নাম: শেষ বিকেলের মেয়ে
লেখক: জহির রায়হান
জনরা: রোমান্টিক উপন্যাস
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
প্রকাশনী: অনুপম
"আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি..."
'শেষ বিকেলের মেয়ে' বইটি পড়তে পড়তে মনের অজান্তেই এই লাইনগুলো মুখে চলে এসেছে। যারা বইটা পড়েছেন তারা বুঝতে পারবেন কারণটা। যাই হোক, গান রেখে ফিরে যাই বইতে।
'আকাশের রঙ বুঝি বারবার বদলায়। কখনো নীল। কখনো হলুদ।' এমন চমৎকার লাইন দিয়ে শুরু 'শেষ বিকেলের মেয়ে' উপন্যাসটি। আকাশের রঙের মতো মানুষের মনও বদলায়। জীবনের চলার পথে কত মানুষ আসে, এদের সবাই কি শেষ পর্যন্ত থাকে? এসব মানুষেরা আমাদের জীবনে আসে, স্বপ্ন দেখায়। তারপর হারিয়ে যায়।
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কাসেদের জীবনেও এমন হয়েছিল।
কাসেদ পেশায় একজন সামান্য কেরানি। অল্পবিস্তর কবিতা লেখার শখও আছে তার। মা আর দুঃসম্পর্কের এক বোন নাহারকে নিয়ে তার সংসার।
কাসেদ জাহানারা নামে একজন শিক্ষিত, আধুনিক মেয়েকে ভালোবাসে ও বিয়ে করতে চায়। জাহানারাও কাসেদকে ভালোবাসে বলে মনে হয় কিন্তু কেউই সেটা প্রকাশ করে না।
জাহানারা জন্মদিনের দাওয়াত খেতে গিয়ে পরিচয় হয় জাহানারার কাজিন শিউলির সাথে।
এর মধ্যেই গল্পে হাজির হয় কাসেদের খালাতো বোন সালমা, সে ছোটবেলা থেকেই মনে প্রাণে কাসেদকে ভালোবাসে।এদিকে অফিসের কলিগ মকবুল সাহেবের মেয়েকে এক বিকেলে দেখে মনে ভালো লাগার উদ্রেক সৃষ্টি হয় কাসেদের।
এভাবে নানা মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় গল্প এগোয় সামনের দিকে। হঠাৎ কাসেদের মা অসুস্থ হয়ে মারা যান। নাহারের বিয়ে দেওয়ার জন্য কাসেদের খালু এসে নাহারকে নিয়ে গেলে এক মুহূর্তে কাসেদের পৃথিবী শূন্য হয়ে যায়।
শেষ বিকেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে যখন সে নানা কথা ভাবতে থাকে তখন দরজায় শব্দ হয়। কে??
শেষ বিকেলের মেয়ে এসেছে তার কাছে?
কে সে? জাহানারা? শিউলি? সালমা নাকি মকবুল সাহেবের মেয়ে?
উপন্যাসের সমাপ্তিটা একদম অনেকদিন মনে গেঁথে থাকার মতো। উপন্যাসটির পরিসর সংক্ষিপ্ত হলেও প্রতিটি চরিত্র লেখক জহির রায়হান ফুটিয়ে তুলেছেন নিপুণ হাতে। কোথাও কম, কোথাও বেশি না। সব মিলিয়ে "শেষ বিকেলের মেয়ে" মনে দাগ কাটার মতো একটি উপন্যাস। গতকাল ছিল প্রিয় এই লেখকের জন্মদিন। সেজন্য প্রিয় লেখকের প্রিয় বইটির রিভিউ লেখা, যদিও একদিন দেরি করে ফেলেছি।
শেষ করছি উপন্যাসের ভীষণ পছন্দের দুটি লাইন দিয়ে।
★ মেয়েরা এমনি হয়। তারা যাকে ভালোবাসে তাকে বড় স্বার্থপরের মতো ভালোবাসে।
★ লড়াই শুধু রাজার সঙ্গে রাজার, একজাতের সঙ্গে অন্য জাতের আর এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশেরই হয় না। একটি মনের সঙ্গে অন্য একটি মনেরও লড়াই হয়।
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।