কালরাত্রি
লেখকঃ দীপবিতা দত্ত
ধুতরো গাঁয়ের নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে কুমকুমকে যখন কনকপুরের অবনী মজুমদার তার বড়ো ছেলে বিনয়ের জন্য পছন্দ করে বিয়ে ঠিক করলেন তখন খবরটা শুনে আত্মীয় থেকে প্রতিবেশী সকলেরই অবাক হওয়ার সীমা থাকল না। কারণ ধুতরো গাঁ সহ আশপাশের ছ’সাতটি গাঁয়ের মাঝে মাঝারি মফস্বল মহকুমা শহর কনকপুর যেখানে সকলে একনামে চেনে মজুমদারদের। সে বাড়ির বড়োবৌ হচ্ছে হারান মুদির মেয়ে, সে বড়ো আশ্চর্যের কথা।
কিন্তু গরিব হারান মুদির কাছে এ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার বিষয়। কিন্তু বিয়ের পর প্রথম রাতেই কেমন খটকা লাগে কুমকুমের কাছে। কারণ তাকে বলা হয় এবাড়িতে কালরাত্রি পালন করা হয় ১৩ দিন। এতদিন স্বামীর মুখও দেখা যাবে না। ঘরের সব জানালা যাতে কোনোভাবে না খোলা হয় সে বিষয়ে বারবার করে নিষেধ করা হয়েছে। কাউকে তার ঘরেও আসতে দিচ্ছে না বরং রাতের বেলা বাইরে যেতে চাইলে দেখা যাচ্ছে ঘরের খিল বাইরে থেকেই আটকানো।
আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার খুশিতে জীবনটা টিকিয়ে রাখতে পারবেতো কুমকুম।
দীপবিতা দত্তের এর আগে আর কোন বই পড়া ছিল না। প্রথম বই পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি-ভালো। উনার অন্য কোনো বই পড়ার সুযোগ পেলে পড়বো। কাহিনি অনেকটাই স্লো। কিন্তু ধৈর্য ধরে পড়লে খুব খারাপ যেমন লাগবে না তেমনি অনেক ভালোও লাগবে না। একবার পড়াই যায়। তবে দ্বিতীয়বার পড়ার ইচ্ছে নাও করতে পারে।
রেটিং 🌟🌟🌟🌟🌟 (৫)
রিভিউটি লিখেছেনঃ Fardin Rafi
Review
কালরাত্রি লেখক ইন্দ্রনীল সান্যাল
সদ্য শেষ করলাম ইন্দ্রনীল সান্যাল এর কালরাত্রি। আরো আনন্দ অ্যাপ এ ধারাবাহিক হিসেবে প্রকাশিত এই উপন্যাস দীপশিখা বরুণ জুটির দ্বিতীয়/ তৃতীয় উপন্যাস। এবারের পুজো সংখ্যা সানন্দা এ প্রকাশিত ময়না তদস্ত উপন্যাস টি এই সিরিজ এর অন্তর্গত। কালরাত্রি আগে প্রকাশিত হলেও একটি সূত্রের কারণে (বরুণ এর একাকী জীবন পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা এলেও নিম্নতি ঠাকরুন তাতে বাধা দেন, কেন বাধা দেন সেটা ময়না তদস্ত উপন্যাস এ আন্দাজ পাওয়া যায়) আমার এটি তৃতীয় উপন্যাস মনে হলো। এই জুটির প্রথম আবির্ভাব কর্কটক্রান্তি উপন্যাসে। যেখানে বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ এর মডাকাটা ডাক্তার (ফরেনসিক সার্জন) কাজের সূত্রেই জড়িয়ে পড়েছিল রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘটে যাওয়া বেশ কিছু দুর্ঘটনার সাথে। এই তদন্তের সরকারি দায়িত্বে ছিলেন বরুণ। মূলত এদের দুজনের দক্ষতাতেই জানা যায় আপাত দৃষ্টিতে এগুলি বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা হলেও আসলে এরা একই সূত্রে বাঁধা।
কেস মিটে যাওয়ার পর যোগাযোগ না থাকলেও আবার কাজের সূত্রে জুটি বাঁধে বা বলা ভালো পুলিশের উপর মহলের নির্দেশে জুটি বাঁধতে বাধ্য হয় দীপশিখা ও বরুপ।
শাসক দলের ঘনিষ্ট একজন উঠতি ছুটকো নেতা হটাৎ খুন হয়ে যান রাস্তার মাঝে। চাপাতি দিয়ে খুন হয়েছে আর রক্তাক্ত মৃত দেহের পাশে সেই রক্ত দিয়ে রাস্তার ওপর ছয় খানা জিন্ডের (যেমন মা কালীর জিভ বেরিয়ে থাকে) ছবি আঁকা।
এর পর একই ভাবে খুন হন একজন ব্লগার একটি প্রবাসী ডাক্তার যাদের রক্তাক্ত দেহের পাশে যথাক্রমে পাঁচ ও চার খানা জিতের ছবি আঁকা ছিল। মিডিয়া যথারীতি এটাকে তান্ত্রিক আচারের অঙ্গ কোনো সিরিয়াল কিলিং (জিভ কাণ্ড) আখ্যা দিয়ে পুলিশি অপদার্থতার প্রতিবাদে জনমত গঠন করতে থাকে। এর পর আবার খুন হয়ে যান এক আশ্রমিক সাধু ও এক প্রৌঢ় লেখক। সব কটা খুন ৬ দিনের ব্যবধানে। আর খুনের পদ্ধতি এক ও নিহত ব্যক্তির পাশে রক্তে আঁকা যথাক্রমে তিন ও দুটি জিভের ছবি পাওয়া যায়। ঘটনা গুলো জুড়লে দেখা যাবে শেষ খুন হতে চলেছে কালী পুজোর রাতে। এই কাহিনী তে বরুণ তথ্য সংগ্রহে সাহায্য নেয় বেসরকারি গোয়েন্দা জুটি দেবাশীষ ও শিবনাথ এর কাহিনী থেকে ক্রমশ জন্য যায় শুধু খুনের ধরন বা পাশে জিভ নয়, আরো একটি সূত্রে বাঁধা এই খুন গুলো। বহু পুরোনো একটি ঘটনার সঙ্গে এই ব্যক্তি রা জড়িত। কাজেই সেই ঘটনা সূত্রের শেষ ব্যক্তি ঘুম হতে চলেছেন কালী পুজোর রাতে। কি সেই ঘটনা, কিভাবে নিহত ব্যক্তি রা জড়িত, কালী পুজোর রাতের কোনো বিশেষ ভূমিকা আছে কিনা এসব জানতে পড়তেই হবে কালরাত্রি উপন্যাস টি। ইন্দ্রনীল বাবুর এই মেডিক্যাল থ্রিলার টি ও বাকি গুলোর মতোই জমজমাট ও পড়তে শুরু করলে না শেষ করে খায়া যায় না।
যদিও উপন্যাস টি এক নিঃশ্বাসে পড়ার পর আমার মনে হয়েছে একটু তাড়াহুড়ো করে শেষ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের একজনের সম্পর্কে শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত হলো সেটা পরিষ্কার নয়। শিবনাথ আর দেবাশীষ এর সম্পর্কের মধ্যেও কি লেখক কোনো ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন? হয়তো বা বই হিসেবে বেরোলে এগুলোর জবাব পাওয়া যাবে বা পরবর্তী কোনো লেখায়।।
অধীর আগ্রহে লেখকের কলমের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Saswat
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।