রেহানা মরিয়ম নুর ২০২১ : আবদুল্লাহ মুহাম্মদ সাদ Rehana Maryam Noor 2021 Movie

রেহানা মরিয়ম নুর ২০২১ : আবদুল্লাহ মুহাম্মদ সাদ Rehana Maryam Noor 2021 Movie

সিনেমা : রেহানা মরিয়ম নুর (২০২১) 
পরিচালক: আবদুল্লাহ মুহাম্মদ সাদ 
IMDb: ৮/১০ (২৯৫) 
আমার রেটিং : ১০/১০ 

এই প্রথম কোনও বাংলাদেশী সিনেমা প্রচণ্ড প্রেস্টিজিয়াস কান চলচ্চিত্র উৎসবে অফিসিয়াল ভাবে স্থান করে নিল এবং বলা বাহুল্য, একদমই স্বমহিমায়। 

কেন্দ্রীয় নাম চরিত্র রেহানা স্থানীয় মেডিকেল কলেজের মেডিসিনের প্রফেসর - শুরুতে ছাত্রীর টুকলি ধরার মাধ্যমেই তার কড়া চরিত্রের অভ্যাস পাই। এরপরেই রেহানা এক প্রফেসরের রুম থেকে এক ছাত্রীর অসহায় অবস্থায় বেরিয়ে পালানোর ঘটনার সাক্ষ্য হন। ঘটনা বুঝতে অসুবিধা হয়না তার। ছাত্রীটি রাজি না থাকায় নিজের নামে ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ দাখিল করেন তিনি। কিন্তু মুশকিল হলো ছাত্রী থেকে হসপিটালের উপরমহলের সমস্ত কর্মকর্তারা ঘটনাটি চেপে যেতে বলেন প্রতিবাদী রেহানাকে। সমান্তরাল ভাবেই রেহানার শিশু কন্যার স্কুলের একটি ঘটনা চলতে থাকে যেখানে মেয়েটি তার এক ছেলে ক্লাসমেট কে কামড়ে দিয়েছে কিন্তু সেটা সেল্ফ ডিফেন্স। তাই স্কুল থেকে সবার সামনে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে স্কুলে টিকতে গেলে! দুইটি ঘটনাই প্রশ্ন তোলে - মহিলা দ্বারাই পরিচালিত একটি দেশে সত্যিই কি মহিলারা নিজেদের প্রাপ্য সম্মান নিয়ে দিন কাটাতে পারছেন? সমাজের মনুষ্যত্বের তুলাদন্ডটি কি সমানভাবে বিচার করছে? সিনেমাটি এখানেই বাংলাদেশের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে ইউনিভার্সাল।

এই সিনেমার সব থেকে নজরকাড়া ব্যাপার ক্যামেরা।তুহিন তাজিমুল যেভাবে পুরো সিনেমা জুড়ে হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে বেড়ালেন এবং খুঁজে খুঁজে একদম নিখুঁতভাবে প্রত্যেকটি শট নিলেন তাতে আমি শিহরিত (পরিচালকের প্রথম কাজ লাইভ ফ্রম ঢাকা-তেও তিনিই মনোক্রমিক ম্যাজিক দেখিয়েছিলেন)। ক্যামেরা সবসময় রেহানাকে ফলো করেছে; কিছু সময় একদম ওনার মুখের সামনে ফোকাস করেছে, কিন্তু লক্ষণীয় ব্যাপার একটিবারও রেহানার চোখ ক্যামেরার সম্মুখীন হচ্ছে না - যেনো ক্যামেরার পিছনে থাকা মেটাফরিকাল এই সমাজ চোখে চোখ রাখতে পারছে না তেজস্বী অথচ impulsive এই মেয়ের সাথে। muted কালার প্যালেট এই সিনেমার স্ক্রিনপ্লেতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। নীল বর্ণের আভাসটি একদমই ইচ্ছাকৃত ভাবে দেওয়া হয়েছে (সম্ভবত male-backed society বোঝাতে যা pink নয় বরং blue)। তবে এই নীল রং আর্টিস্টিক একটা ফিল ও দিয়েছে সিনেমাতে। এই ধরনের সিনেমাতে BGM দেওয়া একদমই মানানসই নয় এবং দেওয়াও হয়নি। আমরাও রেহানার সাথেই ঘুরে বেড়াই হসপিটালের আনাচে কানাচে। 

Disturbing element হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় শব্দের ব্যবহার করেছেন পরিচালক (গুরুত্বপূর্ন কথার মাঝেই ফোন আসার রিনরিনে আওয়াজ, নিশ্চুপ দৃশ্যের মাঝে হঠাৎ করে প্রিন্টারের যান্ত্রিক ঘেড়ঘেড়ে শব্দ একটা monotonous life এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ)। ভাবনার এই বৈচিত্র্যই প্রতিকূল বাজেটের বিপরীতে বাংলাদেশের সেরা উত্তর।

আজমেরী হক বাঁধন রেহানা চরিত্রে সবথেকে বেশি উপস্থিতি পেয়েছেন এবং খুবই বাস্তবধর্মী অভিনয় করেছেন। কে বলবেন গ্ল্যামারবিহীন চরিত্রের এই নারীকেই আমরা শরীর প্রদর্শন করতে সৃজিতীয় একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর সিরিজে সদ্য দেখেছি? সাপোর্টিং কাস্ট প্রত্যেকেই যথাযথ অভিনয় করেছেন নিক্তি মেপে। 

সবমিলিয়ে এই সিনেমা আমার কাছে একটি নিখুঁত, সুন্দর ও আর্টিস্টিক সিনেমা। 

রিভিউটি লিখেছেনঃ Chocolate Boy

Post a Comment

0 Comments