আসা যাওয়ার মাঝে (ʟᴀʙᴏᴜʀ ᴏꜰ ʟᴏᴠᴇ) ২০১৪ : আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত

আসা যাওয়ার মাঝে (ʟᴀʙᴏᴜʀ ᴏꜰ ʟᴏᴠᴇ) ২০১৪ : আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত

সিনেমা : আসা যাওয়ার মাঝে (ʟᴀʙᴏᴜʀ ᴏꜰ ʟᴏᴠᴇ) ২০১৪
পরিচালক : আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত

❖ ᴛʜᴇ ᴀᴅᴠᴇɴᴛᴜʀᴇꜱ ᴏꜰ ᴍᴀʀʀɪᴇᴅ ᴄᴏᴜᴘʟᴇ শিরোনামের একটি ছোট গল্প থেকে মূল ভাবনা নিয়ে সিনেমা। এই সিনেমায় পরিচালক শুধু পরিচালক নন তিনি একাধারে কাহিনীকার, পরিচালক, এডিটর ও চিত্রগ্রাহক। বর্তমান সময়ের স্ব-খ্যাত, প্রখ্যাত বা বিখ্যাত পরিচালকদের তালিকার বাইরের যে কিছু আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন পরিচালক আছেন এই বাংলাতেই তাদের মধ্যে আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত অন্যতম। 

❖ যে কোনো শৈল্পিক মাধ্যমকে বিচারের মানদণ্ড তার প্রাপ্ত সমালোচনা বা পুরস্কার নয়, কিন্তু একটি সিনেমা দেশে বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় যখন সমাদৃত হয় তখন পুরস্কারের তালিকাও ততটাই দীর্ঘ হয়, উল্লেখ্য যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে সর্বমোট ১০টি বা তারও বেশী পুরস্কার পেয়েছে এই সিনেমা বিভিন্ন বিভাগে।

❖ সিনেমার রিভিউ কোনো ছকে বাধা সম্ভব নয়। যেখানে পরিচালক নিজে সব ছক ভাঙা ভঙ্গিতে পুরো সিনেমা পরিবেশন করেছেন, সেই সিনেমার রিভিউ কিন্তু শুধু আমার কাছে সিনেমার রিভিউ নয় পরিচালকেরও রিভিউ।
    
❖ সিনেমার যে সমস্ত জিনিসগুলি আমাকে সবথেকে বেশী মুগ্ধ করেছে তা সেগুলি হল - 

 ১. ক্যামেরার কাজ, স্লো মোশন হোক বা টাইম ল্যাপ্স, বিশেষ করে প্যান শর্ট গুলি অসাধারন। পুরো সিনেমায় এক অন্য ধরনের ক্যামেরার কাজ, স্লো মুভ গুলি আপনাকে ভাবাবেই, প্রতিটা সিনের গুরুত্ব অনুভবের জন্য যে সময় টুকু দেওয়া হয়েছে তা অনেকের কাছে অযাচিত মনে হতে পারে কিন্তু ডিটেইলস গুলি আত্মস্থ করতে সেইটুকু সময়ের দাবি রাখে ফ্রেমগুলি, সেগুলি ডিকোড করতে পারলেই সিনেমার আলাদা রস আস্বাদন সম্ভব।

২. পরিচালক যে এক জন দক্ষ পর্যবেক্ষক সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত বিভিন্ন দৃশ্যে তার প্রমান মেলে। সিনেমার সেটের ডিজাইন ও তার ডিটেলিং এবং আবহ সঙ্গীতে ব্যবহৃত গান বা শহর কোলকাতার ভোর, সকাল, দুপুর, বিকাল বা সন্ধ্যাবেলা বোঝাতে সে সমস্ত ফ্রেম এবং তার সঙ্গে তালমিলিয়ে শব্দের ডিটেলিং এর মেলবন্ধন অতুলনীয়। যা কখনই অতিরঞ্জিত নয়, পরিচালকের দক্ষতার পরিচায়ক।

৩. সিনেমার হাই এন্ড লো পয়েন্টে সংলাপের একটা ভূমিকা থাকে, এখানে পুরো সিনেমাটায় সংলাপ অনুপস্থিত ; কিন্তু সংলাপের খামতি অনুভূত হবেই না একবারও আবহ সঙ্গীতের জন্য, যা প্রশংসার দাবি রাখে। সংলাপ না থাকলেও পরিচালকের নিখুঁত হাতে আবহ সঙ্গীতের ব্যবহার দর্শককে সম্মোহিত করবে।

৪. সিনেমায় যে ব্ল্যাক আর গ্রে কালার টোন ব্যবহার হয়েছে তা বেশ আকর্ষনীয় লেগেছে আমার কাছে। এছাড়া মিনিমাম আলোর ব্যবহার, যেখানে কৃত্রিম আলোর বাড় বাড়ন্ত চারিদিকে সেখানে পুরো সিনেমায় কৃত্রিম আলোকে দূরে সরিয়ে পরিচালক স্রোতের বিপরীতে হেঁটে, নিজস্বতার একটা ছাপ ফেলেছেন। 

 ৫. এর বাইরেও অভিনেতা চয়নে পরিচালক দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন তা উল্লেখযোগ্য। আগামী কয়েক দশক পরেও সিনেমাটা শুধু পরিচালকের গুনে নয় দুই মুখ্য চিরত্রাভিনেতা ঋত্বিক ও বাসবদত্তার সহজ সরল সাবলীলতার জন্যও মানুষ সমানভাবে মনে রাখবেন, বাংলা সিনেমার জগতে আসা যাওয়ার মাঝে আদিত্যবাবুর স্বাক্ষরিত এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থেকে যাবে।

⚫️  এবার বলি একটি ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষনের কথা, এখনকার যুগের যে কোনো সিনেমাই যেন মাদক ছাড়া অসম্পূর্ণ। তা সে সিগারেট, মদ, গাজা বা আরো কতো কি। সিনেমায় মাদকদ্রব্যকে রোমান্টিসাইজ করা আজ প্রায় ফ্যাশনে পরিনত , সেখানে এই সিনেমায় কোথাও নীচে লিখে দিতে হয়নি স্বাস্থ্য সম্পর্কে সতর্কবানী। এগুলো ছাড়াও একটা সিনেমা বা বাস্তবের অস্তিত্ব সম্ভব তা আদিত্যবাবু প্রমান করে দিলেন, কুর্নিশ আপনাকে। প্রশ্ন হল আপনি শেষ কোন বাংলা সিনেমায় এমন দেখেছেন একটু নিজেকে প্রশ্ন করুন। সব পরিচালকের নিজস্বতা থাকে তার বাইরে এই জিনিসটা আমাকে ভাবিয়েছে, সেখান থেকেই প্রশ্নটা নিজেকে অনেক বার করেছি কিন্তু সেরকম কোনো গ্রহনযোগ্য উওর নিজেকে দিতে পারি নি। সিনেমা আর ক্রাইম এখন প্রায় এখন সমার্থক শব্দ সেখানে এত সহজ সরল বিষয় উপস্হাপন আর ক্রাইম কে দূরে সরিয়ে সফলতার মুখ দেখা, পুরোটাই পরিচালকের কৃতিত্ব।

⚫️  সিনেমার  ত্রুটি; পরিচালক দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য যে ডিটেলিং রেখেছেন তা সবাইকে সমানভাবে আন্দোলিত করবে তা নয়। যারা একটু ফাস্ট বা ঘটনাবহুল সিনেমা দেখতে পছন্দ করবেন তাদের জন্য নয় সিনোটি। এই সিনেমা একটি নির্দিষ্ট সময়কালের অনামী মধ্যবিও এক দম্পতির দৈনন্দিন  জীবনযাত্রার অনবদ্য দলিল হিসাবে আজীবন বিরাজ করবে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে। মূলধারা থেকে সরে গিয়ে নতুন কোনো পরীক্ষামূলক কাজের ফসল এই সিনেমা , তবুও দেখে একবারের জন্যও মনে হয়নি এটিই পরিচালকের প্রথম সিনেমা। প্রথম সিনেমাতেই তিনি পরিচালনায় সাহসীকতা ও পরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছেন।

রিভিউটি লিখেছেনঃ ᴀʜɪ

Post a Comment

0 Comments