পুতুল নাচের ইতিকথা - মানিক বন্ধ্যোপাধ্যায় Putul Nacher Itikotha by Manik Bandopadhyay

পুতুল নাচের ইতিকথা - মানিক বন্ধ্যোপাধ্যায় Putul Nacher Itikotha by Manik Bandopadhyay

পুতুল নাচের ইতিকথা 
মানিক বন্ধ্যোপাধ্যায় 


আমার বই পড়ার পথ টা অদ্ভুত ভাবেই সৃষ্টি হয়। আমি যে সবসময় বাড়িতে কাউকে গাদা-গুচ্ছের বই পড়তে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের মধ্যে তেমন একটা স্বভাব গড়ে তুলি, ব্যাপারটা তেমন নয়। আসলে ছোটোবেলা থেকে গল্পের মধ্যেই যেন একটা কল্পনার জগৎ খুঁজে নিতাম, আর বাস্তবের থেকে বেশি সেখানকার কোনো একটা চরিত্রে থাকতে আমার খুব ভালো লাগত। ব্যাস এভাবেই পড়ার শুরু, তারপর এখন এমন একটা পর্যায় চলে এসেছে যে, যখন দেখি একটা উপন্যাস শেষ হতে আর কয়েক পাতা বাকি, ঠিক তখনই অন্য আরও একটা উপন্যাসকে ধরে তার কোনো একটা চরিত্রে নিজেকে প্রতিস্থাপিত করে আগের উপন্যাস শেষ করি। এককথায় কাল্পনিক চরিত্র ছাড়া, আমি যেন আর বাঁচতে পারি না। এটা স্বীকার করতে সমস্যা নেই যে, হয়ত এই কারনেই আমি বাইরের মানুষকে ততটা আপন করতে পারিনি। এই চরিত্রগুলোই যেন আমার বন্ধু হয়ে থেকে গেছে, এরাই যেন সব, এভাবেই যেন জীবন কাটানোর একটা সংকল্প। 
আর এই সুবাদে আমি আমার ক্ষুদ্র ২১ বছরের জীবনে একটা ছোট্ট জিনিস, ব্ই সম্পর্কে উপলব্ধি করেছি। যে, সব বই সব বয়সে পাঠ করা যায় না, যদিবা যায়, তার মর্ম ভুলভাল ভাবে মনের কোনে ব্যাখ্যিত হয়। তেমনই একটা বই হল এই "পুতুল নাচের ইতিকথা" সত্যি কথা বলতে এটা আমি এইবার পড়ার আগে প্রায় সাতবার চেষ্টা করেছি পড়তে, কিন্তু নিজের স্থৈর্যের অভাব বলুন বা অল্পজ্ঞান বলুন, এই বইয়ের  কোও লাইনের মর্মার্থই আমার হৃদয়গোচর হত না। এবং সেই ক্লাস ইলেভেন থেকে এটা পড়ব বলে এতবার হোঁচট খেতে খেতে, আজ ছয় বছর পর এটা পড়ে মনে হল যে, আমি এই ব্ই টা পড়ার মত যোগ্যতা এবং স্থৈর্যতা এতদিন পর অর্জন করতে পেরেছি। 
মানিক বাবুর লেখার সাথে যারা পরিচিত আছেন, তারা জানেন যে, তিনি তার কলমে গ্রাম্য জীবন এবং সেখানকার সংস্কার, ভাবনা কী করে ফুটিয়ে তোলেন। এটাও বলতে গেলে ওনার পদ্মানদীর মাঝির মতোই একটা গ্রাম্য জীবনের মনের বিশ্লেষণ নিয়ে গঠিত উপন্যাস, যেখানে শশীর মত কলকাতায় পাশ করা ডাক্তার গ্রামে ফিরে অস্থির  চিত্ততা থেকে কী করে সুস্থির ভাবে গ্রাম্য জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। পড়ালেখা না জানা অজ্ঞ বাবার সাথে মনোমালিন্য, পরকীয়া, একজন গ্রাম্য নারীর প্রথম যৌবনের প্রেম, গ্রাম থেকে এসে প্রথম শহর দর্শন, এবং শহরকে আপন করে নেওয়া ....!!! 
একটা জিনিস এই উপন্যাসে খুব ব্যবধানের আতিসজ্যে গড়া হয়েছ। একদিকে যেমন দেখিয়েছে একটা যুবক ছেলের, শহর থেকে গ্রামে ফিরে অজ্ঞ তথাকথিত মুর্খ মানুষদের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম বোধ করতে, আর একদিকে একটা পড়ালেখা না জানা গ্রাম্য নারীর, প্রেমের টানে শহরে গিয়ে শহরটাকে প্রেমিকের সাথে সাথে ভালোবেসে ফেলতে। 
যারা এই উপন্যাসটি পড়েছেন, তাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে, যারা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচুর লেখা পড়েছেন, তারা কি কেউ বলতে পারেন, এই উপন্যাসের কোনো দ্বিতীয় খন্ড অথবা এই উপন্যাসকে কেন্দ্র করে কোনো ছোট গল্প কী মানিক বাবু লিখে গেছেন? কেননা উনি উপন্যাসের মাঝেই বলেছেন মতির জীবনের পরবর্তী অংশ যদি কখনো লেখার ইচ্ছা হয়, তবে তিনি তা পরে কোনো গল্প বা উপন্যাসে লিখবেন। কিন্তু এই উপন্যাসে আর লেখননি। তাই বলছি, কারুর যদি জানা থাকে, তবে দয়া করে বলবেন।

রিভিউটি লিখেছেনঃ সংশপ্তক

Post a Comment

0 Comments