পার্থিব - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় Parthib by Shirshendu Mukhopadhyay

পার্থিব - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় Parthib by Shirshendu Mukhopadhyay

উপন্যাসঃ পার্থিব
লেখকঃ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের 'পার্থিব' বইটা যেন আমাদের জীবনের এক কাহিনী। বিষ্ণুপদ,কৃষ্ণজীবন, হেমাঙ্গ, নিমাই এবং চয়ন এই পাঁচটি চরিত্র কে কেন্দ্র করে আরো অনেক চরিত্র আবর্তন করেছে পুরো উপন্যাসটি জুড়ে।
     প্রথমে আসি বিষ্ণুপদ এর কথায়,বিষ্ণুপদ ও নয়নতারার নির্ভেজাল দাম্পত্য জীবনের বর্ণনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উপন্যাসে। বিষ্ণুপাদের তিন ছেলের মধ্যে কৃষ্ণজীবন গ্রামের দারিদ্রতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও পড়াশোনা করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন, সাথে সাথে পরিবেশ বিজ্ঞানী হিসেবে দেশ-বিদেশে তার নাম হয়। কিন্তু তারপরেও তার সেই ছোট্ট বিষ্ণুপুর গ্রামটি তাকে টানে।
  এই উপন্যাসে অন্যতম চরিত্র হেমাঙ্গ আমার এই চরিত্রকে অনেক বেশি ভালো লেগেছে জীবনে একা থাকার ইচ্ছা, ভালবাসার টানা পড়েন এইসব নিয়ে হেমাঙ্গ চরিত্রটি অনেক বেশি উজ্জ্বল,অনেক বেশি স্বতন্ত্র।
    এরপরে আসি বিষ্ণুপদর মেয়ে, বীণাপাণীর স্বামী নিমাই। অভাব যখন বীণাপানিকে লোভী করে তোলে তার স্বামী তখনও তার সততায় অবিচল। সত্যিই কি সততা পারে মানুষকে নতুন করে জীবন দিতে? উপন্যাসটি পড়লে হয়তো তার যথাযথ উত্তর পাওয়া যায়।
    সর্বশেষে আসি উপন্যাসের সবথেকে দুর্বল চরিত্র চয়ন। তবে উপন্যাসটি পড়ার পর আমার মনে হয়েছে চয়ন চরিত্রটি বাস্তবিকই অপরাজেও। যে বারবার ভাঙ্গে কিন্তু মচকায় না একবারও। নয়নতারার মুখে একটি কথা বারবার শুনতে পাই 'কোথাও পালিয়ে পার পাওয়া যায় না, নিজের মাঝেই ডুব দিতে হয়'। ব্যক্তিগতভাবে উপন্যাসটি পড়ার পর আমার মনে হয়েছে এই পাঁচজনের মধ্যে ডুবটা চয়ন দিয়েছিল।
   এছাড়া উপন্যাসে এই পাঁচ চরিত্র ছাড়াও অনেক চরিত্র আছে যারা এদের আশেপাশে আবর্তিত হয়েছে, যারা কখনো কখনো এদের পাশে দাঁড়িয়েছে কখনো কখনো এদের কাছ থেকে সরে গেছে। কিন্তু সেই চরিত্রগুলো মুখ্য চরিত্রদের থেকে কোন অংশে কম নয়।
   সবশেষে বলতে পারি উপন্যাসটি পড়ার সময় যেন চরিত্রগুলো সবকটি জীবন্ত  মনে হয়েছে। ওদের হাসি যেন আমার হাসি, ওদের কষ্ট যেন আমার কষ্ট, ওদের বেঁচে থাকাটার মাঝে যেন আমিও বেঁচে আছি। উপন্যাসটি ধরার আগে মনে হয়েছিল কতদিন লাগবে শেষ করতে, কিন্তু শেষ করার পর মনে হয়েছে কেন শেষ হয়ে গেল। সত্যিই অসাধারণ একটি উপন্যাস।

Post a Comment

0 Comments