মহানগর
ওয়েব সিরিজ (হইচই)
মোট আটটা পর্ব (আনুমানিক ২৫ মিনিট করে)
পরিচালনা আশফাক নিপুন
কষ্টনীড় এই পরিচালকেরই সিনেমা বেশি লোক দেখেছেন কি না জানি না, তবে দেখতে পারেন। তবে এটা হয়ত অনেক বেশি লোক দেখবে এটা নিশ্চিত। অভিনেতা যেমন একদিনে তৈরী হয় না, তেমনি পরিচালকও।
এই ওয়েব সিরিজের কাহিনী হল বাংলাদেশের কোতোয়ালি থানাকে কেন্দ্র করে, এক রাতের কাহিনী।
কাহিনী যত কম বলব আপনি যখন দেখবেন তত বেশি উপভোগ করবেন। আর প্রতিটা এপিসোড এমন জায়গায় শেষ হয়, সেটা থ্রিলারের মজাটা টানটান রাখে, শেষ এপিসোডেও একের পর এক টুইস্ট চলতে থাকে শেষ মিনিট পর্যন্ত, পরিচালক পরবর্তী সিজেনের কথা শেষে জানিয়েছেন, এখন থেকেই দিনগোনা শুরু হোক। প্রতিটা চরিত্রের গঠন হোক বা দুটি চরিত্রের টানাপোড়েন খুব সুন্দর ভাবে চিত্রায়িত হয়েছে পুরো সিরিজ জুড়ে। সিরিজের কাহিনী এমন যে পৃথিবীর যে প্রান্তে বসেই দেখুন না কেন মনে হবে যে এই কাহিনী আপনার জানা, চরম বাস্তব কাহিনী। কিন্তু না পরিচালকের নিজস্বতা এই কাহিনীকে অন্য লেভেলে পৌঁছে দিয়েছে।
সিরিজের থেকে পছন্দের ডায়লগ -
১. ক্রিমিনাল আর টাকা যদি থাকে নসিবে
এমনি এমনি আসিবে
২. ভূতের সাথে পাল্লা দিতে গেলে মাঝেমধ্যে নিজেরও ভূত সাজা লাগে
এই সিরিজের ডায়লগ, এডিটিং, অভিনয়, প্লট টুইস্ট, কালার, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর আন্তর্জাতিক মানের। সেট ডিজাইন, ক্যামেরার কাজও ত্রুটিমুক্ত।
নাসিরুদ্দিন খান নামটা সম্ভবত যদি ভুল না করি একটা পার্শ্ববর্তী চরিত্রে খুব অল্পসময়ে দেখা যায় থানায় আসামীর চরিত্রে, এক কথায় ফাটাফাটি। জানি পুরো ওয়েব সিরিজে মুশাররফ করিম ও শ্যামল মাওলা, নুর ইমরান, মোমো এদের অভিনয় নিয়ে সবাই আগে কথা বলবে, এরা প্রত্যকে নিজের সেরাটা দিয়েছেন। কিন্তু খুব অল্প সময়ে অভিনয়ে দর্শকের মনে জায়গা পাবে নাসিরুদ্দিন খান, তাই আমি তার নামটা আগেই নিলাম, পুরো সিরিজের যে টুকু কমেডি আছে পুরোটাই তার কুক্ষিগত। এছাড়া প্রতিটি সহকারী অভিনেতারা এক কথায় অসামান্য।
বাংলা আমার মাতৃভাষা, বাংলা ভাষায় তৈরী সিনেমা বা ওয়েবসিরিজ গুরুত্বটাও আলাদা, সেটা আমাদের দেশের হোক বা ওপার বাংলার। সমস্যা হল ভালো কিছু দেখলেই নিজের মনে অজান্তেই একটা তুলনা চলে আসে। তুলনার প্রসঙ্গে বলব জলের স্বাদ বা মাটির গন্ধ যেমন প্রতি স্থানে আলাদা হয়, দুটি জায়গার মধ্যে আপনি পার্থক্য অনুভব করেন, তেমনি ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর এপার আর ওপারের মধ্যে একটা সুস্পষ্ট পার্থক্য বর্তমান, তেমনি সহকারী অভিনেতাদের অভিনয় মানের একটা উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়। এপার না ওপার বাংলা কে এগিয়ে বা পিছিয়ে সেটা অন্য প্রসঙ্গ পার্থক্যটা বারংবার উপলব্ধি করেছি তা সেটা তাকদীর হোক বা মহানগর।
আশফাক নিপুনের পরিচালনায় পরবর্তী কাজ দেখার আগ্রহ কয়েকগুন বেড়ে গেছে কষ্টনীড় হয়ে মহানগর দেখে।
রাত জেগে দেখাটা সার্থক হলো, আমার মতো ল্যাদখোর পাবলিকও রিভিউ না লিখে পারল না।
রিভিউটি লিখেছেনঃ
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।