পথের দাবী
শরৎচন্দ্র_চট্টোপাধ্যায়
সত্যনারায়ন_ প্রকাশনী
"তাজমহলকে ভালো লাগাবার জন্যই তাজমহলের নেশা ছুটিয়ে দেওয়া দরকার "
—— মনে পড়ে লাইনটা?
' শেষের কবিতায় ' ব্যবহৃত এই লাইনটা যে কতটা মাধুর্যতা মিশ্রিত বাস্তবতা তুলে ধরে, তা আমার মতে, আমাদের যত বয়স বাড়তে থাকে এবং তার সাথে জ্ঞানের পরিধি যত বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে ততোই গভীর ভাবে আমরা অনুধাবন করতে পারি। না না... বিশ্বাস করুন উপমার ভনিতায় অথবা বাক্যের ছান্দিক মায়াজালে আপনাকে জড়াচ্ছি না। এ আমার স্বয়ং উপলব্ধিত একটি অমৃতকুন্ড বলা চলে। ' পথের দাবী ' উপন্যাস টা আমি প্রথম পড়েছিলাম ক্লাস নাইন, তারপর ক্লাস একাদশ, তারপর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ এবং কলেজ থেকে বেরনোর পর আজ আবার একবার। কিন্তু যতবারই আমি এই বইটা খুলে বসি, ততবারই আমি নতুন পথের সন্ধান পাই। কখনো প্রেমের... কখনো রাজনীতির...কখনো বিপ্লবের... কখনো দারিদ্র্যের.. কখনো আমার অজ্ঞানতার!! যখনই আমি বর্তমানের লেখার প্রতি তিতিবিরক্ত হয়ে পড়ি... কোথাও ক্লান্তি এসে জমা দেয় মস্তিষ্কক-কোটরে, হৃদয়বত্তা হয়ে পড়ে নিস্পনদনশীল জড়জ ধাম। তখনই আমি এটা খুলে বসি....!! ডুবে যাই সব্যসাচী তে... ডুবে যাই ভারতী তে.... ডুবে যাই অপুর্বে... ডুবে যাই সুমিত্রায়.... কালাপানি... বর্মা... রেঙ্গুন... পাহাড়ি পথ.... গিরিশকুমার... গাঁজার কলকে... নদীর ভাটায় নুইয়ে থাকা নৌকা... বড় জাহাজ.... এর শেষ নেই, এর শেষ নেই... কেননা এ কখনো শুরুই হয়নি। এর মৃত্যু নেই... কেননা এ কখনো জন্মায়নি, জন্মাবার মত করে।
এই বই সম্পর্কে আর কিই বা বলি বলুন। এ বই এর রিভিউ দেবার ধৃষ্টতা না করাই শ্রেয়। তবে এবারের পড়ায় আমার একটা জিনিস উপলব্ধি হয়েছে। না, উপলব্ধি টা উপন্যাস টাকে নিয়ে নয়, চরিত্রকে নিয়ে নয়, উপলব্ধি টা স্বয়ং লেখককে নিয়ে।
একটা জিনিস আমি খুব খেয়াল করেছি, উপন্যাস টায় প্রথমের দিকে যেভাবে এক একটা চরিত্রকে গঠন করে গল্পগুলো এগিয়ে গেছে, সেটা কিন্তু সেই একধারা শেষের দিকে বজায় রাখেনি। আমার শেষের দিকের কয়েকটা পরিচ্ছদ বেশ এলোমেলো মনে হয় বারেবারে। মনের আশ কখনোই মেটে না । শেষের দিকে এলেই মনে হয়, শরৎবাবু খুব তাড়াতাড়ি করে শেষটা গঠন করেছিলেন... শেষটা যেন শেষ করার জন্যই শেষ করা। অপুর্বর মায়ের এমন ইতি... সব্যসাচীর হঠাৎ উধাও সব যেন শেষে গিয়েই গুলিয়ে দেয় আমাকে!!!! আমি শেষ করেও অসম্পূর্ণতায় ভুগি বারবার। হয়ত এর জন্যই বারবার ওই রহস্যাবৃত গভীর উপমায় গঠিত পরিচ্ছদে আবার ঝাঁপ দিই!!
আপনার কী মনে হয় এর শেষ নিয়ে?
রিভিউটি লিখেছেনঃ
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।