বই: যেখানে রোদেরা ঘুমায়
লেখক: শরীফুল হাসান
প্রচ্ছদ: সজল চৌধুরী
প্রকাশক: চিরকুট
নব্বইয়ের দশকের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণাঞ্চলের মফস্বল শহর মির্জাপুরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কাহিনি৷ গল্পের নায়ক ইফতেখারউদ্দিন রুপু। স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রী জামাল খন্দকারের ছত্রছায়ায় মির্জাপুরে অস্ত্র ও মাদকের এক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে সে৷ স্থানীয়দের মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয় সে। ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও যেকোনো দরকারে তাকে পাওয়া যায, তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। তার দুই সার্বক্ষণিক বন্ধু শফিক আর মিলন।
অন্যদিকে সদ্য কলেজে ওঠা মাতৃহীন অনিন্দিতা, তার বাবা শহরের জাদরেল উকিল সাজ্জাদ হোসেন৷ মায়ের অনুপস্থিতিতে আর বাবার ব্যস্ততায় নিজের মতোন করেই বড় হয়েছে অনিন্দিতা।
অনিন্দিতার সাথে একই সাথে কলেজে ভর্তি হয়েছে নিবিড়।
ধীরে ধীরে রুপু, নিবিড়, অনিন্দিতা, মির্জাপুর ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে এগুতে থাকে কাহিনি। এই বই পড়তে পড়তে মনে হয়েছে, এটা কি নব্বই দশকের সিনেমার ত্রিকোণ প্রেমের কাহিনি হতে চলেছে৷ কিন্তু এক পর্যায়ে এসে বদলে যায় রুপু অনিন্দিতা নিবিড় সকলেরই জীবন। মোড় ঘুরে যায় মির্জাপুরের রাজনীতিতে৷ আসলে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে জামাল খন্দকারের মতো গডফাদাররা, ইফতেখারউদ্দিন রুপু তো সেখানে একটা ঘুঁটি মাত্র৷ রুপুকে সরানো কিংবা প্রতিস্থাপন করা তার বাঁ হাতের খেলা৷
নিবিড় চরিত্রটা যেন খুব বেশি আপন হয়ে গিয়েছিল৷ এই চরিত্রের মাধ্যমে কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের সময়টুকুতে মানবমনের দ্বন্দ্ব খু্ব ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।
এই কাহিনিতে শেষে আসল চমক৷ কাহিনিটি শেষ করার পর মনে হয়েছে, এভাবেও কি শেষ করা দরকার ছিল!
এর আগে শরীফুল হাসানের সাম্ভালা এবং রূপকুমারী ও স্বপ্নকুহক পড়েছিলাম। যেখানে রোদেরা ঘুমায় সেই জনরা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক উপন্যাস। লেখকের লেখনির কারণে বইটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আকৃষ্ট করে রেখেছিল, প্রত্যেকটি চরিত্র, ঘটনা যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিল।
এই গল্পে রাজনীতি আছে, ভালোবাসা আছে, বন্ধুত্ব আছে, বিশ্বাসঘাতকতা আছে, প্রতিশোধ আছে। বাড়তি পাওনা হিসেবে আছে নিবিড়ের লেখা কবিতা।
আমার ব্যক্তিগত রেটিং ৪.৫/৫।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Saiful Islam
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।