প্রফেসর সোম
কৌশিক সামন্ত
ধরুন আপনি একটি টেবিলে হাত পা বাঁধা অবস্থায় শুয়ে। ঘাড় ঘোরাতেও কষ্ট হয়। তবু কোনভাবে বাঁ দিকে চেয়ে দেখলেন, একটা টেবিল আছে পাশে। যেহেতু টেবিল টা আপনি চোখের পাশ দিয়ে দেখেন নি ঘাড় না ঘুরিয়ে, বুঝতেই পারছেন সেটা আপনার টেবিল থেকে একটু দূরেই আছে, এবং প্রায় সমান্তরালে অথবা মাথার দিকে- নীচের দিকে নয়। যাক। ঘরের বাকি কাণ্ড অগ্রাহ্য করুন। আপনি কোনভাবে ডান পা টা ছাড়াতে পারলেন। এবার আপনি দেখলেন পাশের টেবিলটার পায়াতে চাকা আছে। শোয়া অবস্থায় ঘার বেঁকিয়ে পাশের টেবিলের চাকা দেখতে পাওয়া- মানে টেবিল টা বেশ দূরেই আছে নিশ্চয়। এখন আপনি, এই জোর-বাঁধা অবস্থায়, ডান পা টা বাম পায়ের ওপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে, পাশের টেবিলে এত জোর ধাক্কা দিলেন, সেটা ছুটে ঘরের তারজালির ব্যারিকেড ভেঙে দিল। ইয়ে মনে রাখবেন, সেই টেবিলের ওপর একটা ছফুট লম্বা, দৈত্যমানুষের থুড়ি অতিমানবের অতিভারী বডি আছে।
প্রখর রুদ্রাতীত এই কর্মকাণ্ড যিনি সাধন করেন, তাঁর নাম রুদ্র সোম। রেভারেণ্ড, প্রফেসর সোম। লেখক জটায়ু নন, কৌশিক সামন্ত।
ভীষণ উচ্চমানের রিভিউপ্রাপ্ত এই বইয়ের গল্প কেমন?
গল্পের শুরুতে সুন্দর বর্ণনা থাকে। তারপর ডেভিলের পদপাত ঘটে, কিছু অসমাপ্ত ঘটনা থাকে, তারপরেই কাট টু প্রফেসরের বাংলার ড্রয়িংরুম। সেখানে তিনি ঘটনা শোনান লেখক কে। কিভাবে সেই সিচুয়েশনে তিনি গেছিলেন। মাথায় আঘাত পেতে তিনি টিনটিনের চেয়েও ওস্তাদ, প্রতি গল্পে একবার সাধারণত এভাবে অজ্ঞান হন তিনি। জ্ঞান ফিরে এলে ডেভিল বা তার সাঙ্গোপাঙ্গ তাঁকে আটকে রেখে বলিউডি স্টাইলে নিজের গল্প শোনায় আর অট্টহাসি হাসে। এমনকি স্বয়ং গ্রিম রিপারও এই সুখদুখের গল্পগুজব করেছে তাঁকে বেঁধে। আর শেষে, 'কোথা থেকে কি হয়ে' তিনি উদ্ধার পান।
আরেকটি বৈশিষ্ট্য আছে প্রফেসরের গল্পে। ইংরাজ মানুষ ইংরাজিতে তাঁকে বারবার বলে, "তুমি বয়সে ছোটো, আপনি না বলে তুমি বলছি।" সত্যি, ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয়।
'পাহাড়চূড়ায় আতঙ্ক' এই বইয়ের একমাত্র আলো, এবং ভাল (যদিও এটিই সেই গ্রিম রিপার...)। বাকি আরো এক দুটো হয়ত ভাল হয়ে উঠত, কিন্তু মনে হল লেখক শেষ করার পর নিজেও আরেকবার পড়ে দেখেন নি ব্যাপার টা কি দাঁড়িয়েছে।
এদিকে পাবলিশার অরণ্যমন!
দুবছরে পাঁচ এডিশন! (সতর্কীকরণঃ এডিশন শব্দটি যে এডিট শব্দজাত সেটা আসলে মিথ্যে)
সম্পাদনা ঋজু গাঙ্গুলী!
অদ্রীশ-অনীশ, ত্রিদিব, হিমাদ্রিকিশোর। পরের নামটাই যেন কৌশিক এই ত বাজারের মন্তব্য। ঋজু গাঙ্গুলী কে বেশ সম্মান করতাম, ওনার রিভিউ কে বিশ্বাস হত। আসলে সবই পিঠ, আর সবারই চুলকোয়।
রিভিউটি লিখেছেনঃ SR GTK
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।