ইতি তোমার মা - সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় Iti Tomar Ma by Sanjib Chattopadhyay

ইতি তোমার মা - সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় Iti Tomar Ma by Sanjib Chattopadhyay

ইতি তোমার মা 
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় 


শেষ করলাম সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ইতি তোমার মা বইটি। কিছু কিছু বই পড়ার পর তার রেশ থেকে যায়। বর্তমান কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে শুধু টাকা উপার্জন করা বা বড় কোনও পদে চাকরি করলেই আমরা তাকে সফল জীবন বলতে পারি না। একটা সফল জীবন পেতে গেলে পুড়ে শক্ত আর পবিত্র হতে হয়! জীবনে যত বাঁধাই আসুক না কেন, যত কঠিন সময়ই আসুক না কেন, দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করতে শেখায় এই বইটি। আর সেই লড়াই এর পিছনে মা বাবার অবদানটা... না অবদান নয়, তাঁদের শেখানো পথেই আমরা আমাদের জীবনের সংগ্রাম টা শুরু করি! গল্প টা পড়তে পড়তে শেষের দিকে এসে চোখের কোণে জল জমতে বাধ্য! উক্ত ঘটনা টিই লেখকের জীবনের সবচেয়ে বড়ো পরীক্ষা! আর গল্পের শেষে থাকে তাঁর মায়ের তরফ থেকে একটা চিঠি... আমরা অনেকেই হয়তো আমাদের মা বাবার মনের অবস্থা বুঝতে না পেরে তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ফেলি কিন্তু দিনের শেষে তাদেরকেও বোঝা দরকার! বইটা আমাকে অনেকটা নাড়িয়ে দিয়েছিল!

জীবনের সমস্যা দূর করতে চাইলে এই বই পড়াই যায়...

রিভিউটি লিখেছেনঃ S S 

review
উপন্যাস - ইতি তোমার মা লেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
ছোটবেলা থেকে বই পড়াটা প্রাত্যহিক জীবনের অঙ্গ ছিল। সকালে উঠে ব্রাশ করা, টয়লেট করার মতন স্বাভাবিক একটা দৈনন্দিন কাজ। এখনো তাইই আছে। এমন একটা দিন মনে করতে পারিনা, যেদিন ছাপার অক্ষরে কোন না কোন বই সারাদিনে একবারও খুলিনি। ছোট থেকেই সবাই বইপাগলা বলতো। পুজোয় সবাই যে টাকা দিত তাই দিয়ে বই কিনতাম। জামাকাপড় কেনার প্রতি কোনদিন সেরকম আগ্রহ ছিলো। না। মাকেও দেখতাম দিনরাত্তির পড়তে। আমিও সেটাই আয়ত্ত করে নিয়েছিলাম। ক্লাস ওয়ানে যখন পড়তে শিখে গেছি তখন থেকেই কোথাও বেড়াতে গেলে মা একটা বই কিনে দিত সেটা ট্রেনে পড়তে পড়তে চলে যেতাম। আজকাল যেভাবে মানুষ গান শুনতে শুনতে যায় সেরকমই কতকটা। আজকালকার ছেলেমেয়েরা চিপস পপকর্ন খেতে খেতে সিনেমা দেখে। আমরা এইসব পছন্দের খাবার নিয়ে একটা বই বগলে করে বসতাম বৃষ্টির দিনে। আহা সেসব দিন ছিলো।
পড়ার বইয়ের বাইরে গল্পের বইয়ের দুনিয়াটা এভাবেই অল্প অল্প করে খুলে যাচ্ছিল আমার সামনে। ফেলুদা, ঘনাদা, টেনিদার সঙ্গে সঙ্গে রুশ দেশের উপকথা, পারস্যের উপকথারাও জায়গা পেতে থাকে আমার বইয়ের আলমারিতে। হাতে আসে আঙ্কল টমস কেবিন, গালিভার্স ট্রাভেলস, গ্রী মাস্কেটিয়ার্স, হাঞ্চব্যাক অফ নরদ্যাম, ডন কুইক্সোট। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর সাথে পরিচয় হয়। এবং পরিচয় ঝাড়তে থাকে। বছরে যতগুলো অকেশন ততবার বই গিফট দিত মা দাদু বা জেঠু এলে যাওয়ার সময় বলতো কি নিবি? আবদার করে বলতাম একটা বই কিনে দিয়ে যাও।
মা বলত বড়দের বই ছোটদের বই বলে কিছু হয়না। সব পড়তে হবে। কিচছু বাদ দেওয়া যাবেনা। যেটা বুঝবি না সেটা রেখে দিবি কদিন পরে আবার পড়বি। ব্যাস আমি চোখের বালি, বিষবৃক্ষ লাইন দিয়ে পড়ে ফেললাম। খুব ভালো বুঝিনি কিন্তু পড়ে ফেলেছি। এরপর প্রথম সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের সাথে আলাপ। কেউ একটা রসেবশে দিয়েছিল। পড়ে মুগ্ধ হলাম। মায়ের কাছে বায়না শুরু হলো বাকিগুলো কিনে দাও। আরো পড়ব। এই অভ্যেসটাও মায়ের থেকে পাওয়া। একজন লেখকের একটা বই পড়ে ভাল লাগলে কেমন নেশা লেগে যেতো। পরপর তারই বই পড়তে থাকতাম। কেনার সামর্থ্য ছিল না। অন্যের থেকে বা লাইব্রেরী থেকে এনে পড়তাম। এই সময় মৃদুলা মাসী ইতি তোমার মা' বইটা আমাকে গিফট করেন। স্কুলে ফার্স্ট হওয়ার উপহার। আমাদের সময়ে এগুলো প্রচলিত ছিল। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে বইই দেওয়া হতো। অন্য কিছু নয়।
এত সাবলীল লেখা। আর এ যেন আমারই বাবা মায়ের গল্প। এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম। এর আগে অন্য কোনো বই যেন আমার ছোটবেলাটাকে এরকম আপাদমস্তক নাড়িয়ে দিতে পারেনি। আঙ্কল টমস কেবিন পড়েও খুব দুঃখ হয়েছিল। কিন্তু কোন গল্পে মা মরে যাচ্ছে এটা আমি মেনে নিতে পারিনি কোনভাবেই। এক অসীম মনোকষ্টে ভুগেছি কটা দিন। তখন জানতাম না এই ফিলিংটাকে কী বলে। আজকে বুঝি। কিন্তু বই আছে যেগুলো মানুষকে ট্রমাতে নিয়ে যেতে পারে যে কোন সময়। এরকম বইগুলো আছে বলে পড়া থামাতে পারিনা। এরকমও লেখা যায়?

বইয়ের চেয়ে ভালো কোনো গিফট হতে পারে এ আমি আজও মানি না। সবাইকে বই দিয়ে উঠতে পারিনা। জানি পড়বেনা। সবার ভালোবাসাগুলো তো একরকম হয়না। বইয়ের পৃথিবীটা একদম আলাদা। সেখানে একা একা দিব্যি বেঁচেবর্তে থাকা যায়। বহুবার বহু মানুষকে বই সাজেস্ট করেছি। আমার খুব চেনা জানা কিছু কষ্টে থাকা মানুষকে মনখারাপ থেকে আলোর রাস্তা দেখিয়েছে কিছু মন ভালো করা বই। এই বইটা এখনও পছন্দের তালিকায় শুরুর দিকে থাকে। যারা এখনো পড়েন নি, পড়ে দেখতে পারেন।

রিভিউটি লিখেছেনঃ Aphrodite

Post a Comment

0 Comments