বই : ময়লা আঁচল
লেখক : ফণীশ্বরনাথ ‘রেণু’
অনুবাদ : প্রসূন মিত্র
প্রকাশনী : ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট ইন্ডিয়া
রেটিং ৮/১০
এ কাহিনী মিথিলার এক ক্ষুদ্র পল্লী মেরিগঞ্জের। মুখবন্ধেই লেখক জানাচ্ছেন, এই ক্ষুদ্র পল্লীগ্রামটিকে তিনি বেছে নিয়েছেন ভারতের সমস্ত অনগ্রসর গ্রামের প্রতীক হিসেবে। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত ভারতবর্ষের সাধারণ জনজীবনের কী অবস্থা, এ উপন্যাস তারই রূপরেখা। সকলের স্বপ্নের নবভারত কি সত্যিই বাস্তবে রূপ পেল? তারই উত্তর 'ময়লা আঁচল'। একদিকে অভাব, অশিক্ষা, অজ্ঞতা; অন্যদিকে বহু প্রজন্ম ধরে জমে থাকা কুসংস্কার, সংকীর্ণতা, পারস্পরিক রেষারেষিতে বিপর্যস্ত গ্রামীণ সমাজ। আর এই সহজ সাধারণ মানুষগুলোকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা কিছু চতুর ক্ষমতালোভীর দল। নতুন বিশ্বের আধুনিকতার এক এক ঝলক হাওয়া এখানে আসে বটে, তবে তা ঝড় হয়ে উঠে এই গুমোট সংকীর্ণতা পুরোপুরি কাটাতে পারেনা। তবু এরই মধ্যে প্রেম আছে, আছে উদারতা, সরল বিশ্বাস, বিপদের দিনে পরস্পরের পাশে থেকে লড়াই করার উন্মাদনা; যার প্রেরণা বালদেওজী, লছমী কোঠারিন, প্রশান্ত ডাক্তারের মতো মানুষেরা। তারা প্রকৃতই নিজেদের উৎসর্গ করেছে জনহিতে। প্রতিটি চরিত্রকেই লেখক সুনিপুণ দক্ষতায় পরিণতি দিয়েছেন। তারা কেউ প্রতীকী নয়, তারা দোষে-গুণে গড়া এই ধূলোমাটির জগতের বাস্তব মানুষ। উপন্যাসে লেখক প্রশ্ন তুলেছেন, দেশমায়ের আঁচলে যে ময়লা জমে উঠেছে সে ময়লা কীভাবে দূর হবে? রাস্তার ময়লা যত সহজে দূর করা যায়, মনের ময়লা দূর করা তো তত সহজ নয়। মায়ের আঁচল ময়লা হলেও তা শান্তির স্থান, পরম নির্ভরতার স্থান, আর সেই ময়লা পরিষ্কারের দায় সন্তানেরই। সেই চেষ্টাই চলে গোটা উপন্যাস জুড়ে। এ কাহিনি, এর চরিত্রেরা বাইরে যেমন একটা বিশেষ অঞ্চলকে চেনায়, তেমনি অন্তরে তারা গোটা ভারতবর্ষেরই প্রতিনিধি। স্থানীয় ভাষা-সংস্কৃতি, লোকজীবনের নানা খুঁটিনাটির বর্ণনায় আঞ্চলিক উপন্যাস হিসেবে যেমন এর সার্থকতা, তেমনি অঞ্চলের সীমানা ছাড়িয়ে এ কাহিনি শেষ অব্দি হয়ে উঠেছে গোটা উপমহাদেশের প্রতিবিম্ব।
রিভিউটি লিখেছেনঃ সুদেষ্ণা ব্যানার্জী
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।