বই: হত্যা শাস্ত্র (চাণক্য সিরিজ)
লেখক: অভিজ্ঞান গাঙ্গুলী
প্রকাশক: বুকফার্ম
মূল্য: ₹৩৪৯
চাণক্য সিরিজের প্রথম প্রকাশিত বই এটি। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের রহস্য এবং ডিটেকটিভ গল্পের বই এর মাঝখানে এই বইটির চিন্তাভাবনা সত্যিই অন্যরকম। এই বইটির মূল চরিত্র তথা ডিটেকটিভ অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা, প্রাচীন ভারতের মহা জ্ঞানী পন্ডিত চাণক্য। মগধের সিংহাসনে সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত। আচার্য চাণক্য রাজকার্য থেকে অব্যাহতি নিলেও রাজ্যের জটিল থেকে জটিলতর সমস্যার সমাধানে মাঝেমধ্যেই ডাক পড়ে তাঁর।সেই সূত্রে তিনি তাঁর অসামান্য চাতুর্য আর বুদ্ধিকৌশলে কিভাবে অপরাধীদের খুঁজে বের করেন তার চারটি উপাখ্যান রয়েছে আপাতত প্রথম খন্ডে। এই বইটিতে মোট চারটি বড় গল্প রয়েছে।
১) শলাক শাস্ত্র: গান্ধারের রাজদূত মগধে এসেছেন মৈত্রী প্রস্তাব নিয়ে। কিন্তু কড়া সুরক্ষা ব্যবস্থার মাঝেও হত্যা করা হয় তাঁকে। কি করে সম্ভব? আচার্য চাণক্য কি পারবেন প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করতে এবং মগধ ও গান্ধারের সম্ভাব্য যুদ্ধ আটকাতে?
২) শীল শাস্ত্র: মগধের প্রতিনিধি হিসেবে তোসালির রাজদুর্গে এসেছেন চাণক্য। মগধে খবর পৌঁছেছে তোসালির রাজার মৃত্যুর ব্যাপারে। কিন্তু সেখানে আচার্য চাণক্য আরেক রহস্যময় হত্যার সম্মুখীন হলেন।কে করেছে সেটা? মহারাজের মৃত্যুও কি স্বাভাবিক ছিল?
৩) হত্যাশাস্ত্র: এই গল্পের নামেই বইটির নামকরন। রাজধানী মগধের রাজপথে কোন এক উন্মাদ খুনি একের পর এক গণিকাদের হত্যা করে চলেছে। কী তার অভিপ্রায়? আচার্য চানক্য কি অপরাধের মনস্তত্ত্বের হদিশ পাবেন?
৪) কনক শাস্ত্র: তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় ঘটে চলেছে বিভিন্ন অদ্ভুত ঘটনা। রাতের বেলা আনাচে-কানাচে নাকি দেখা যাচ্ছে প্রেত মূর্তি। প্রধানাচার্যের অনুরোধে চাণক্য সেখানে গেলেন।কী করে সমস্যার সমাধান করবেন তিনি?
****
পুরো বইটি অসাধারণ লেগেছে আমার। আপনারাও পড়ুন।আমি বইটিকে ৪.৫/৫ রেটিং দেব। ধন্যবাদ।
রিভিউটি লিখেছেনঃ
বই: হত্যা শাস্ত্র (চাণক্য সিরিজ)
লেখক: অভিজ্ঞান গাঙ্গুলী
প্রকাশক: বুকফার্ম
মূল্য: ₹৩৪৯
গোয়েন্দা রহস্য গল্পের কে না ভক্ত! তার উপর সেই রহস্য গল্পের প্রেক্ষাপট যদি ঐতিহাসিক হয় এবং গোয়েন্দা চরিত্রটিও যদি একজন বিখ্যাত ঐতিহাসিক ব্যাক্তিত্ব হয় তাহলে তো কথাই নেই। উক্ত বই-এর বিষয় ভাবনা এই দিক দিয়েই অভিনব এবং আকর্ষনীয়।
সুদূর অতীত থেকে আজ অবধি মহান কূটনীতিক হিসাবে যে ক'জনের নাম উল্লেখ্য তাঁদের সর্বাগ্রে থাকবেন মহামতি বিষ্ণুগুপ্ত চাণক্য। মগধ সাম্রাজ্যের পত্তনের হোতা, অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা কৌটিল্য। এই স্থিতপ্রজ্ঞ মানুষটিই লেখকের কলমে সত্যসন্ধানী রূপে এই বইতে আবির্ভূত।
মোট চারটি বৃহৎ-নাতিবৃহৎ গল্পের সংকলন এই বইটি।
১. শলাক-শাস্ত্র: গান্ধারের শান্তিদূত হিসাবে আগত গান্ধারের অমাত্য শুকদাসের রহস্যময় হত্যা হয় মগধের রাজপ্রাসাদে। এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল মগধ-গান্ধারের পারস্পরিক সম্পর্ক তথা সমগ্র আর্যাবর্তের ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর হতে পারে। মঞ্চে আবির্ভূত হন স্বয়ং চাণক্য এবং তাঁর শিষ্য জীবসিদ্ধি। রহস্য উৎঘাটনের ভার পড়ে তাঁর স্কন্ধে।
২. শীল-শাস্ত্র: তোসালির মহারাজের মৃত্যু আদৌ স্বাভাবিক মৃত্যু নাকি অলৌকিক কোনো রহস্য? মগধের অংশ হওয়ায় তোসালির ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত মগধপতি চন্দ্রগুপ্ত, প্রতিনিধিস্বরূপ পাঠান আচার্য্য চাণক্যকে। তাঁর উপস্থিতিতেই তোসালিতে ঘটে যায় আরেক হত্যাকাণ্ড। রাজ্যের আভ্যন্তরীণ কলহ এই হত্যাকাণ্ডকে করে তোলে আরো জটিল। চাণক্য জড়িয়ে পড়েন এই তদন্তে।
৩. হত্যা-শাস্ত্র: যে গল্পের নামে বই-এর নামকরণ। মগধে হঠাৎ পরপর গণিকাদের পৈশাচিক হত্যা ঘটতে থাকে। তদন্তে নেমে চাণক্য খোঁজ পান এর পিছনে ঘটে চলা আরেক বড় ষড়যন্ত্রের।
৪. কণক-শাস্ত্র: তক্ষশীলা মহাবিহারে অকস্মাৎ শুরু হয় অলৌকিক কার্যকলাপ। অশরীরিদের উপদ্রবে সামান্য জনজীবন বিঘ্নিত। মৃত্যু হতে থাকে শিক্ষক-ছাত্রদের। মগধরাজ শান্ত থাকতে না পেরে তদন্তের ভার দেন আচার্য্যকে। রহস্য এখানে জটিল থেকে জটিলতর। আচার্যের ব্যাক্তিগত অতীত জীবন জড়িয়ে পড়ে এই ঘটনার সাথে। রহস্য সমাধান তিনি করতে পারেন ঠিকই কিন্তু আসল রহস্য তখনও সামনে আসেনা। সেই রহস্যের সমাধান না হলে মগধ তথা গোটা ভারতবর্ষের ভিত্তি ভঙ্গুর হয়ে পড়বে। কী করবেন চাণক্য?
রহস্যের জাল লেখক বুনেছেন সুকৌশলেই। প্রতি গল্পের শেষবিন্দু অবধি পাঠক উদগ্রীব থাকবেন। যদিও ছোট ছোট হিন্ট গোটা গল্প জুড়েই লেখক ছড়িয়ে রেখেছেন কিন্তু সুতোতে টান পড়বে সেই শেষপাতেই।
চাণক্য-জীবসিদ্ধি জুটি অনেকটাই টিপিকাল গোয়েন্দা জুটির মতই। শিষ্য জীবসিদ্ধি গোয়েন্দার সহকারীরূপে সফল।
লেখক অর্থশাস্ত্রের বেশ কিছু রেফারেন্স দিয়েছেন এবং তাদের ভিত্তি করে রহস্য বুনেছেন - তা অভিনব এবং প্রশংসনীয়। ভাষার ক্ষেত্রে আরো খানিক সচেতন ভাবে পুরাতন শব্দ ব্যবহার করা গেলে তৎকালীন সময়টা স্পষ্ট হত। কিছুক্ষেত্রে লেখা গুলি আধুনিকতার দোষে দুষ্ট বোধ হতে থাকে। অর্থশাস্ত্রের সাথে মিলিয়ে নাম রাখার চেষ্টা বোঝা গেলেও গল্পগুলির নামকরণ কেন যেন অযৌক্তিক লাগে।
বইয়ের ছাপা-বাঁধা পারফেক্ট। মুদ্রণপ্রমাদ বিশেষ নেই। তবে শেষ গল্পে একটি চরিত্র কখনো বিন্দাচল, কখনো বিন্ধ্যাচল নামে বর্ণিত হয়েছে।
সপ্তদীপ দে সরকারের প্রচ্ছদ আকর্ষনীয়। গৌতম কর্মকারের অলংকরণ অসাধারণ।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Saheb B
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।