সিন্ধুজাতক - দীপিকা মজুমদার Sindhu Jatak by Dipika Majumdar

সিন্ধুজাতক - দীপিকা মজুমদার Sindhu Jatak by Dipika Majumdar

বইয়ের নাম- সিন্ধুজাতক
লেখিকা- দীপিকা মজুমদার
প্রকাশক- একলব্য
মুদ্রিত মূল্য- ১৮৯/-
বাঁধাই- পেপারব্যাক
শ্রেণী- বায়ো থ্রিলার 

সদ্য শেষ করলাম দীপিকা মজুমদারের লেখা বই "সিন্ধুজাতক"। বইটিতে বায়োথ্রিলারধর্মী একটিই উপন্যাস রয়েছে। বাংলা সাহিত্যে বর্তমানে কল্পবিজ্ঞান নিয়ে অনেক রকম কাজ হলেও বায়োথ্রিলার নিয়ে সেভাবে কাজ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তাই বইটির কথা শুনে আগ্রহ জন্মায় এবং কেনার সিদ্ধান্ত নিই। 

     উপন্যাসটির মূল প্রেক্ষাপট হচ্ছে সেন্ট লুসিয়া নামের একটি দ্বীপ যেটি পর্যটন শিল্পের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও ক্ষেত্র বিশেষে কলকাতা ও কিছু অন্যান্য জায়গায় কাহিনীর স্থান বদল হয়েছে। উপন্যাসটি শুরুতেই দেখা যায় সেন্ট লুসিয়ার একটি নির্জন প্রান্তরে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কয়েকজন প্রতিযোগীকে যারা একটি সারভাইভ্যাল গেমে অংশ নিয়েছে। এখানেই আমাদের পরিচয় হয় কার্লা মসের সঙ্গে। পরবর্তী অংশেই আমরা দেখতে পাই কার্লা সমুদ্রে মাছ সংগ্রহ করতে গিয়ে জোয়ারের প্রকোপে পড়ে ডুবে যায় কিন্তু তারপর আশ্চর্যজনকভাবে সে আবার বেঁচে ফিরে আসে। কিন্তু কিভাবে? কার্লার সেই অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করেই কাহিনীর রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করে। এদিকে  কলকাতার বউবাজারের এক ধনী ব্যবসায়ীর বাড়িতে চোর ঢোকে কিন্তু দামী কোনো জিনিস খোওয়া যায় না। তাহলে চোর কী করতে এসেছিল? এই প্রশ্নের উত্তরও খুঁজতে গিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে। 

#আমার ভাল লাগা: 

১. থ্রিলার হিসাবে শুরুর থেকে শেষ অবধি টানটান উত্তেজনা বজায় ছিল। 

২. কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া উপন্যাসটিকে মোটামুটি নির্মেদই বলা যায়, লেখিকা অহেতুক কাহিনীকে টেনে নিয়ে যাননি। 

৩. বর্তমানে কল্পবিজ্ঞান গল্পের মধ্যে দুর্বোধ্যতা খুব বেশি পরিমাণে থাকে। সেগুলোই নাকি আসল কল্পবিজ্ঞানের গল্প। এর ফলে আমার মত যারা সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা করেছে কিংবা যারা বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী নয় তাদের কাছে কল্পবিজ্ঞানের গল্প পড়তে চাওয়া ধৃষ্টতা হয়ে যায়। কিন্তু 'সিন্ধুজাতক' বায়ো থ্রিলার হলেও সম্পূর্ণরূপে সহজবোধ্য। যে কোনো মানুষ, এমনকি কোনো কিশোরও যদি বইটি অনাসায়ে পড়তে পারবে। 

৪. লেখিকার চরিত্র উপস্থাপন বেশ পরিমিত। একেকটি চরিত্রের অতিরিক্ত বর্ণনায় যেমন গল্প ভারাক্রান্ত হয়নি, তেমনই আবার কোনো চরিত্রকে খাপছাড়া ভাবেও উপস্থাপন করা হয়নি।

৫. এখনের বেশিরভাগ উপন্যাসেই কাহিনীর চেয়ে তথ্যের ভান্ডার বেশি থাকে, উপন্যাস পড়ছি নাকি উইকিপিডিয়া তা বুঝতে কষ্ট হয়। কিন্তু 'সিন্ধুজাতক' এই অতিরিক্ত তথ্যের চাপ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। লেখিকা বইটি লেখার জন্য যথেষ্ট পড়াশুনা করেছেন ঠিকই কিন্তু সেই জ্ঞানের ভান্ডার জোর করে উপন্যাসের মধ্যে গুঁজে দেননি। এটা আমাকে ভীষণ রকম আরাম দিয়েছে পড়ার সময়। 

৬. বইয়ের ভাষা অত্যন্ত সাবলীল এবং অলংকারের বাহুল্যবর্জিত। 

৭. বইয়ের বাঁধাই, পৃষ্ঠার মান যথেষ্ট ভাল। 

#আমার মন্দ লাগা: 

১. মন্দ লাগার প্রথম বিষয় প্রচ্ছদ। ২০১৯ সালের প্রচ্ছদটি যথেষ্ট আকর্ষণীয় ছিল, সেই তুলনায় ২০২২ সালের প্রচ্ছদটি আমার কাছে নেহাৎই সাধারণ মনে হয়েছে এবং উপন্যাসের সঙ্গে খুব একটা প্রাসঙ্গিক নয় বলেও মনে হয়েছে। গল্পের গাম্ভীর্যের সঙ্গে ঠিক যেন মানাচ্ছে না প্রচ্ছদটি।

২. সমগ্র উপন্যাস জুড়ে অসংখ্য চরিত্র রয়েছে। সত্যি বলতে খেই রাখা মুশকিল হয়ে যায়। কিছু চরিত্র আমার মনে হয়েছে লেখিকা চাইলেই এড়িয়ে যেতে পারতেন, গল্পে তাদের অংশগুলো না থাকলেও এমন কিছু ক্ষতি হত না।

৩. দু' একটি ছোট ঘটনা রয়েছে যার প্রাসঙ্গিকতা আমি বুঝতে পারিনি এবং গল্পের পরবর্তীকালে কোথাও উল্লেখও নেই। যেমন- পীযুষ জোয়ারদারের বাড়ির কাঁচ ভাঙা। 

৪. শেষের দিকে গল্পের মূল্য চরিত্র দ্বৈপায়ন আর কুশকে প্রায় নিষ্ক্রিয় দেখানো হয়েছে। তাদের শারীরিক গতিবিধি বাধাপ্রাপ্ত হলেও মনের গতিবিধি একটু বর্ণনা করা থাকলে ভাল লাগত। শেষের কয়েকটা চ্যাপ্টার পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল ওরা যেন কোথাও নেই, অথচ ওরা ঘটনাস্থলেই ছিল। 

৫. মুদ্রণ প্রমাদ আমার চোখে পড়েনি কিন্তু অনেক জায়গায় দুটি শব্দ একসঙ্গে জুড়ে গিয়েছে। আশা করছি পরবর্তী সংস্করণে এগুলি সংশোধন করে নেওয়া হবে। 

          ভালো লাগা ও মন্দ লাগা মিশিয়ে থাকলেও উপন্যাসটি আমি উপভোগ করেছি। ভালো লেগেছে রহস্যের বিস্তার এবং যথাসময়ে লেখিকা রহস্যের জাল গুটিয়েও নিয়েছেন।, অহেতুক টেনে রাখেননি। পরিশিষ্ট অংশের অপ্রত্যাশিত চমকটা সত্যি বলতে মন জয় করে নিয়েছে। ভেবেছিলাম এই ধরণের গল্প যেমন একটা বিষাদের রেশ রেখে শেষ হয়, তেমনই হবে কিন্তু লেখিকা সেই জায়গা দেননি। এর জন্য লেখিকাকে অনেক ধন্যবাদ। পরিশেষে বলব, উপন্যাসটি নিঃসন্দেহে পড়া যায় এবং লেখিকার কাছ থেকে ভবিষ্যতে আরও বায়োথ্রিলার পেলে আমি অবশ্যই পড়ব। 

রেটিং- ৭.৫/১০

রিভিউটি লিখেছেনঃ Sinchan Nohara

Post a Comment

0 Comments