স্বদেশ
লেখকঃ সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়
আমি তখন ক্লাস সেভেন, স্কুলে প্রথমবার আর্মি এলো। জানতে পারলাম ওঁরা আমাদের প্যারেড শেখাবেন। কোথায় কবে কেন প্যারেড করা হবে, সেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের থেকেও আগ্রহের বিষয় ছিল, ক্লাস ফাঁকি দেওয়া যাবে। নির্দিষ্ট দিনে মাঠে জমায়েত হলাম সকলে। জানা গেল সকলে নয়, কেউ কেউ সুযোগ পাবে প্যারেডের বাহানায় ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার। উত্তীর্ণ তারাই হবে, প্যারেডের সময় যাদের চেহারায় দৃঢ়তা প্রকাশ পাবে, শিরদাঁড়া হবে ঋজু। প্রাথমিক ইচ্ছেটা ছিল ক্লাস ফাঁকির, কিন্তু নিয়মানুবর্তিতার নেশা আর অচেনা এক আবেগ ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেই কিশোরী মনকে। সেই প্রথম দেশকে ভালোবাসার অনুভূতি।
এ বছরের পূজাবার্ষিকী কথাসাহিত্যে লেখক সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের কলমের জাদুতে প্রাণ পেয়েছে এমনই এক ছোটগল্প, "স্বদেশ"। দেশ মানে যে কোন ভৌগলিক সীমানা নয়, দেশ মানে একটা আবেগ, সাথে কিছু ইতিহাস। এই অমোঘ সত্যিটা খুব সহজ অথচ গভীর অর্থবহ হয়ে ধরা পরেছে এই ছোট গল্পটিতে।
বিদেশে প্রতিষ্ঠিত ছেলের কাছে পাকাপাকি ভাবে চলে যাওয়ার কথা রজত বাবু ও তার স্ত্রীর। সেই মত সব প্রস্তুতি শেষ হলেও, একটি বিশেষ কারণে রজত বাবু দেশ ছাড়তে রাজি হন না। তার স্ত্রীর মতে এই কারণটি নেহাতই অজুহাত। রজত বাবু চেষ্টা করেন, গুরু দায়িত্বস্বরূপ এই "কারণ"টি হস্তান্তরিত করার, কিন্তু ব্যর্থ হন। বিদেশে থাকা ছেলেও বুঝতে পারে না রজতবাবুর এই আবেগের কারণ। কিন্তু সত্যি কী সে বুঝতে পারে না, নাকি বাবার আবেগ ছড়িয়ে যায় তার মধ্যেও?
ব্যাক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়েছে, খুব স্পর্শকাতর বিষয়ের উপর এই ছোটগল্পটি। লেখকের প্রতিটি ছোটগল্পই একটা বার্তা দেয়, এটাও তার ব্যাতিক্রম নয়। প্রাত্যাহিক জীবন, সেখান থেকে তৈরি হওয়া বন্ধুত্ব, রজত বাবুর মনের টানাপড়েন, প্রতিটি যেন এক একটা ছবির ফ্রেম। খেতে বসেও রজতবাবুর চিন্তামগ্ন দীর্ঘশ্বাসে, আমার অশীতিপর দিদাকে দেখতে পাই, যার একসময় একটা "দ্যাশ ছিল"। আর এখানেই "স্বদেশ" শুধু কিছু অক্ষর সম্বলিত ছোটগল্প থাকে না, ঢুকে পরে পাঠকের অন্তরমহলে, জায়গা করে নেয় পাকাপাকি ভাবে।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Nandita
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।