প্রথম প্রতিশ্রুতি
আশাপূর্ণা দেবী
কাহিনীঃ
বাংলাসাহিত্যে আশাপূর্ণা দেবীর অভ্যুদয় একটি বিশিষ্ট ঘটনা। তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও ক্ষুরধার লেখনী বাঙ্গালীর সংসারজীবনের উপরকার বর্ণাঢ্য মোহজাল ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে তার যে সত্যকার রূপ দেখিয়েছেন, তা ইতিপূর্বে কোন লেখক বা লেখিকা দেখতে কি দেখাতে সাহস করেন নি। - কোনো প্রচলিত ধারণা ও বিশ্বাসকেই লেখিকা যাচাই না ক'রে গ্রহণ করতে রাজী হন নি, আর তার ফলে বিশ্বাসমুগ্ধ বহু পাঠককেই সুকঠিন আঘাত পেতে হয়েছে তাঁর লেখা পড়ে। তাঁর সত্যদৃষ্টির নিকষে টেকে নি প্রায় কোনটাই—অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপাত-মূল্যবান অলঙ্কারের ভিতরকার কেমিক্যাল সোনা ও ঝুটো পাথরের যথার্থ চেহারাটা বেরিয়ে পড়েছে। ....কিন্তু শুধুই কি জীবনের অসত্য ও অমলিন দিকটাই দেখেছেন লেখিকাশনা, তা দেখেন নি। তাহলে আজ এই গ্রন্থের নায়িকা সত্যবতীর সৃষ্টি বা কল্পনা সম্ভব হত না। বাংলার সমাজ ও সংসারের অন্তঃপুরে গত শতবর্ষে যে অভাবনীয় ও অকল্পনীয় পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে—বহু অসমসাহসিক বীরাঙ্গনার বুকের রক্তেই তা ঘটতে পেরেছে; তারা নিজেরা জ্বলে আলোকিত করে দিয়ে গেছে জীবনের প্রশস্ত রাজপথ, আত্মবলির মূল্যে খুলে দিয়ে গেছে মহৎ সম্ভাবনার সিংহদ্বার। লেখিকার আবির্ভাব যেমন বিস্ময়কর তেমনি বাংলা কথাসাহিত্য ক্ষেত্রে 'প্রথম প্রতিশ্রুতি র আবির্ভাবও একটি স্মরণীয় ঘটনা। বাঙ্গালী পাঠক- পাঠিকা তথা সমগ্র বাংলা ভাষাভাষী জনতা চিরদিন এই উপন্যাসখানির জন্য লেখিকার কাছে কৃতজ্ঞ ও ঋণী বোধ করবেন সন্দেহ নেই। বহু গুণী ও জ্ঞানী পাঠকের মতে— তিনি যদি মাত্র এই একটি গ্রন্থই রচনা করতেন, তাহ'লেও বঙ্গবাণীর সভায় তাঁর আসন স্থায়ী ও বরণীয় হয়ে থাকত।
রিভিউঃ
আমি কোনো রিভিউ দেবোনা বা বলা ভালো এই বই এর রিভিউ দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। আমি শুধু সেই মেয়েটির ব্যক্তিত্বের কথা বলবো যার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ই তাকে সেই তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজ থেকে আলাদা করেছে। সেই তথাকথিত সমাজ যেখানে মেয়েমানুষের এতে মানা,তাতে মানা কিন্তু সত্যবতী?তার জেদকে তো স্বয়ং সত্যবতী এর ও ক্ষমতা নেই হার মানানো। সব অকথা কুকথার পরেও সমস্ত কর্তব্য পালন করেও শেষ পর্যন্ত কি নিজের মেয়ে কে কি নিজের মনের মতো করে তুলতে পারবে?
সময় পেলে পড়ে ফেলুন সত্যবতী ট্রিলজি। অসাধারণ অনুভূতি হবে।।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Alpana Ghosal
review
প্রথম প্রতিশ্রুতি লেখিকা : আশাপূর্ণা দেবী
প্রকাশনী: মিত্র অ্যান্ড ঘোষ পাবলিশার্স।
আশাপূর্ণা দেবীর " সত্যবতী ট্রিলজির প্রথম উপন্যাস প্রথম প্রতিশ্রুতি। তৎকালীন সমাজের অত্যন্ত আধুনিক মনস্কা মেয়ের কাহিনী। তথাকথিত ধারণার বাইরে বেরিয়ে একজন গ্রাম্য মেয়ের কাহিনী তুলে ধরেছেন লেখিকা। তাঁর অসাধারণ লেখনী দক্ষতায় তা হয় উঠেছে অনন্য।
সেই সময় মেয়েদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া নিয়মের বেড়াজাল ছিন্ন করে বারবার বেরোবার স্বপ্ন দেখেছে সেই মেয়ে, ধাক্কা খেয়েছে. বাঁধা পেয়েছে কিন্তু হার মানেনি।
রামকালি, নবকুমার, এলোকেশী প্রতিটা চরিত্র নিজ নিজ স্থানে অনন্য। তাদের কার্যকলাপ বারবার ভাবতে বাধ্য করে সমাজ যা ছিল সেই সময় এত আধুনিকতায় এসেও কি পরিবর্তিত হয়ছে? এলোকেশীর বৌমার প্রতি অত্যাচার শুধু কি ছেলে হারানোর অলীক ভয়? না অতীত কে পুনরাবৃত্ত করার অদম্য চেষ্টা?
যে নিয়ম মহিলারা পালন করে টা বিপরীত অবস্থানে কি পুরুষ দের ওপর ও সমান প্রযোজ্য নয়? যদি নাই হয় তবে কিসের ভয়ে কিসের তাগিদে মুখ বুঝে সহ্য করা সেই জগদ্দল নিম্নমের বোঝা ?
সত্যবতী র শ্বশুর মশাইর পুজোর যে ভন্ড ভক্তি তা শুধু সেই সময়কার নয় এখনও অনেকের মধ্যেই আছে, আমরাও জেনেও চুপ করে মেনে নি।
তৎকালীন সময়ের খুবই সাহসী রচনা এই গল্প। সেই সময় এ সমাজব্যবস্থা র রূঢ় বাস্তব চোখের সামনে মেলে ধরে। কোথাও না কোথাও গিয়ে সেই অতীতের ঘটনা বর্তমানের তথাকথিত আধুনিক সমাজের সাথে মিলে মিশে এক হয় যায়।
কাহিনীর পাড়ার অনেক পর অবধি রেশ থেকে যাবে যা পরের খন্ড গুলি পড়ার উৎসাহ যোগাবে।
সব শেষে লেখিকা কে প্রণাম জানায় বাড়ির অন্দরমহল এর পর্দার অন্তরালে মহিলাদের জীবন যাপনের কাহিনী পাঠক বৃন্দ র সামনে তুলে ধরার জন্য।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Dream P
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।