শঙ্খনীল কারাগার 📘
হুমায়ূন আহমেদ
কাহিনী
কোনো কোনো রাতে অপূর্ব জোছনা হয়। সারা ঘর নরম আলোয় ভাসতে থাকে। ভাবি, একা একা বেড়ালে বেশ হতো। আবার চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। যেন বাইরের উথাল পাথাল চাঁদের আলোর সঙ্গে আমার কোনো যোগ নেই। মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে শব্দ ।
আমি কান পেতে শুনি। বাতাসে জাম গাছের পাতার সর সর শব্দ হয়। সব মিলিয়ে হৃদয় হা হা করে উঠে। আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতায় কী বিপুল বিষণ্ণতাই না অনুভব করি। জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি।
প্রথম প্রকাশের ভূমিকা
সোমেন চন্দের লেখা অসাধারণ ছোটগল্প ইঁদুর' পড়ার পরই নিম্নমধ্যবিত্তদের নিয়ে গল্প লেখার একটা সুতীব্র ইচ্ছা হয়। 'নন্দিত নরকে’, ‘শঙ্খনীল কারাগার' ও 'মনসুবিজন' নামে তিনটি আলাদা গল্প প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লিখে ফেলি। নিজের উপর বিশ্বাসের অভাবের জন্যেই লেখাগুলি দীর্ঘদিন আড়ালে পড়ে থাকে। যাই হোক, জনাব আহমদ ছফা ও বন্ধু রফিক কায়সারের আগ্রহে ‘নন্দিত নরকে' প্রকাশিত হয় মাস ছয়েক আগে। এবারে প্রকাশিত হলো 'শঙ্খনীল কারাগার।
‘নন্দিত নরকে'র সঙ্গে এই গল্পের কোনো মিল নেই। দু'টি গল্পই উত্তম পুরুষে বলা এবং নিম্নমধ্যবিত্তের গল্প, এই মিলটুকু ছাড়া। নামধাম দু'টি বইতেই প্রায় একই রেখেছি। প্রথমত নতুন নাম খুঁজে পাই নি বলে, দ্বিতীয়ত, এই নামগুলির প্রতি আমি ভয়ানক দুর্বল বলে। কার্যকারণ ছাড়াই যেমন কারো কারো কিছু কিছু দুর্বলতা থাকে, এও সেরকম।
আন্তরিক চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু ছাপার ভুল রয়ে গেছে। ভুলগুলি অন্যমনস্ক পাঠকের চোখ এড়িয়ে যাবে, এইটুকুই যা ক্ষীণ আশা ।
হুমায়ূন আহমেদ
বৈশাখ, ১৩৮০
রিভিউঃ
" দিতে পার একশ' ফানুস এনে
আজন্ম সলজ্জ সাধ, একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই।
কোনো কোনো রাতে অপূর্ব জোছনা হয়। সারা ঘর নরম আলোয় ভাসতে থাকে। ভাবি, একা একা বেড়ালে বেশ হতো। আবার চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। যেন বাইরের উত্থাল পাথাল চাঁদের আলোর সঙ্গে আমার কোনো যোগ নেই।
মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে শব্দ। আমি কান পেতে শুনি। বাতাসে জাম গাছের পাতার সর সর শব্দ হয়। সব মিলিয়ে হৃদয় হা হা করে উঠে। আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতায় কী বিপুল বিষণ্নতাই না অনুভব করি। জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি।
ভদ্র, শিক্ষিত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের যতরকম সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, লেখক তাঁর সবটুকু তুলে এনেছেন ৭৭ পৃষ্ঠার মধ্যে। কি চমৎকার লেখনী সাথে জীবন বোধের এক অপূর্ব মিশ্রণ।
Ran't Sarkar
শঙ্খনীল কারাগার হুমায়ূন আহমেদ বশি প্রেস
“মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে-শব্দ। আমি কান পেতে শুনি। বাতাসে জামগাছের পাতায় সরসর শব্দ হয়। সব মিলিয়ে হৃদয় হা-হা করে ওঠে। আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতায় কী বিপুল বিষণ্ণতাই না অনুভব করি। জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি।”
কিছু গল্প সারাজীবন বুকের ভেতরে খুব যত্নকরে রেখে দিতে হয়। এমন একটি বই একই সাথে খুব মন খারাপ করা, আবার সুখপাঠ্য ও? শঙ্খনীল কারাগার ঠিক এরকমই ছোট্ট একটা বই,কিন্তু মায়াময় আবেগ নিয়ে লেখা।অনেক বেশি মন খারাপ করা অদ্ভুত সুন্দর একটি বই যতক্ষণ তুমি এই বই পড়বে ততক্ষণ অদৃশ্য এক মায়া আর ভালোবাসা তোমাকে আচ্ছন্ন করে রাখবে এবং মন খারাপ করিয়ে দিবে। মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের সুখ-দুঃখ, ভাঙা-গড়া, পাওয়া না পাওয়া আর দ্বিধা দ্বন্দে থাকা গল্প। এটা আমাদের সবার গল্প। ভাই-বোন, মা-ছেলে, মা-মেয়ের গল্প। তারা কখনো কখনো হাসিখুশি, কখনো বিষন্নতায় ভরপুর। অনেক সময় মনে হবে কেউ না থাকলে হয়তো পৃথিবী থমকে দাঁড়াবে। জীবনে হয়তো আর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হল, কারো জন্য কোনোকিছু খেয়ে থাকে না। জীবন চলতে থাকে প্রবহমান নদীর মতো। শুধু স্মৃতির আড়ালে থেকে যায় কিছু মানুষ বহু কিছু ভালোবাসা আর কিছু বিষন্নতা। রোজ নটা পাঁচটা অফিস করে ফেরার পথে বসন্তের শেষ বিকেলের কিছু বিষন্নতা। নিজের অজান্তে ফেলে আসা মানুষগুলোর জন্য ইচ্ছা করে গলা ছেড়ে বলে ওঠি- দিতে পারো একশো ফানুস এনে?
আজন্ম সলজ্জ সাধ একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই।”
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।