সিরিজ : আমেরিকান হরর স্টোরিজ (২০২১)
প্রোডিউসার : Ryan Murphy, Brad Falchuk
IMDb: ৬.১/১০ (১৪৪৮২ ভোট)
২০১১ সালে Ryan Murphy ও Brad Falchuk দ্বারা নির্মিত আমেরিকান হরর স্টোরি নামে একটি সিরিজ আসে, যা হরর প্রেমীদের কাছে রীতিমত শোরগোল ফেলে দেয়। দশটি সিজন জুড়ে চলতে থাকা ১১৩ এপিসোড সমন্বিত সেই সিরিজের চরম সাফল্য ও পুরস্কারের বহর লক্ষ করে নির্মতাগন ঠিক করেন একটি স্পিন অফ বানানোর। সেইমত দীর্ঘ ১০ বছর পর শেষে একটি S অক্ষর যুক্ত হয়ে একবচন থেকে বহুবচনে নাম রূপান্তর করে আবার অনেক আশা নিয়ে ফিরে আসে সেই অ্যান্থলজি সিরিজ। আসুন দেখা যাক এক একটি গল্পের তুল্যমূল্য বিচার করে:
প্রথম গল্প : এপিসোড ১ ও ২ [রাবার (ও)ম্যান]:
প্রথম দুই এপিসোড বললেও আদতে এই গল্প শেষ এপিসোডে গিয়েই পরিণতি পায়। দুই বাবার সাথে বাস করা একটি টিনেজার মেয়ের জীবনের নানা সমস্যা ও একটি কালো পোশাকের রহস্য ঘিরে এই গল্প আবর্তিত হয়েছে।গল্পের প্রথম পর্বে ভূতের ভয়াল রূপ অনুমান করে গা ছমছমে ভাব থাকলেও পরের এপিসোডে শীর্ষেন্দুর ভঙ্গিতে বেশ মজার ছলে ঘটনা রূপ পায়। গল্পের রাইটিং বেশ ভালো, পরিচালনাও ভালো লেগেছে। শুধু দৈর্ঘ্য আরেকটু কম হলে হয়তো ভালো লাগতো। গল্পে ব্যবহৃত আবহ ও গানগুলি ভালো লেগেছে।
দ্বিতীয় গল্প: এপিসোড ৩ [ড্রাইভ ইন]:
কয়েক দশক ধরে নিষিদ্ধ হয়ে থাকা একটি সিনেমা, যা হলের অধিকাংশ দর্শকদের মেরে ফেলেছিল, হঠাৎ করে আবার মুক্তি পায় একটি ড্রাইভ ইন থিয়েটারে। সেই ঘটনা এই গল্পের বিষয়বস্তু। সব গল্পগুলোর মধ্যে এই গল্পটাই সবথেকে দুর্বল লেগেছে আমার। তবে অভিশপ্ত ওই ছবির পরিচালকের শেষের কথাগুলি মন দিয়ে শুনলে বোঝা যাবে যে কথাগুলি একাধিক অর্থ বহন করে। কোথাও যেন শিল্পী ও তার শিল্পকর্ম বনাম দেশ/সরকারের ছড়ি ঘোরানোর ব্যাপারটা মাথায় খেলা করে যায়।
তৃতীয় গল্প: এপিসোড ৪ [দ্য নটি লিস্ট]:
কিছু নব্য যুবকের ইউটিউবে স্টার হবার বাসনা, লাইক, শেয়ার ও সাবস্ক্রাইবার পাওয়ার লোভ এবং তার জন্য যে কোনও পর্যায়ে নেমে যাওয়ার বাসনা এই গল্পের বিষয়। কিন্তু একটা ভিডিওতে কোনও এক অচেনা ব্যক্তির আত্মহত্যার ঘটনা ও তাতেও তাদের কোনও ভ্রুক্ষেপ না করা -- রাতারাতি তাদের পপুলারিটিতে ইতি টেনে দেয়। সেখান থেকে ডেসপারেট হয়ে একটি মলে গিয়ে সান্টাকে অপমান করার ভয়াবহ পরিণতি দেখতে পাই। শেষের দিকের দৃশ্যগুলো গা গুলিয়ে ওঠার মতো ভয়ংকর এবং শেষের দৃশ্য সত্যিই গায়ে কাঁটা দেয়।
চতুর্থ গল্প: এপিসোড ৫ [ব'ল ]:
এক দম্পতির অনেকদিন ধরে অনেক ডাক্তার দেখিয়েও সন্তান না হওয়ার পর হাসপাতালের রিসেপশনিস্ট এর পরামর্শে মহিলাটি ব'ল নামক এক প্যাগান গড (মতান্তরে ডেভিল) উপাসনা করে আপাতভাবে সত্যিই সন্তান লাভ করেন, কিন্তু মাস কয়েক পরেই ঘরে শুরু হতে থাকে নানান উপদ্রব এবং একটি অস্পষ্ট গোঙানির মতো আওয়াজ আসতে থাকে, যা যেন বলতে থাকে 'বাচ্চাটা আমাকে দাও'। ধীরে ধীরে গল্পের ভেতরে ঢুকে জানতে পারি, যা দেখা যাচ্ছে ঘটনা আসলে আরও গভীর। ট্যুইস্টের দিক থেকে সব গল্পের মধ্যে এটাই সেরা, শুধু শেষের দৃশ্যটি বাদ দিয়ে, যা আমার মনে হয়েছে morally গল্পের মেজাজের সাথে খাপ খায় না (ঠিক তামিল ছবি ইরু মুগান এর মতো)।
পঞ্চম গল্প: এপিসোড ৬ [ফেরাল] :
গভীর জঙ্গলে ক্যাম্পিং করতে গিয়ে এক দম্পতি তাদের আড়াই বছরের ছেলেকে খুঁজে পান না। দীর্ঘ ১০ বছর পর একটা খবর শুনে আসার আলো পেয়ে ভেঙে পড়া শোকগ্রস্ত বাবা মা নিরুদ্দেশ সেই ছেলের খোঁজে একই জায়গায় গিয়ে উপস্থিত হন। কিন্তু পরিস্থিতি আজ সম্পূর্ন আলাদা। তাই সেখানে গিয়ে এমন কিছু অভিজ্ঞতা হয় যা সম্পূর্ণ আশাতীত। গল্পের শেষ চমকটি সত্যিই চমকপ্রদ। নামকরণও সার্থক।
শেষ গল্প : এপিসোড ৭ [গেম ওভার] :
আগের কথা পুনরুক্তি করে আবারও বলছি এই গল্প আসলে আবার আমাদের নিয়ে ফেলে সেই বাড়িতেই , যেখান থেকে প্রথম গল্প শুরু হয়। কিন্তু গল্পের প্রেক্ষাপট আলাদা। এক গেম ডিজাইনার মা তার ছেলেকে একটা ভালো গেম তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রিসার্চের প্রয়োজনে সেই বাড়িতে চলে আসেন বাড়িটির পুরো গল্প জানার জন্য। বাদবাকি ঘটনা তোলা থাক।
সিরিজের সব গল্পেই দৃশ্যমান ভূতের থেকে অলৌকিক ও সাইকোলজিকাল ঘটনার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। তাই হরর পিপাসুদের মন্দ লাগবে না। তবে অন্য বিখ্যাত হরর সিরিজগুলোর (যেমন এটারই মূল সিরিজটি, বা মাস্টার অফ হরর, বা ব্লাডরাইড) সাথে তুলনা করলে হয়ত বা খানিকটা নিরাশ হতে হতেই পারে।
আমার রেটিং : ৭/১০
রিভিউটি লিখেছেনঃ চকোলেট বয়
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।