বই: মায়াবিনীর ম্যানিকুইন
লেখক: দেবাঞ্জন মুখোাধ্যায়
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মেয়ে শম্পা, ট্রেনে ট্রেনে দল নিয়ে গান গেয়ে যে টাকা পেতো তা দিয়ে দিন চালাতো। একদিন কোনও এক চাকরি পেয়ে তার আমূল পরিবর্তন ঘটে। পরিবার প্রিয়জন সবার থেকে দূরে চলে যেতে থাকে সে। কিন্তু হঠাৎ করেই সে খুন হয়ে গেলো নিজেরই পাড়াতে। খুনের দায় চাপলো তার প্রেমিক পলাশের ঘাড়ে। পালিয়ে গিয়ে পলাশআশ্রয় নিলো অবসরপ্রাপ্ত সিবিআই অফিসার কিংশুক রায়ের কাছে। প্রথমে মাথা না ঘামালেও পলাশের স্বার্থে কেসটা তলিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন। ধীরে ধীরে বুঝলেন এই কেসটা সাধারন নয়, বেশ জটিল কোন ব্যাপার জড়িয়ে আছে। যা আপাত দৃষ্টিতে দেখছেন আদৌ সেসব ঠিক নয় হয়তো।
অপরদিকে উত্তর প্রদেশে বিখ্যাত স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু দেবপ্রিয়াকে নিজেদের প্রচারণার জন্য নির্বাচন করেছে শাসকদল। শোনা যায় দেবপ্রিয়ার উপর নাকী মা কালীর আশীর্বাদ আছে। দেবপ্রিয়া তথা দেবীমায়ের সামাজিক সংস্থা শক্তিবাহিনী যা ঘরে বা বাইরে নির্যাতনের স্বীকার যুবতি- মহিলাদের নিয়ে গঠিত। সবকিছু চলছিল ঠিকঠাক, এমন সময় ভোজপুরি নায়িকা সন্ধ্যাকুমারী দাবি করলেন উপরে শক্তিবাহিনীর নাম দিয়ে এর ভেতরে চলে অসামাজিক কার্যকলাপ।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার অতি সাধারণ এক যুবতীর খুনের সাথে এসব ঘটনার সম্পর্ক কী? কিংশুক রায়, অফিসার বিদ্যুৎ এবং সত্যসন্ধানী রিপোর্টার শর্মিষ্ঠা নেমে পড়েন রহস্য উদঘাটনে। একের পর এক আবরণ সরিয়ে তারা এগোতে থাকেন সত্যের দিকে। কোন ষড়যন্ত্রের শিকার শম্পা?
লেখক নিজের হাতের সমস্ত তাস পাঠকদের জন্যে যেনো বিলিয়ে দিয়েছেন। তাই শেষ হবার আগেই শেষ পরিণতি বোঝা যায়। তা সত্বেও কেনো পড়বেন?
১, লেখকের গল্প বলার ক্ষমতা অসাধারণ। সহজ সরল ভাষায় লেখা ছেড়ে উঠতে মন চায়না।
২, একে একে ঘটনা প্রবাহ এতসুন্দর ভাবে সাজিয়েছেন যেনো মনে হয় "হ্যাঁ, ঠিক তো, এটার পরে তো এটাই হবে"।
৩, ধর্ম ও রাজনীতি কিভাবে মিলে মিশে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করতে পারে তার একটা ছোটো নিদর্শন এই উপন্যাস।
৪, শেষ টা বোঝা গেলেও লেখক কীভাবে শেষ টা করেন সেটা জানার জন্য পড়তে হবে শেষ পর্যন্ত। আমার শেষটা ভালই লেগেছে।
তাই দেরি না করে পড়ে নিন👍।
রিভিউটি লিখেছেনঃ
বই - মায়াবিনীর ম্যানিকুইন
লেখক - দেবাঞ্জন মুখার্জি
অসাধারণ কণ্ঠস্বরের অধিকারী শম্পা নামের একটি মেয়ে শম্পা, যার অন্যতম একটি বিরল গুন হলো নিখুঁত মিমিক্রি, ট্রেনে ট্রেনে গান করা যার ছিল পেশা, ঘটনাচক্রে সে একদিন খুন হয়, যার তদন্তে নামেন কিংশুক রায়, আপাতদৃষ্টিতে ত্রিকোণ প্রেমের কারণে খুন মনে হলেও পরে পাওয়া যায় চরম ষড়যন্ত্রের আভাস, সেই সঙ্গে জানা যায় এক ধর্মীয় সংগঠনের অঘোষিত গডওম্যান দেবীমা যার আকর্ষণে দলে দলে ঘর ছাড়ে মহিলারা তার সংগঠনে যোগ দেবার জন্য, কি তার কারণ। লেখকের সহজসরল ভাষায় বর্ণনা উপন্যাসটিকে সুখপাঠ্য করে তুলেছেন, বইটির শুরু থেকে শেষ অবধি অনেক চরিত্রের সমাবেশ এবং প্রতিটি চরিত্রই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, নিখুঁতভাবে সমস্ত রহস্যের জট ছাড়িয়েছেন লেখক, আর একটা বিষয় যেটা ভীষণ ভালো লেগেছে সেটা হলো এই উপন্যাসের নামকরণ, একেবারে যথাযথ নামকরণ যেটা এই বইয়ের মূল থিম কে সঠিকভাবে বর্ণনা করে, এককথায় আনপুট ডাউনেবল, শেষ পর্যন্ত পাঠক কে ধরে রাখে, খুব ভালো লেগেছে বইটি।
পার্সোনাল রেটিং - 9/10
রিভিউটি লিখেছেনঃ Rupa
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।