ইনজুরি টাইম - দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায় Injury Time by Debanjan Mukhopadhyay

ইনজুরি টাইম - দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায় Injury Time by Debanjan Mukhopadhyay

বইয়ের নাম - ইনজুরি টাইম
লেখকের নাম - দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায়

লেখকের সাথে প্রথম পরিচয় "মায়াবিনীর ম্যানিকুইন" বইটির হাত ধরে। ওই বইটি পড়ে বেশ তৃপ্তি পেয়েছিলাম। আর সেই তৃপ্তির কথা মাথায় রেখেই যখন "ইনজুরি টাইম" বইটি হতে পেলাম, এতটুকু সময় নষ্ট না করে পড়ে ফেললাম।

বইটি আসলে একটি পলিটিক্যাল থ্রিলার। বইটির মধ্যে যেমন রাজনীতি রয়েছে, তেমনই আবার রয়েছে Terrorism. আর এই সবকিছুর সাথে জড়িয়ে রয়েছে ফুটবল, ঠিক গোলপোস্টের জালের মতন।

আসলে একটা গোটা গল্পের মধ্যে অনেকগুলো ছোট ছোট গল্পঃ একসাথে চলেছে। যেমন এক কিশোরের প্রাণনাশের হুমকি, ভয়াবহ বিস্ফোরণ, সীমান্তে জালনোট এবং ড্রাগস পাচার, আততায়ীর হাতে সেলিব্রিটির খুন, অ্যাসিড ভিক্টিমের লড়াই - সবকিছু মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে গল্প। আর সেই কারণে অসংখ্য চরিত্রের উপস্থিতিও দেখা যায়।

এতোগুলো ঘটনা, এতগুলো চরিত্র হয়তো সব একসাথে একটু ঘেঁটে গেলেও সবমিলিয়ে বলা যায় এই বইটি পড়ে আগের বইটির থেকেও বেশি তৃপ্ত হলাম। বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এইরকম উপন্যাস খুব বেশি লেখা হয়েছে বলে অন্তত আমার মনে হয় না।

রিভিউটি লিখেছেনঃ 

#review
পাঠ প্রতিক্রিয়া - ইনজুরি টাইম
লেখক - দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায়

===========================

ফুটবল খেলার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চোট- আঘাতজনিত বিভিন্ন ঘটনার কারণে যখন কিছুটা সময় নষ্ট হয়, তখন খেলার নির্ধারিত সময়ের পরেও বাড়তি কিছুটা সময় দেন রেফারি, খেলা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এই বাড়তি সময়টুকুই পরিচিত 'ইনজুরি টাইম' হিসেবে। তা বলে এই উপন্যাস কিন্তু ফুটবল খেলা কেন্দ্রিক কোনো উপন্যাস নয়! এই উপন্যাস এক থ্রিলার, যার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে সন্ত্রাসবাদের ভয়াবহতা, দেখা যাবে কিভাবে সন্ত্রাসবাদীরা প্রয়োজনে রাজনীতিকেও নিজেদের হাতিয়ার বানিয়ে নিতে পারে! তবে হ্যাঁ, পুরো উপন্যাসে ফুটবলেরও ভূমিকা যথেষ্ট, যা উপন্যাস পড়লেই বোঝা যাবে।
এছাড়াও আছে কিছু সাহসী মানুষের কথা, যাঁদের মধ্যে কেউ সমাজের বিরুদ্ধে গিয়েও, রাজনীতির বিরুদ্ধে গিয়েও অন্যায়ের প্রতিবাদে সোচ্চার হতে পারেন, কেউ বা নিজের চরম ক্ষতি, নিজের ওপর ঘটে যাওয়া চরম অবিচারকেও অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা দেখায় কোনোকিছুকে তোয়াক্কা না করে। এরকম বেশ কিছু চরিত্র এই উপন্যাসে পাঠকের মন জিতে নেবে।
এই উপন্যাসের প্রথমেই দেখা যাবে পল্টু নামের একটি ওপার বাংলার স্কুল-পড়ুয়া ছেলেকে, যে কলকাতার একটি হোমে থাকে, বা বলা ভালো তার বাবা-মা তাকে এখানে রাখতে বাধ্য হয়েছেন কিছু সাংঘাতিক মানুষের থেকে তাকে আড়ালে রাখার জন্য। এই পল্টুর জীবনে এমন একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে একসময়, যা তার জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। সারাদিন ভালো থাকলেও রাত্রিবেলা প্রায়শই খারাপ স্বপ্নে তার ঘুম ভেঙে যায়, তার জীবনে ঘটা কিছু ঘটনা তাকে এখনো ঘুমের মধ্যে তাড়া করে। এর মধ্যেই প্রিয় বন্ধু দীপেশের সঙ্গে গরমের ছুটিতে সে আসে মালদায়, বন্ধুর মাসির বাড়ি, ছুটি কাটাতে। এখানে এসে সে পরিচিত হয় দীপেশের মাসতুতো দাদা এবং তার ফুটবল টিমের বন্ধুদের সাথে। বিশেষ করে সেই ফুটবল টিমের কোচ তাদের সবার মন জয় করে নেয়। সামনেই তাদের বড় ম্যাচ! কি হবে সেই ম্যাচে? সেই নিয়েই উত্তেজিত সবাই। কিন্তু সেই উত্তেজনার মধ্যেই কি চারিদিকে খুব সূক্ষ্ম কিছু পরিবর্তন ঘটে চলেছে? সামনে কি অপেক্ষা করছে বড় কোনো ঝড়? কেন 'ন্যাশনাল অ্যান্টি টেররিস্ট সেল' আশঙ্কা করছে বড় কোনো দুর্ঘটনার? কেন হত্যা করা হলো অভিনেত্রী আয়েশা সুলতানাকে? এইসব বিভিন্ন ঘটনার পেছনের মূল মাথাদের অবশেষে কি ধরতে পারা যাবে? ফুটবল খেলার 'ইনজুরি টাইম'-এর মত এই ভয়ঙ্কর খেলার শেষ মুহূর্তে বাজিমাত করবে কোন দল? অন্যদিকে যে ফুটবল খেলা ঘিরে এত উত্তেজনা, দীপেশের দাদার টিম কি সেই টুর্নামেন্ট জিততে পারলো শেষ পর্যন্ত? পরিচিত বিভিন্ন চরিত্রগুলোর আড়ালে আসলে আত্মগোপন করে আছে কারা?
টানটান উত্তেজনাপূর্ণ একটা উপন্যাস। বেশ ভালো লাগলো পড়ে। বিশেষ করে থ্রিলারপ্রেমীদের এই উপন্যাস অবশ্যই ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস।
রিভিউটি লিখেছেনঃ শায়নী 

Post a Comment

0 Comments