বই - যে হীরকখন্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল
লেখক - কিশোর পাশা ইমন
রাজনৈতিক থ্রিলার
মুহিব ঢাকা থেকে মফস্বলের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে মেসে থাকতে বাধ্য হয় কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল ১ বছর পর পাওয়া যায় তাও আবার ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দলের অঙ্গুলী হেলনে। এখানে মুহিবের সাথে পরিচয় হয় লিটু , শামীম ইলোরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা সিলেবাসের জায়গায় নারীদের কি পোশাক পরাউচিত কি ভাবে চলাউচিত তা নিয়ে পুরো ক্লাস কাটিয়ে দেয়, এরা ছাত্রদের প্রাপ মর্যাদা ও দেয়না, যদি কোনো ছাত্র প্রতিবাদ করে তো তাকে বছরের পর বছর অকৃতকার্য করিয়ে রাখে, যেহেতু পরীক্ষার খাতা ছাত্ররা দেখতে পাবেন। সেই সময়ে এক রহস্যময় প্রফেসর যোগদেন যার একটা হাত কাটা বিলেত ফেরত এবং তিনি সকল বিদ্যার্থী কে তার প্রাপ্য সম্মান দেন সকলের প্রশ্ন শোনেন ও তার উত্তরদেন , সকলেই তার ক্লাস মনোযোগ দিয়ে করে সকলের তিনি প্রিয় প্রফেসর হাকারবিন, কিন্তু প্রফেসর হাকারবিন আবার টিচার্সদের মধ্যে ঠিক ততটাই অপ্রিয়। মুহিব ভাবেছিলো এই বন্ধুত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিবেশ সে আর সবার মতো কাটিয়ে ফেলবে, কিন্তু
মুহিবের গার্লফ্রেন্ডর সাথে ব্রেক-আপ এর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে সে সাক্ষী হয় একটা খুনের অন্ধকারে সে খুনিদের চিনতে না পারলেও তাদের গলার আওয়াজ শুনতে পায় এবং অনুমান করতে পারে খুনি করা, কিন্তু খুনের এত কাছে থেকেও সে বাঁচাতে যায়না।
সে পরে তার বন্ধুদের সব বলে এবং তা জানতে পারে তাদের সিনিয়ার শামস ভাই খুন হয়েছে যে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমাশীল রাজনৈতিক দলের অপর গ্রুপের নেতার খুব কাছের বন্ধু, যদিও সে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। মুহিব শামস ভাইকে বাঁচাতে না পারার গ্লানিতে ভেবে ঠিক করে যে পুলিশ যেহেতু কিছ করতে পারছে না, তাই সে নিজেই খুনিদের খুঁজে বের করবে , কিন্তু সে জানতে পারে যে খুনি আর কে নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক যুব নেতা রেদোয়ান ও তোফায়েল।
আবার এই তোফায়েল আবার তার বান্ধবী ইলোরা প্রতি আকৃষ্ট যদিও ইলোরা এই সম্পর্ক নিয়ে এক আজব দোলাচলের মধ্যে আছে। মুহিব খুনিদের চিনতে পারলেও কেন খুনটা হলো তা জানতে চেষ্টা সুরু করলো আর এর মধ্যে সে শামস ভাই এর বোন শিয়া ও গার্লফ্রেইএন্ড তূর্ণার সাথে যোগাযোগ করে এবং ধীরে ধীরে এক জটিল পরিস্থিতি র মধ্যে জড়িয়ে পড়ে , এরমধ্যে তার বন্ধু লিটু এক দুরারোগ্য অসুখে পরে যার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার যা লিটুর কৃষক পরিবার জোগাতে পারবেনা, মুহিব পথে নেমে টাকা তুলতে লাগে তার বন্ধুকে বাঁচাতে।
কি হবে লিটুর সে কি বাঁচবে?
কে এই রহস্যময় প্রফেসর হাকারবিন কি তার অতীত? মুহিব কি জানতে পারবে এই খুনের সাথে শামস ভাইয়ের বন্ধু জাকিভাই ও কি জড়িত? শামস ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড তূর্ণা কি এমন জানে যার জন্য সে মুহিবকে হেল্প করতে সাহস করছে না, শিয়া আসলে কে তার পরিচয় কি শুধু শামস ভাইয়ের বোন না আরো বড় কোনো পরিচয় আছে তার? এবং সবচেয়ে বড় প্রশ্ন মুহিব কি জানতে পারবে কেন কোন তথ্য আড়াল করার জন্য শামস ভাইকে খুন হতে হলো এবং এই তথ্য কতটা বীভৎস, সে কি সব জেনে খুনিদের শাস্তি দিতে পারবে আইনের দ্বারা, বা অন্য কোনো উপায়ে, না শেষ পর্যন্ত মুহিব হেরে যাবে?
এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর জানতে বইটি পড়তেই হবে। এই বইটা কে খালি থ্রিলার বললে চবেনা এটা বন্ধুত্বের গল্প, ভালোবাসার গল্প, রাজনীতির নগ্ন রূপের গল্প, সমাজ পরিবর্তনের কারণের গল্প, শিক্ষাব্যবস্থার অন্ধকার দিকের গল্প। লেখক খুব সুন্দর ভাবে এতগুলো দিককে একসাথে তুলে ধরেছে এবং কখনো একটা সমস্যাকে অন্য সমস্যা থেকে আলাদা লাগেনি সব কিছুকে একসাথে বেঁধে রেখেছেন। এবং শেষটাও এমন ভাবে হয়েছে যে পরবর্তী খণ্ডও আসতে পারে তার সূত্রও রেখেছেন।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Puma
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।