The Living Mountain
~ Amitav Ghosh
কি লিখব ভাবছি। পড়ার পর থেকেই ভাবছি। একবার মনে হচ্ছে, স্রেফ নীতিগল্পের আদল ছাড়া আর কিই বা আছে, অথচ শব্দমালার ফাঁক গলে কোথাও কি স্পষ্ট হয়ে উঠছে ভীষণ চেনা ইতিহাস? আবার আরেকটু সময় নিয়ে ভাবলে চোখের সামনে ফুটে উঠছে অন্য কয়েকটি ভাসা ভাসা ছবি।
সে ছবি এক ধ্যানমগ্ন দিগন্ত জোড়া পর্বতমালার, তার নাম মহাপর্বত। যার নীচে ছবির মত সাজানো সুন্দর উপত্যকায় বেঁচে আছে একদল রঙিন মানুষ। ওদের জীবনটা সহজ না, হয়তো একঘেঁয়ে। বাইরের দুনিয়া কি আর কেমন সেটা ওদের জানা নেই, ওদের মননে এই পৃথিবীতে ঐ উপত্যকা আর তাকে মাথার দিকে সারা শরীর দিয়ে আগলে রাখা ধোঁয়ার মতো পাহাড়চূড়ার বাইরে আর কোনোকিছুরই অস্তিত্ব নেই -- এই সীমিত পরিসরেই ওরা তবু ভালো থাকে। ওরা বিশ্বাস করে এই পাহাড়ের প্রাচীন পাথরের শরীরে প্রাণ আছে। তাই এই পাহাড়কে পূজা করে তারা, ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। পাহাড় যেটুকু দেয় সেটুকু নিয়েই খুশি থাকে। কেন? কারণ, ওরা লোভ করতে শেখেনি। অন্তত তখনও পর্যন্ত...
একদিন হঠাৎ বাইরে থেকে আসে একদল মানুষ, যারা নিজেদের ডাকে অ্যান্থ্রোপই বলে। প্রথমে বন্ধুত্বের ছলনা, তারপর অস্ত্রের রক্তাক্ত শাসানি। এর পরের গল্পটা আপনার আমার ভীষণ চেনা। হিংসা, প্রতিহিংসা, বিশ্বাসঘাতকতা আর বর্বর লোভের সামনে অসহায় প্রকৃতির যন্ত্রনাময় আত্মসমর্পনের ভীষণ চেনা ইতিহাস। আচ্ছা, প্রকৃতি কি সত্যিই অসহায়? না কি তার ধৈর্য্য অনেক বেশি, আমাদের নশ্বর মানবিক মাপকাঠিতে তার আদি অন্ত দেখা এক প্রজন্মের কম্ম না।
এই প্রশ্নের মোক্ষম উত্তরটা গল্পের শেষে দিয়েছেন লেখক। উত্তরটা কোনো থ্রিলার মার্কা টুইস্ট না, বইয়ের মাঝামাঝি আসার পর যে কারোর পক্ষেই আন্দাজ করা সম্ভব ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে ঘটনা। তবু শেষ লাইনগুলো পড়ার পর সব বুঝেও কেমন শিউরে উঠতে হয়। আমরা মানুষরা একটু বেশিই আশাবাদী, তাই না?
যদি বলি বইটা মাত্র তেত্রিশ পাতার, সেক্ষেত্রে চটপট পড়ার ক্ষেত্রে আপনার আগ্রহ জাগতে পারে। কিংবা লেখকের বাজে সস্তা লেখা ভেবে এড়িয়েও যেতে পারেন। আমি প্রথমে খুব একটা আশা রাখিনি, কিন্তু বিশ্বাস করুন - ওই যে ভদ্রলোকের নামটা। Hungry tides, river of smokes কিংবা the gun island এর লেখককে একটু ভরসা করেই বইটা পড়ে ফেললাম। ভাগ্যিস পড়েছিলাম।
Versatile কিংবা multi dimensional শব্দগুলো এই বইয়ের জন্য যথার্থ বিশেষন। স্কুলে পড়া একটি বাচ্চার যেমন গল্পটা ভাল্লাগবে , আবার বইটা ভাবিয়ে তুলতে পারে কোনো পরিণত মনস্ক অভ্যস্ত পড়ুয়াকেও। অন্য দৃষ্টিকোণ, অন্য অর্থ এবং বিশ্লেষন থেকে অবশ্যই...কিন্তু একের মধ্যে বহু, সেখানেই তো সাহিত্যের মূল সার্থকতা।
আর বেশি ব্যাখ্যা করতে গেলে এরপর বাজে বকব, তার চেয়ে বরং আপনি এক দেড় ঘণ্টা বার করে পড়েই ফেলুন। স্বল্প দৈর্ঘ্যের কারনে একটা অসমাপ্ত ভাব এসেছে গল্পের শেষে। আবার ভেবে দেখতে গেলে, ওর পরে আর বিশেষ কিছুই বাকি থাকে না বলার।
ঝরঝরে, সাবলীল ভাষা আর আশ্চর্য মায়াময় গদ্যের এই বইটি আমার মনে থাকবে - শিশু পাঠ্য রূপকথা হিসেবে, ইতিহাস হিসেবে, সামাজিক গল্প হিসেবে এবং অবশ্যই, একটি ভয়ানক সতর্কবার্তা হিসেবে - যে বার্তাটা লেখক রেখেছেন আমার জন্য, আপনার জন্যও।
আমার ব্যক্তিগত রেটিং : 7/10
~ Amitav Ghosh
সে ছবি এক ধ্যানমগ্ন দিগন্ত জোড়া পর্বতমালার, তার নাম মহাপর্বত। যার নীচে ছবির মত সাজানো সুন্দর উপত্যকায় বেঁচে আছে একদল রঙিন মানুষ। ওদের জীবনটা সহজ না, হয়তো একঘেঁয়ে। বাইরের দুনিয়া কি আর কেমন সেটা ওদের জানা নেই, ওদের মননে এই পৃথিবীতে ঐ উপত্যকা আর তাকে মাথার দিকে সারা শরীর দিয়ে আগলে রাখা ধোঁয়ার মতো পাহাড়চূড়ার বাইরে আর কোনোকিছুরই অস্তিত্ব নেই -- এই সীমিত পরিসরেই ওরা তবু ভালো থাকে। ওরা বিশ্বাস করে এই পাহাড়ের প্রাচীন পাথরের শরীরে প্রাণ আছে। তাই এই পাহাড়কে পূজা করে তারা, ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। পাহাড় যেটুকু দেয় সেটুকু নিয়েই খুশি থাকে। কেন? কারণ, ওরা লোভ করতে শেখেনি। অন্তত তখনও পর্যন্ত...
একদিন হঠাৎ বাইরে থেকে আসে একদল মানুষ, যারা নিজেদের ডাকে অ্যান্থ্রোপই বলে। প্রথমে বন্ধুত্বের ছলনা, তারপর অস্ত্রের রক্তাক্ত শাসানি। এর পরের গল্পটা আপনার আমার ভীষণ চেনা। হিংসা, প্রতিহিংসা, বিশ্বাসঘাতকতা আর বর্বর লোভের সামনে অসহায় প্রকৃতির যন্ত্রনাময় আত্মসমর্পনের ভীষণ চেনা ইতিহাস। আচ্ছা, প্রকৃতি কি সত্যিই অসহায়? না কি তার ধৈর্য্য অনেক বেশি, আমাদের নশ্বর মানবিক মাপকাঠিতে তার আদি অন্ত দেখা এক প্রজন্মের কম্ম না।
এই প্রশ্নের মোক্ষম উত্তরটা গল্পের শেষে দিয়েছেন লেখক। উত্তরটা কোনো থ্রিলার মার্কা টুইস্ট না, বইয়ের মাঝামাঝি আসার পর যে কারোর পক্ষেই আন্দাজ করা সম্ভব ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে ঘটনা। তবু শেষ লাইনগুলো পড়ার পর সব বুঝেও কেমন শিউরে উঠতে হয়। আমরা মানুষরা একটু বেশিই আশাবাদী, তাই না?
যদি বলি বইটা মাত্র তেত্রিশ পাতার, সেক্ষেত্রে চটপট পড়ার ক্ষেত্রে আপনার আগ্রহ জাগতে পারে। কিংবা লেখকের বাজে সস্তা লেখা ভেবে এড়িয়েও যেতে পারেন। আমি প্রথমে খুব একটা আশা রাখিনি, কিন্তু বিশ্বাস করুন - ওই যে ভদ্রলোকের নামটা। Hungry tides, river of smokes কিংবা the gun island এর লেখককে একটু ভরসা করেই বইটা পড়ে ফেললাম। ভাগ্যিস পড়েছিলাম।
Versatile কিংবা multi dimensional শব্দগুলো এই বইয়ের জন্য যথার্থ বিশেষন। স্কুলে পড়া একটি বাচ্চার যেমন গল্পটা ভাল্লাগবে , আবার বইটা ভাবিয়ে তুলতে পারে কোনো পরিণত মনস্ক অভ্যস্ত পড়ুয়াকেও। অন্য দৃষ্টিকোণ, অন্য অর্থ এবং বিশ্লেষন থেকে অবশ্যই...কিন্তু একের মধ্যে বহু, সেখানেই তো সাহিত্যের মূল সার্থকতা।
আর বেশি ব্যাখ্যা করতে গেলে এরপর বাজে বকব, তার চেয়ে বরং আপনি এক দেড় ঘণ্টা বার করে পড়েই ফেলুন। স্বল্প দৈর্ঘ্যের কারনে একটা অসমাপ্ত ভাব এসেছে গল্পের শেষে। আবার ভেবে দেখতে গেলে, ওর পরে আর বিশেষ কিছুই বাকি থাকে না বলার।
ঝরঝরে, সাবলীল ভাষা আর আশ্চর্য মায়াময় গদ্যের এই বইটি আমার মনে থাকবে - শিশু পাঠ্য রূপকথা হিসেবে, ইতিহাস হিসেবে, সামাজিক গল্প হিসেবে এবং অবশ্যই, একটি ভয়ানক সতর্কবার্তা হিসেবে - যে বার্তাটা লেখক রেখেছেন আমার জন্য, আপনার জন্যও।
আমার ব্যক্তিগত রেটিং : 7/10
রিভিউটি লিখেছেনঃ Metaplastic
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।