গোলন্দাজ ২০২১ মুভি - ধ্রুব ব্যানার্জী Golandaaj by Dhruba Benerji

গোলন্দাজ ২০২১ মুভি - ধ্রুব ব্যানার্জী Golandaaj by Dhruba Benerji

ছবি: গোলন্দাজ
পরিচালক: ধ্রুব ব্যানার্জী
মুক্তির তারিখ: ১০.১০.২০২১
ব্যাক্তিগত রেটিং: ৯/১০


শেষ ভালো বাংলা ছবি দেখেছিলাম ২০১৮ তে, হামি। তারপর সিনেমা হলে গিয়ে আর বাংলা ছবি দেখা হয়নি। কাল ষষ্ঠীর সকালে অনেকদিন পর একটা ভালো বাংলা ছবি দেখলাম, গোলন্দাজ।

বাঙালি সম্বন্ধে একটা অভিযোগ প্রায়শই শুনতে পাওয়া যায় যে বাঙালি ইতিহাস বিস্মৃত জাতি। কথাটি পুরোপুরি সত্য না হলেও একেবারে মিথ্যা নয়। ভারতীয় ফুটবলের জনক যে একজন বাঙালি সেটা বোধ করি আমার মত অনেক বাঙালিই জানেন না। বাংলা মায়ের বীর সন্তান নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারির জীবনী নিয়ে এই ছবিটি নির্মিত হয়েছে। ছবি দেখতে বসে আমার মধ্যে যে অপরাধবোধ বারবার কাজ করছিল সেটা হল এমন একজন সিংহের মতো বাঙালির নাম এতদিন জানতামই না!!!

নগেন্দ্রপ্রসাদ এর ভূমিকায় দেবের অভিনয় যথেষ্ট পরিণত। তিনি ব্রাহ্মণ সন্তান হয়েও আজ থেকে একশ বছরেরও আগে একজন কুসংস্কারমুক্ত মানুষ ছিলেন। সমাজের মাথাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি তাঁর ফুটবল দলে কামার, ডাক হরকরা, পুরুত মশাই থেকে মুসলমান সকলকেই স্থান দিলেন। অর্থাৎ তিনি প্রতিভার কদর জানতেন। সাহেবদের সঙ্গে তিনি চোখে চোখ রেখে কথা বলেন, চ্যালেঞ্জ ছোঁড়েন। তিনি পরাধীনতার যন্ত্রণা বুকে নিয়ে চোয়াল শক্ত করে হুংকার দেন যুদ্ধং দেহি। তিনি শেক্সপিয়ারের বাংলা অনুবাদ করেন। আবার তিনিই রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ নিয়ে পদযাত্রায় বেরোন।

ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়ের চরিত্রে অনির্বাণ তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে অভিনয় করেছেন। শিব সেজে যে তাণ্ডব নৃত্য তিনি করেছেন তা মনে রাখার মত। নাড়ুর চরিত্রে মির্চি অগ্নি বারবার হাসায় কিন্তু ছবির শেষে নিজের জীবন দিয়ে সে বাল্যসখা নগেন্দ্রনাথকে রক্ষা করে।

বন্দেমাতরম গানটার মুখড়াটা একটুখানি পরিবর্তন করে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এই ছবির ছোট্ট একটি কুস্তি প্রতিযোগিতার দৃশ্যে নরেন্দ্রনাথ (স্বামী বিবেকানন্দ) চরিত্রটি আসে এবং অসীম দক্ষতায় তিনি তাঁর প্রতিযোগীকে হারিয়ে দিয়ে পেটরোগা বাঙালির মাথা উঁচু করেন। তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বিবেকানন্দ প্রণাম মন্ত্র নমো শ্রী যতিরাজায় বিবেকানন্দ সূরয়ে... বেজে ওঠে। কেন জানি না অদ্ভুতভাবে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো সেই সময়। নরেন্দ্রনাথ চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন তাঁর মুখ দেখানো হয়নি। এটা পরিচালকের মুনশীয়ানা।

পরাধীন বাংলাদেশে শোভাবাজার রাজবাড়ির অজানা এক ভূমিকা দেখতে পাওয়া গেল। নগেন্দ্রনাথের স্ত্রীর ভূমিকায় অল্প কয়েকটি দৃশ্যে ইশাকে ভীষণ স্নিগ্ধ লেগেছে। নগেন্দ্রনাথ ও তার স্ত্রীর দাম্পত্য প্রেম কে খুব মার্জিত ও রুচিসম্পন্ন ভাবে দেখানো হয়েছে। ছবি দেখে যখন বেরিয়ে এলাম তখন আবার গর্ব করে বলতে ইচ্ছে হলো আমি বাঙালি।

এটা ১২.১০.২০২১ আমি আমার ফেসবুক টাইমলাইনে পোস্ট করেছিলাম।

রিভিউটি লিখেছেনঃ Titash

Post a Comment

0 Comments