দেশে বিদেশে - সৈয়দ মুজতবা আলী Deshe Bideshe by Syed Mujtaba Ali

দেশে বিদেশে - সৈয়দ মুজতবা আলী Deshe Bideshe by Syed Mujtaba Ali

দেশে বিদেশে 1948 
সৈয়দ মুজতবা আলী 

এটা যতটা না রিভিউ, তার থেকে অনেক বেশি স্মৃতি রোমন্থন। তবুও প্রশ্ন থেকেই যায় যে আজকে দেশে বিদেশে নিয়ে টানাটানি করতে হচ্ছে কেন। টপিক্যাল থাকার ইচ্ছে? নাকি সিউডো আঁতলামির আদিখ্যেতা! যাই হোক না কেন, আমার কাছে আফগানিস্তানের আর কোনো রেফারেন্স বা স্মৃতি নেই, ব্লগট্লগ আর খবরের কাগজ সবকিছু মিলিয়ে।

আফগানিস্তান কেন, আমি নিজে আর কোনো ভ্রমণকাহিনী পড়িনি যেটা একসাথে এতখানি ইনফো আর তার থেকেও বেশি হাস্যরস পরিবেশন করবে। কমেডি [মিলনাত্মক নয়, হাস্যরসাত্মক] সারাজীবনই আমার একটা খুব প্রিয় জেনার, তার উপর আবার পুরো বইটাতেই সেটা থৈ থৈ করছে। আমাদের সিলেবাসে ওই বাস জার্নির অংশটুকু পাঠ্য ছিল, আর অশোক স্যারও পড়ানোর সময় খুব বোঝাতেন যে আর কিছু পড়ি না পড়ি যেন দেশে বিদেশেটা মিস না করি। এদিকে তখন ঋজুদা পড়া শেষ করেছি যেখানে বুদ্ধদেব গুহ বারবার মুজতবা আলীর রেফারেন্স টানতেন, আর মা-বন্নার কাছে তো কত শুনেছি এ নাকি একসময় দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক হিসেবে বের হতো।  আর যখন পড়তে শুরু করি, অনপুটডাউনেবল কথাটার মানে সেই প্রথমবারের মতো বুঝতে পারলাম।

আমি জানি না কী কী নিয়ে বলবো এখানে। সেই আব্দুর রহমান থেকে শুরু করতে হয়। তারপরে আরবী ফার্সী কবিতার অসাধারণ সব বঙ্গানুবাদ যেগুলো মুজতবা আলী এদিক ওদিক থেকে টুকেছেন [এইটুকু খিল্লি করার অধিকার তো ওনার থেকেই পাওয়া, ও শেখা]। বাজারের, আড্ডার আর রাস্তার বর্ণনা নিয়ে তো আলাদা একটা সেমিনার করা যায়। আর খাবারদাবার নিয়ে কী বলি, ঘ্রানেণ অর্দ্ধ ভোজন হলে এই লেখা থেকে অন্তত কোয়ার্টার ভোজনের স্বাদ পাওয়া যায়।

আমি জানি লেখাটেখা সব গুলিয়ে গেছে অলরেডি। এই বইটাকে আমি বাঙলা সাহিত্যের টপ টেনের মধ্যে ধরি তো, তাই কীভাবে আমার অ-টাকে প্রকাশ করবো সেই বুঝে পাচ্ছি না। এমনকী এইরকম সমালোচনাও শুনেছি যে এতটা সুগারকোট করে বিদেশভ্রমণ লেখা নাকি খুব একটা সৎ প্রচেষ্টা নয়। একসময় আমারও, শবনম পড়ে টড়ে [দেশে বিদেশের পর আমি ওনার সবকটা বই জোগাড় করা শুরু করি], মনে হতো এইসব চরিত্রদের একেটা গল্পে পুরোই আবডাল দিয়ে রাখার মানে কী। যাই হোক, দেখুন তো গল্পটাই বলা হলো না।

এটাকে ভ্রমণকাহিনী-রম্যরচনা বলাই যেতে পারে, আফগানিস্তানে লেখকের যাত্রা ও জীবনের বর্ণনা দিয়ে। এটুকু বললে শুধু কিছুই যে বলা হয় না তাইই নয়, বরং কিছুটা মিসলিডিং-ও হতে পারে - তাই যে যে পড়েনি সবাইকে অনুরোধ করবো আমার এই হাবিজাবি লেখায় পরের মুখের ঝাল না খেয়ে নিজে একটু দুপুরবেলার দিকে বিছানার উপরে বসে বইটা স্টার্ট করুন। ঝাল নিয়েও তো কত গল্প আছে, রবীন্দ্রনাথ কেন তুষারপাত নিয়ে কিছু লেখেননি তার ব্যাখ্যাও। ভলতেয়ারের চুটকি, বিদেশে না গেলে কেন নিজের দেশকে চেনা যায় না সেই শিক্ষাও। যদি বই পড়েন এবং মুজতবা আলী/দেশে বিদেশে কোনোভাবে স্কিপ করে গেছেন, তাহলে একবার বইটা চেটেপুটে খাওয়া অবশ্যকর্তব্য; জয় কড়াকপিঙ।

রিভিউটি লিখেছেনঃ পলতার বাবাই

Post a Comment

0 Comments