বই - পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল
লেখক - প্রীতম বসু
প্রকাশক - প্রীতম বসু
মুদ্রিত মূল্য - ২০০ টাকা
"ছান্দে অঙ্কে পক্ষী পঙ্খ বান্ধে নন্দীধন
পঞ্চমুন্ডে পঙ্কে গুপ্ত কাব্য পঞ্চানন।"
১৪১৪ সালের ঘটনা। গণেশ, তখন গৌড়ের বাদশাকে হত্যা করে বাংলার রাজা হয়েছেন। সেই গণেশের পুত্র যদু মুসলমান হয়ে নাম নিলেন জালালুদ্দিন। বাংলার প্রচুর মন্দির ধ্বংস করেছিলেন এবং প্রচুর হিন্দু পুঁথি পুড়িয়েছিলেন নির্দয় ভাবে। তারও আগে ১২০৩ সালে বক্তিয়ার খিলজি গোটা নালন্দা জ্বালিয়ে দেন, যেখানে রত্নসাগর, রত্ননিধি এবং রত্নরঞ্জন এই তিন গ্রন্থাগারে তিনমাস ধরে আগুন জ্বলেছে। কিছু বই নিয়ে বৌদ্ধসন্ন্যাসীরা দিগ্বিদিক শূণ্য হয়ে পালিয়ে যান। তার মধ্যে ছিলো আর্যভট্ট, ব্রহ্মগুপ্ত, নাগার্জুন, শান্ত রক্ষিত এর মহান সব বই। এর দুশো বছর পর নালন্দায় চিকিৎসাবিদ্যা শিখতে গিয়ে অ্যালগরিদমের সন্ধান পান মেধাবী ছাত্র নন্দীধন। কিন্তু সুলতান শাসকেরা এসব জানতে পারলে আবার সেসব পুড়িয়ে দেবে। নন্দীধন সেগুলো সব সূত্রকে বাঁধলেন শিবের স্তোত্র দিয়ে, নাম দিলেন পঞ্চাননমঙ্গল। (পঞ্চানন অর্থাৎ শিব, পূর্বে তৎপুরুষ রূপ - ধ্যান ও জ্ঞানের প্রতীক, পশ্চিমে রুদ্ররূপ- ক্রুদ্ধ সংহারের প্রতীক, উত্তরে বামদেব - মানসিক ও দৈহিক স্বাস্থ্যের আরোগ্যের প্রতীক, দক্ষিণে অঘোরা রূপ - ধ্বংসের প্রতীক আর আকাশের দিকে ঈশান রূপ - সর্বজ্ঞানী চিরশাশ্বত শিব,সৃষ্টির প্রতীক)। এমনি এটি মঙ্গল কাব্য কিন্তু যার পদে পদে রয়েছে অঙ্কের নানা সূত্র যা আবিষ্কার করে গেছেন আমাদেরই দেশের পন্ডিতেরা৷ কিন্তু জালালুদ্দিন এর কাছে খবর পৌঁছে গেলো। তারপর কী হলো পরিণতি….
কাট টু পাচঁমুড়ো৷ ১৯৯৬ সাল
জমিদারি ক্ষয়ে গেছে। তাও নাম মাত্র জমিদার সদানন্দ ভট্টাচার্য। পুঁথির উপরে তাঁর প্রচুর জ্ঞান। লন্ডনের এক মিউজিয়াম এর মালিক অংশুমান ধাঁড়ার খাস লোক। তাঁর সমস্ত পুঁথি যাচাইয়ের ভার সদানন্দবাবুর। এই বাড়িতে হরু ঠাকুর এর লেখা জাল পুঁথি বিক্রি করতে এসে ধরা পড়ে কালাচাঁদ চোর৷ ঠিক সেসময় চয়নবিলের তলা থেকে আবিস্কৃত হয় পাথরে খোদাই করা ১৪০০ সালের কথ্য বাংলা ভাষা ও লিপি৷ যাতে লেখা পঞ্চাননমঙ্গল। তারপর…
টানটান থ্রিলার + অঙ্কের সূত্র + মঙ্গলকাব্য, এক বইয়ে এত কিছুর মিশেল পাবেন৷ একবার পড়তে শুরু করলে ছাড়া খুব মুশকিল। পড়তে পড়তে মনে হয়েছে বইটা যাতে কখনও শেষ না হয়। বারবার পড়া যায় বইটি। অসামান্য গবেষণা এবং পরিশ্রম এর ফসল এই “গ্রন্থ”
লুঠ, বিদেশি শক্তির অত্যাচার এর ফলে বহু প্রাচীন পুঁথি আমরা হারিয়েছি৷ আশ্চর্যজনকভাবে তা নিয়ে আমাদের কোনও অনুতাপও নেই। যাদের অল্পবিস্তর বোধ আছে তাদের ক্ষতে নিঃসন্দেহে মলমের কাজ করবে এই বই। যারা বাংলা সাহিত্যকে ভালোবাসে, ইতিহাসনির্ভর কাহিনি পছন্দ করে তারা অবশ্যই পড়ুন৷ আর যাদের বাংলাটা ঠিক আসেনা, তারা স্বাচ্ছন্দ্যে এড়িয়ে যেতে পারেন ☺☺।
যারা এই পড়েছেন বা পড়বেন, তারা সবাই নিজেকে কথা দিন যে "আমরা খুঁজে আনব হারিয়ে যাওয়া বাউল-ফকির-কবিয়ালদের। আমরা ধরে রাখবো আমাদের প্রাচীন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য।"
এক ভদ্রলোক এর কমেন্ট এ খুব সুন্দর একটা কথা দেখলাম, শেষে সেটাই বলি।
“লেখক শুনেছি প্রবাসী, মার্কিন নিবাসী। দূরে থাকা ছেলের যেমন মায়ের ওপর টান বেশি থাকে, লেখকেরও ঠিক তাই। এই বই সেই ভালোবাসা আর টানের নিদর্শন।”
রিভিউটি লিখেছেনঃ Yudhistir
বই - পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল
লেখক - প্রীতম বসু
পৃষ্ঠা - ২৩০
মূল্য - ২০০ টাকা
"সারঙ্গ নয়ন বচন পুন সারঙ্গ তনু মধুপানে।
সারঙ্গ উপর উগল দশ সারঙ্গ কেলি করথি মধ্যপানে।"
‘অলঙ্কারের মাস্টার’ খ্যাত বিদ্যাপতির লেখা এই দুটি চরণে ‘সারঙ্গ’ শব্দটির অর্থ কোথাও হরিণ, কোথাও পদ্ম, তো কোথাও ভ্রমর, আবার কোথাও কোকিল কিংবা মদন। কোথায় ঠিক কোনটা বসবে ভাবছেন? বাংলা ভাষার আসল সৌন্দর্যই হয়তো এই রহস্যময়তায়। আর এই রহস্যময় ভাষার ইতিহাসের একটি দুষ্প্রাপ্য অধ্যায় হলো ‘পঞ্চাননমঙ্গলকাব্য’।
"১২০০ হইতে ১৪৫০ অব্দের মধ্যে বাঙ্গালা সাহিত্যের কোনো নিদর্শন তো নাই-ই, বাঙ্গালা ভাষারও কোনো হদিশ পাওয়া যায় না।"—ডঃ সুকুমার সেন।
তাহলে ঠিক কেমন ছিল সে যুগের বাংলা ভাষা? কীভাবে লিখতো তখন এদেশের মানুষ? সেসব হারিয়েই বা গেল কোথায়? নাকি এর পেছনে আছে কোনো নিপাট ষড়যন্ত্র? বাংলা সাহিত্যের এক অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের গূঢ় রহস্যের উদঘাটন নিয়েই একটি চাঞ্চল্যকর থ্রিলার লিখেছেন প্রীতম বসু। বলা চলে, মেধা এবং পরিশ্রম মিলিয়ে যে অসাধারণ কিছু তৈরী করা সম্ভব তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন এই বইতে...
কে কবে খেয়াল করেছিল চৌদ্দশ সালের ভাষাতে 'চ' উল্টোভাবে লেখা হতো? আর সে ধারাবাহিকতাতেই যুক্তাক্ষরে আজও 'চ' (অঞ্চল) উল্টোই রয়ে গেছে? কতজন জানে যে অ্যালজেব্রা আর অ্যালগোরিদমের আবিষ্কার হয়েছিল প্রাচীন ভারতবর্ষের পন্ডিত ভাষ্করের হাত ধরে?? পয়ার, ছান্দস, অনুষ্টুপ, পাদাকুলক, বসন্ততিলক প্রভৃতি ছন্দের আবডালে অলঙ্কারের মূর্ছনায় চোদ্দোশো পনেরোশো শতকে গড়ে উঠেছিল একের পর এক অমর কীর্তি... যার অর্ধেকের বেশি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল তূর্কী আক্রমণে...
বইটির কাহিনি আবর্তিত হয় চৌদ্দশ সালের হারিয়ে যাওয়া বেগবতী নদীর পার্শ্ববর্তী বল্লালগ্রামকে ঘিরে—যা আবার কালের পরিক্রমায় ‘পঞ্চমুণ্ড’ থেকে ‘পাঁচমুড়ো’ নাম নিয়েছে। পাঁচমুড়ো গ্রামের বহু পুরোনো চয়নবিলের তলা থেকে একদিন আবিষ্কৃত হলো পাথরে খোদাইকৃত ১৪০০ সালের কথ্য ভাষায় ও লিপিতে লেখা ‘পঞ্চাননমঙ্গলকাব্য’...
কি নেই এই বইতে???
মধ্যযুগের কাল্পনিক কাহিনীতে এসেছে প্রেম, এসেছে তৎকালীন সমাজব্যবস্থা। ১৩শ-১৫শ সালের ইতিহাসের ঘোড়ায় চেপে হাজির হয়েছেন বাবর থেকে শেরশাহ, জালালুদ্দিন থেকে প্রতাপাদিত্য। এসেছে বড়ু চণ্ডীদাসের হাত ধরে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, এসেছেন চৈতন্যদেব...
উপমহাদেশীয় রহস্যাবলি খুঁড়ে এনেছেন আর্যভট্টকে। দেখাতে চেয়েছেন, আমাদের প্রাচীন মেধা কত অনায়াসে পৃথিবী জয় করার ক্ষমতা রাখে! আবার মন্দির নির্মাণে মুসলিম শ্রমিকের মুখের একটা কথার মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছেন অসাম্প্রদায়িকতা। আবার পরবর্তী ভাবনাতেই চলে এসেছে রাজনৈতিক উন্মোচিত মুখোশ...
"ছান্দে অঙ্কে পক্ষী পঙ্খ বান্ধে নন্দীধন
পঞ্চমুন্ডে পঙ্কে গুপ্ত কাব্য পঞ্চানন।। "
ঠিক এভাবেই ছন্দের সঙ্গে অঙ্ক মিশে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে প্রীতম বসুর এই অমর উপন্যাস।
পড়ুন আর মুগ্ধ হন, এই উপন্যাস আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Bishal Das
বই - পাঁচমুড়োর পঞ্চোমঙ্গল
লেখক - প্রীতম বসু
কাহিনীর শুরু হয় ছয়শো বছর আগে বাঙালির এক হারিয়ে যাওয়া পুঁথি উদ্ধার হওয়া নিয়ে।
কোনো এক বিদেশী শক্তি বাঙালির হারিয়ে যাওয়া পুঁথি উদ্ধার করে কি করবে সেই নিয়েই কাহিনীর শুরু এবং শেষ।
এই উপন্যাসের পড়তে পড়তে মনে হতেই পারে যে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পড়ছি।
চণ্ডীদাস থেকে শুরু করে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
উপন্যাসটির চরিত্র গুলিও অসাধারণ।এটি পড়তে শুরু করলে আর শেষ না করে থাকা যায় না।
সর্বোপরি উপন্যাস টি এক কথায় অসাধারণ।
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।