দেখে পার হবেন রাস্তা - সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় Dekhe Par Hoben Rasta by Sukanta Gangopadhyay

দেখে পার হবেন রাস্তা - সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় Dekhe Par Hoben Rasta by Sukanta Gangopadhyay

নারায়ণগড়ের বিধায়ক তমালের উচ্চাকাঙ্খী স্ত্রী শান্তা আত্মহত্যার চেষ্টা করে। দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে পার্টি তমালকে কুসুমপুরে পাঠিয়ে দেয় কিছুদিনের জন্যে। কিন্তু কমিউনিজমের পাঠ নেওয়া জনদরদী তমাল সেখানে এসেও নিজেকে জড়িয়ে ফেলে সেখানকার উন্নয়নের স্বার্থে। সঙ্গে তিনি পান পার্টির  কিছু অল্প বয়সী ছেলে ও মল্লিকাকে। 

পার্টি থেকেই কুসুমপুরে তাঁর আত্মগোপনের জন্যে ঠিক করে দেয় মল্লিকাদের বাড়ির দোতলা। মল্লিকার অকালপ্রয়াত স্বামী দেবাংশু ছিলেন একই রাজনৈতিক আদর্শে দীক্ষিত। তমালের মধ্যে মল্লিকা যেন খুঁজে পায় দেবাংশুর হারিয়ে যাওয়া অসমাপ্ত স্বপ্ন গুলোকে পরিনতি দেওয়ার প্রয়াস।

মল্লিকার আচরণের পরিবর্তন তার প্রাপ্তবয়স্কা মেয়ে পায়েলের নজর এড়ায় না। মা কে অবলম্বন করে বড় হয়ে ওঠা পায়েল হঠাৎ-ই তাদের দুজনের মাঝে অস্থির ছায়ার মত তমালের উপস্থিতি মেনে নিতে পারে না, বাড়তে থাকে দূরত্ব। ভীন রাজ্যে চাকরি করতে যাওয়া পায়েলের প্রেমিক অনিক ও পাল্টে যেতে থাকে দ্রুত। মা ও অনিক নির্ভর যে পৃথিবী ছিলো পায়েলের, তার দ্রুত পরিবর্তনে একা হয়ে যাওয়া পায়েল আঁকড়ে ধরতে চায় স্বল্প পরিচিত শিলাদ কে। 

গভীর শান্ত জলের মত মল্লিকা, নাকি অস্থির ঘূর্ণি শান্তা, কোথায় শান্তির সন্ধান পাবে তমাল? কঠিন আদর্শবাদী দৃঢ় চরিত্রের তমাল কি পারবে পার্টির বিরুদ্ধাচারণ করতে? 

বাম-জমানা অস্তমিত হওয়ার কারণ এই উপন্যাসের মুখ্য উপজীব্য হলেও, আদ্যোপান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়া চরিত্র গুলোর মানসিক টানাপোড়েনের যে ছবি লেখক এঁকেছেন তা কোনভাবেই কোন মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের থেকে কম নয়। সমস্ত ঝড় সামলে সন্তানকে একা বড় করে তোলা মল্লিকা যখন বলে, "বিয়ের কথা বলতে যাওয়ার সময় সাথে একজন পুরুষ মানুষ থাকলে ভালো" তখন তমালের উপর নির্ভরতা, তার সাথে আত্মিক সম্পর্কের বন্ধনের ছবিই যেন ক্যানভাসে ফুটে ওঠে। 

শেষ করবো একটি গজলের দুটো পঙতি দিয়ে...
"তুমকো দেখা তো ইয়ে খায়াল আয়া
জিন্দেগী ধুপ তুম ঘানা সায়া"

দেখে পার হবেন রাস্তা
লেখকঃ সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় 
প্রকাশনাঃ আনন্দ 
মূল্যঃ ১৫০

রিভিউটি লিখেছেনঃ Nandita

Post a Comment

0 Comments