মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা - লীনা চাকী Mahishasurmrdini Dugra by Lina Chaki

মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা - লীনা চাকী Mahishasurmrdini Dugra by Lina Chaki

বই- মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা
সম্পাদক - লীনা চাকী 
প্রকাশক - দেব সাহিত্য কুটীর
মুদ্রিত মূল্য - ২০০ টাকা

"নামতা পড়ে ছেলেরা সব পাঠশালার ওই ঘরে, নন্দীবাড়ির আটচালাতে কুমোর ঠাকুর গড়ে।

মন বসে কি আর...আহা হা হা চণ্ডীতলায় ঢাকের আওয়াজ ঢ্যাংকুরাকুর...."

আর বাকি প্রায় ২ মাস, তারপরেই ঘরের মেয়ে উমা শ্বশুরবাড়ি থেকে আসবে আমাদের মাঝে। আর প্রতিবারই সে নিয়ে আসে নানা প্রশ্ন। তাঁর রূপতত্ত্বের প্রশ্ন, নবরাত্রির প্রশ্ন, কবে শরৎকালে শুরু হয় প্রথম দু্র্গাপূজা, এমন বারোয়ারী ভাবেই বা কে প্রথম শুরু করেন, দেবী কীভাবে চিন্ময়ী থেকে মৃন্ময়ী হয়ে উঠলেন - এসব নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে  আমাদের মনের ভেতর। এই সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে এই সংকলনে। "নবকল্লোল" পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যার বিভিন্ন লেখকের লেখা নিয়ে তৈরী এই সংকলন।

শক্তিপূজা শুরু কীভাবে হলো সারা পৃথিবী জুড়ে, কীভাবে শস্যদেবী পরিণত হলেন আমাদের ঘরের মেয়ে উমায়, দু্র্গা পরিবারের কথা, নবরাত্রির নবদুর্গার মাহাত্ম্যকথা, দশমহাবিদ্যার কথা, জানাবে "দুর্গাঃ রূপে রূপান্তরে" প্রবন্ধটি।  

"জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী..." এ মন্ত্রটা আমরা সকলেই বলে থাকি বা সকলেই আমরা এ সম্পর্কে অবগত কিন্তু এঁদের আসল পরিচয় কী? পুরাণ এ বিষয়ে কী বলছে তা জানা যাবে উক্ত শীর্ষক প্রবন্ধে।

বাংলায় প্রথম সামাজিক শারদীয়া দুর্গোৎসব শুরু করেন কৃষচন্দ্র রায়, যার আমলে ১০০১ টা পাঠা বলি দেওয়া হয়েছিলো, এসেছিলো ১০৮ টা ঢাক একথা কি আপনাদের জানা ? সেই কৃষ্ণনগর থেকে গুপ্তিপাড়া, কলকাতা থেকে বেহালা, রাজবাড়ি থেকে বারোয়ারি, প্রাচীন থেকে বিধর্মী সবরকম দুর্গাপূজার অজানা ইতিহাস রয়েছে “বঙ্গে দুর্গোৎসব” প্রবন্ধে।  

এই উৎসবে আমরা সকলে ধর্ম ভেদাভেদ ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হই। রামকৃষ্ণদেব বলেছেন

"হিন্দু,মুসলমান,খ্রিস্টান, শাক্ত,বৈষ্ণব তোমরা সকলেই এক বস্তুকে চাইছ। তবে যার পেটে যা সয়, মা সেরকম ব্যবস্থা করেছেন। " তাই সকল জায়গার সকল ধর্মের মানুষের দুর্গোৎসব এর কথাও রয়েছে এই সংকলনে।

বাংলায় কেবল দশপ্রহরণধারিণী দশভুজা সপরিবার দুর্গামূর্তিই নয়, নানা আকার আকৃতির বিচিত্র দুর্গামূর্তিতেও পূজিতা হন। নীল থেকে লাল, দ্বিভুজা থেকে বহুভুজা, মাটি থেকে সোনার, জাঁকজমক থেকে শুদ্ধাচারে পূজিতা, হুগলি থেকে জলপাইগুড়ি সবরকম দুৃর্গামূ্র্তির সন্ধান পাওয়া যাবে "দুর্গাবিচিত্রা" প্রবন্ধ।

গজ, ঘোটক, নৌকা, দোলা, দেবী দুর্গার এসব যানবাহনের কথা ছোটো থেকেই শুনে আসছি আমরা। কিন্তু এর ব্যাখ্যা কী, এই কৌতুহল মেটাতে হলে পড়তে হবে “দেবীর আসা-যাওয়ার নেপথ্যে” প্রবন্ধটা।

ভারতবর্ষের আধ্যাত্মভাবনায় মাতৃবন্দনা সর্বব্যাপী। এই ভাবনাতত্ত্ব সমগ্র পৃথিবীকে মাতৃবন্দনায় স্নাত করেছে, যা নিয়ে বিস্তারিত লেখা রয়েছে “ ভারতীয় দৃষ্টিতে মাতৃবন্দনা” প্রবন্ধে।

বাংলার দুর্গাপূজার কথা হবে আর তাতে ঠাকুরবাড়ির কথা উঠবে না তা তো আর হয় না। আমাদের প্রাণের ঠাকুর এর বাড়িতে কীভাবে শুরু হলো দুর্গোৎসব তা জানতে হলে পড়তে হবে “ঠাকুরবাড়ির দুর্গোৎসব” প্রবন্ধটা।

সময়ের সাথে সবকিছুই বদলায়, জীবনধারণের ভঙ্গিও পাল্টে যায়। বর্তমানে প্রাধান্য পাচ্ছে “থিম”। প্রতিমার রূপ থেকে মন্ডপসজ্জা নানা বৈচিত্র্য, নানা অভিনবত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে “দেবী দুর্গার রূপবৈচিত্র্য” নামক প্রবন্ধে।        

কথার পরেও কথা থাকে, কাজেই কথা কখনও শেষ হয় না। স্বল্প পরিসরে যতটুকু আলোচনা করা যায় তা করলাম। বলতে গেলে "ফুল প্যাকেজ" বই এটা। "কেবল দুর্গাতত্ত্বে আগ্রহী মানুষ নন, ভক্তপ্রাণ বাঙালিমাত্রই এই বই প্রিয় হয়ে উঠবে।"

পুরো বইতে মুদ্রণের কোনও দোষ আপনি পাবেন না। তবে সংকলন গ্রন্থ হওয়ায় অনেক প্রবন্ধে একই জিনিস বারবার রিপিট হয়েছ। শেষের দিকে বাংলার দু্র্গাপূজার বিস্তৃতি পরপর তিনটে প্রবন্ধে রিপিট হয়েছ।  অল্প সময়ের ব্যবধানে বারাবর একই জিনিস পড়তে খানিক একঘেয়ে লেগেছে। তবে বাকি অংশ এই একঘেয়ে ভাব কাটিয়ে দেবে। অবশ্যই সংগ্রহযোগ্য একটা বই, নীচে দেওয়া সূচিপত্র সংগ্রহের ইচ্ছেকে আরও ১০ গুণ বাড়িয়ে দেবে।

শেষে বলি - শুধু পুষ্প-বিল্বপত্রের অর্ঘ্য ও নানাবিধ উপাচারে নৈবেদ্য সাজিয়ে কাকুতি মিনতি আর বৃথা অশ্রুজলে মহাশক্তি লাভ হয়না। দেবী অসুরনাশিনী, তাই তাঁর পূজায় চাই অসুর নাশের অটুট সঙ্কল্প, সেই সাথে অন্যায় অবিচার ও অত্যাচারের প্রতিবাদ ও প্রতিকারের প্রবল প্রচেষ্টা। চাই আত্মশক্তির উদ্বোধন, বিকাশ- প্রকাশ। চাই সম্মিলিত সংঘবদ্ধ অনুশীলন। 

প্রতিটা_উপহার_হোক_বই 

রিভিউটি লিখেছেনঃ সৌপর্ণ

Post a Comment

0 Comments