের দুজনের কারোরই জানা ছিল। না..তারপর বাবলি ট্রেনে উঠে নিজেকে বোঝালো ওরকম বোকা বোকা ছেলেকে ভালোবাসা তার পক্ষে সম্ভব না... এয়ারপার্ট এ বাবলির সাথে বাবলির ছোটবেলার সুন্দরী বধু ঝুমার দেখা হলো এবং বাবলি জানতে পারলো ঝুমা অভির প্রেমে পড়েছে কিন্তু বাবলী ঝুমাকে মোটেই জানতে দিল না যে সে অভিকে চেনে বাবলি বাড়ি গিয়ে তার কাকার কাছে জানলো অভি তার কাকার বন্ধুর ভাই এবং যাকে সে বোকা বোকা ভেবেছিল আদৌ সে বোকা বোকা না বরং প্রচন্ড ব্রিলিয়ান্ট ছেলে বাবলি এবার নিজেকে ঝুমার কম্পিটিটর মনে করতে লাগলো.. এই জীবনে প্রথমবার বাবলির হেরে যাওয়ার ভয় হলো কিছুদিন যাওয়ার পর বাবলির কাকা তাকে শোনালেন যে অভি আসছে দিল্লিতে বাবলি রোগা হওয়ার জন্য টেনিস খেলা শুরু করলো অভির সাথে বাবলির দেখা হলো এবং দুজনে দুজনের অনুভূতি স্বীকার করলো. অভি বাবলিকে দুর্গাপুজোয় ইম্ফলে নিমন্ত্রণ করলো. দেখতে দেখতে পুজো চলে এলো. বাবলি প্লেন থেকে নেমে দেখে অভির সাথে ঝুমা তাকে নিতে এসেছে এই নিয়ে খুব ক্ষুব্ধ হয় সে. এবং ঝুমাকে নিয়ে অভি আর বাবলির মধ্যে বেশ ভুল বোঝাবোঝি হলো..অভি বাবলি ও ঝুমাকে নিয়ে প্ল্যান করেছিল কিন্তু বাবলি ঝুমাকে কম্পিটিটর মনে করে বেশ জেলাস ফিল করছিল ও ভেবেছিল এই পুজোটা শুধু অভি আর ও কাটবে সেই মত প্ল্যান করেই ও এসেছিল কিন্তু অভি সব বিষয়েই ঝুমাকে টানার জন্য বাবলি এর অভির মধ্যে বেশ ঝামেলা হলো অভি কিন্তু ঝুমাকে বাবলির বন্ধুর মতোই ট্রিট করতো..অভি জানতে পারে বাবলি ঝুমাকে কোনোমতেই সহ্য করতে পারে না এবং এই নিয়ে প্রচন্ড ঝামেলা হয় তাদের মধ্যে বাবলির প্রতি ভালোবাসা আস্তে আস্তে ঘৃণায় রূপান্তরিত হচ্ছিল এবং ঝুমার ভালো ব্যবহার এবং তার মহত্ত্বের প্রেমে পড়ছিল অভিবাবলির ও একই অনুভূতি হচ্ছিল বাবলির সঙ্গে থাকার সময় অভি ঝুমার কথা ভেবে অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিল বাবলি মনে মনে অভিকে বললো যখন তুমি নির্দ্বিধায় নিঃশর্তে আমাকে চেয়েছিলে একমাত্র আমাকেই তখন আমি সাড়া দিয়েছিলাম, আজ যখন তোমার মনে আমার সম্মন্ধে দ্বিধা এসেছে, তুমি আমার পাশে বসে আমাকে আদর করতে করতে ঝুমার কথা ভাবছো তখন আমারও সেই নিঃশর্ত ভালোবাসা আমি ফিরিয়ে নেবো, তুমি যতই বড় হও না কেনো যত মেয়েই তোমাকে চাক না কেনো তুমি আমাকে প্রথমে হারিয়ে দিয়ে দয়া করে জিতিয়ে দেবে এমন দান আমি চাই না তুমি আমায় সম্পূর্ণ চেনো না অভি অন্যদিকে অভি ভাবছিল- বাবলির মনটা এর চেয়ে অনেক বড় ও উদার হওয়া উচিত ছিল। ভোরের দিকে এক সুগন্ধি রাতের জন্ম হলেও আসলে অভি আর বাবলি যে পরস্পর কে বড় ভুল বুঝে ফেলেছিল আর অভি তো ঝুমাতে আসলে মুগ্ধ হয়ে গেছিলো.. হঠাৎ বাবলির মনে পড়লো আজ মেয়েদের জীবনে সবচেয়ে বড় পরীক্ষাতেও ঝুমা বাবলিকে জিতিয়ে দিয়ে কত অবহেলায় বাবলিকে আবার ও হারিয়েই দিল। বাবলি বুঝতে পারলো যে এ হার স্বীকার না করে ওর উপায় নেই। বুঝতে পারলো যে, জীবনে প্রত্যেক মানুষকেই এক বা একাধিক পরীক্ষায় হারতেই হয়।

রিভিউটি লিখেছেনঃ দয়ারী

Post a Comment

0 Comments