নামঃ ষ / পেট কাটা ষ
ডিরেক্টর: নুহাশ হুমায়ূন
প্ল্যাটফর্ম : চরকি
আগ্রহটা শুধুমাত্র এই কারণে হয়নি যে হুমায়ূন আহমেদের ছেলের কাজ প্রথম দেখবো বলে। 'মশারি' খুঁজেছিলাম, পাইনি। পোষ্ট-এ্যাপোক্যালিপ্টিক বাংলাদেশ কে যে তরুণ বাঙালি পরিচালক, স্বল্প সামর্থ্যে আর দারুণ আয়াসে, রূপোলী পর্দায়ে দেখানোর ধক দেখাতে পারেন, তাঁর কাজের প্রতি বিস্ময়, শ্রদ্ধা, ইত্যাদি বাদেও যেটা সবার আগে আসে, তা হোলো একটা দুর্নিবার আগ্রহ। পেট কাটা ষ রিলিজের পর তাই মুখিয়ে ছিলাম কাজটা দেখার জন্য।
হরর জঁর-এ এযাবৎকালে দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, মিশর, স্পেন এবং অবশ্যই হলিউডের কারখানাজাত কিছু ছবি মনে দাগ রেখে গেছে। থাইল্যান্ডের মামদো থেকে মার্কিনী ডাইনিদের দেখতে দেখতে ভয় পেয়েছি ঠিকই। কিন্তু সিনেমা শেষ হলেই মনে হয়েছে, যাক্ বাবা! এইসব গপ্পো অনেক দূরের। আমি এইখানে বেশ নিরাপদ। আর এই নিরাপত্তার আলগা আবেশটাকেই নড়বড়ে করে স্যাঁতস্যাঁতে একটা পুরোনো ভয়কে চাগাড় দিয়ে তুলে এনেছেন নুহাশ। ছেলেবেলায় যে গল্পগুলো শুনে ভয়ে কুঁকড়ে যেতুম সেইসব ভয়ের একটা আলাদা শিকড় আজও আমাদের গহীনে ঘাপটি মেরে আছে। সেসব ভয় আদিম। নিরাবরণ। ঘুমের মধ্যে কাঁদিয়ে দিতে পারে, পারে প্রতিদিনের চেনা ঘরের কোণে সাক্ষাৎ শয়তানকে লুকিয়ে রাখতে! কাঁচা মাছ কিনে রাতে ফিরলে, দোকানি আজও নুন ছিটিয়ে দেয় - পাছে পেতনী এসে মাছ খেতে চায়, নিশির ডাক শুনে যে একবারেই সাড়া দেয় সে আর ফেরেনা, সব কুসংস্কারের পেছনেই এক একটা ভয়ংকর কুৎসিত ঘটনা ভেজা এলোচুলের মতো জড়িয়ে আছে, মিষ্টির দোকানে যে এতো বিক্রি হয়, সব যে শুধু মানুষে খেয়ে যায় তা নয় - নামানুষরাও আসে বইকি! নুহাশকে কুর্নিশ গল্পগুলো ভাবার জন্য। চারটে এপিসোডে চারটে গল্প। চারটে গল্পেই যত্নের সাথে প্রতিটা চরিত্রকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন নুহাশের কলম, পরিচালনা আর অবশ্যই একটা দুর্ধর্ষ কাস্টিং লাইন-আপ। সোহেল মন্ডল, শিরিন আখতার, প্রীতম হাসান, মাসুদা ইসলাম, নওশাবা আহমেদ, আফজাল হোসেন, মোরশেদ মিশু আর অবশ্যই চঞ্চল চৌধুরী! প্রথম এপিসোড টা একটু দুর্বল লাগলেও, পরের পর্বগুলোতে গুণোত্তর প্রগতিতে বেড়েছে পরিচালকের মুন্সিয়ানা। শেষের গল্পে যে অনবদ্য সাইকোলজিক্যাল থ্রীল এসেছে, তা অনেকদিন মনে থাকবে। সি.জি.আই. ব্যবহারের পরিমিতি বোধ একেক জায়গায় চমকে দিয়েছে! তাহসিন রহমানের দুরন্ত সিনেম্যাটোগ্রাফি আর রাকাত জামি ও অভিষেক ভট্টাচার্য্যের অসাধারণ আবহ সঙ্গীত যোগ্য সঙ্গত করেছে এই পুরো সিরিজটিতে।
এই চারখানা পর্ব দেখে ফেলার পর আর যাই হোক, খিদেটা গেলো বেড়ে! আশা রাখি এই সিরিজের দ্বিতীয় সিজন আসবে। মুখিয়ে রইলাম তার জন্য।
ধন্যবাদ।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Ratul
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।