জগন্নাথ কাহিনী - দুলেন্দ্র ভৌমিক
লেখক পরিচিতি: কয়েকদিন আগে দুলেন্দ্র ভৌমিক লিখিত "জগন্নাথ কাহিনী" বইটি পড়ার সুযোগ পেলাম। দুলেন্দ্র ভৌমিক শিশু সাহিত্যিক হিসাবে সমধিক পরিচিতি লাভ করেছেন। লিটল ম্যাগাজিন, সাপ্তাহিক বসুমতী পত্রিকা, আনন্দবাজার পত্রিকাতে তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হত। পরবর্তীকালে আনন্দলোক পত্রিকার সম্পাদক রূপে তিনি যোগ দেন। তিনি বেশ কিছু উপন্যাসও লিখেছেন। জগন্নাথ দেবের ধরায় আগমনের উপর লেখা "জগন্নাথ কাহিনী" বইটি এক ভিন্ন স্বাদের রচনা।
এই বইটির মূল বিষয়বস্তু পুরীর জগন্নাথ মন্দির ও তার ইতিহাস। আজকে যে মন্দির আমরা দেখতে পাই তার ইতিহাস সুপ্রাচীন। মহারাজ ইন্দ্রদুম্ন্যা ও তার নীলমাধব কিভাবে আজকে আমাদের ভালোবাসার শ্রীপ্রভু জগন্নাথ দেব হলেন তার ইতিহাস লেখক খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। যারা ইতিহাস নির্ভর বই পড়তে তাদেরকে অনুরোধ করবো একবার এই বইটি পড়ে দেখতে পারেন। কথা দিচ্ছি, ভালো লাগবে।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Somnath Seal
Banglapdf.net
কিভাবে ডাউনলোড করবেন কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না?:
১- নতুন সব বইয়ের ক্ষেত্রে (2019): Click Here
২- আপনার কাছে থাকা কোন বই শেয়ার করতে চান? দেখে নিন : Click Here
৩- কোন বইয়ের জন্য কত ক্রেডিট থাকছে : Click Here
Review Softcopy
Review জগন্নাথ কাহিনী - দুলেন্দ্র ভৌমিক ( Jagannath Kahini - Book review)
Thread starterSanjhbati Start dateToday at 11:12 AM
Users Who Are Viewing This Thread (Total: 3, Members: 3, Guests: 0)
hriditapromilaDr.star Shirsendu
Jump to new
Watch
Sanjhbati
Sanjhbati
Member Contributor
Today at 11:12 AM
New
Add bookmark
#1
মঙ্গলময় জগন্নাথদেব সকলের মঙ্গল করুন। আজ আমি এক প্রাচীন কাহিনী ও সেই সম্পর্কিত একটি বইয়ের কথা বলব। যারা পৌরাণিক গল্প পছন্দ করেন তাঁরা পড়ে দেখতে পারেন।
Grid-Art-20230110-121509365.jpg
বইয়ের প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা ও পশ্চাৎ পৃষ্ঠা
বই - জগন্নাথ কাহিনী
লেখক - দুলেন্দ্র ভৌমিক
প্রকাশক - আনন্দ পাবলিশার্স
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ - সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়
প্রকাশকাল - জানুয়ারী ২০১৮
পৃষ্ঠা সংখ্যা - ৯৬
মুদ্রিত মূল্য - ৩০০/-
জগন্নাথ কাহিনী - দুলেন্দ্র ভৌমিক ( বইয়ের লিঙ্ক)
লেখক পরিচিতি: কয়েকদিন আগে দুলেন্দ্র ভৌমিক লিখিত "জগন্নাথ কাহিনী" বইটি পড়ার সুযোগ পেলাম। দুলেন্দ্র ভৌমিক শিশু সাহিত্যিক হিসাবে সমধিক পরিচিতি লাভ করেছেন। লিটল ম্যাগাজিন, সাপ্তাহিক বসুমতী পত্রিকা, আনন্দবাজার পত্রিকাতে তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হত। পরবর্তীকালে আনন্দলোক পত্রিকার সম্পাদক রূপে তিনি যোগ দেন। তিনি বেশ কিছু উপন্যাসও লিখেছেন। জগন্নাথ দেবের ধরায় আগমনের উপর লেখা "জগন্নাথ কাহিনী" বইটি এক ভিন্ন স্বাদের রচনা।
পৌরাণিক কাহিনী বরাবরই আমায় আকর্ষিত করে। তাই এই বইটা হাতে পেয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই পড়ে ফেলেছিলাম। একসময় এই গল্প যদিও পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু সে সময় তা পড়া হয়নি। লেখক ভূমিকাতেই একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে এই কাহিনী মূলত জগন্নাথ ধামের স্থানীয় মানুষ তথা পুরীধামের পূজারী - পুরোহিতদের থেকে শোনা জনশ্রুতি ও কিছু গ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর নির্ভর করে রচিত। তাই এর কাহিনী বৈজ্ঞানিক বা ঐতিহাসিক সত্যতা প্রতিষ্ঠিত করেনা। পাঠককে পড়ার সময় এই বিষয়টি মনে রেখেই পড়তে হয়। কারণ এর বেশ কিছু কাহিনী সত্য কাহিনী ও প্রেক্ষাপটের থেকে অনেক দুরে এবং কিছু ঘটনার উদ্ঘাটনও করেনা। লেখকের কথা মতই জগন্নাথ দেবের আখ্যান পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করতে হলে তা যে সুবিশাল আকার নিত তা সম্পাদকের নির্দেশানুযায়ী মাত্র ১২ টি অধ্যায়ে লেখা সম্ভব ছিল না। তাও জোর করে এই কাজ করতে গিয়েই সম্ভবত বইয়ের শেষোক্ত অধ্যায়গুলোতে তাড়াহুড়ো করে যেমন তেমনভাবে লেখা শেষ করার লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। তাও যেহেতু পৌরাণিক গল্প কথকারের কল্পনায় মিশে নতুন আখ্যান রচনা করতে আমরা প্রায়শই দেখে থাকি, সেই হিসাবে এই কাহিনীও পড়তে মন্দ লাগে না।
সম্পূর্ণ বইটি বারোটি অধ্যায়ে বিভক্ত ঃ-
১. নীলমাধবের সন্ধানে
২. বিদ্যাপতির প্রতীক্ষা
৩. বিদ্যাপতি ও ললিতা
৪. ললিতার পাণিপ্রার্থনা
৫. বিদ্যাপতি ও ললিতার বিবাহ
৬. ললিতার প্রার্থনা
৭. নীলমাধব দর্শন
৮. বিদ্যাপতির বিদায়
৯. ইন্দ্রদ্যুম্নের শবরপল্লী আক্রমণ
১০. ব্রহ্মার মর্ত্যে আগমন
১১. দারুব্রহ্ম আনয়ন
১২. দারুব্রহ্মে শ্রীজগন্নাথ ত্রিমূর্তিতে প্রকাশিত হলেন
মালব্যরাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন রাত্রে এক আশ্চর্য স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত হন এবং পরবর্তী সকালে এক দেবদূতের আগমন ঘটে তাঁর রাজসভায় যিনি তাঁর দেখা স্বপ্নাদেশকেই ইঙ্গিতে নীলমাধবের ধরায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আদেশ বলে অভিহিত করে উধাও হয়ে যান। কিন্তু নীলমাধবের সন্ধান জানান না, তাঁকে খুঁজে বার করা রাজার কর্তব্য বলে নির্দেশ করেন তিনি। ন্যায়পরায়ণ, অতীব ধার্মিক রাজা তাঁর দেশের সমস্ত পুরোহিতকূলকে ভগবান নীলমাধবের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রেরণ করলেন। সবাই ব্যর্থ মনোরথে কিছুদিনের মধ্যেই ফিরে এলেন। শুধু পুরোহিত বিদ্যাপতি ফিরলেন না। তিনি নীলমাধবের সন্ধান করতে করতে শবরপল্লীতে উপস্থিত হলেন এবং শবররাজ বিশ্ববাসুর গৃহে আথিতেয়তা গ্রহণ করলেন।
কালক্রমে শবর রাজকন্যা ললিতার অথিতি আপ্যায়নে ও রূপে মুগ্ধ হয়ে বিদ্যাপতি তাঁর পানিগ্রহণ করলেন। এই সময়কালের মধ্যে বিদ্যাপতি আবিস্কার করলেন প্রতিরাতের মধ্যযামে শবররাজ গোপনে কোথাও গমন করেন এবং ভোররাতে গৃহে ফিরে আসেন। ললিতাকে প্রশ্ন করেও এর উত্তর জানতে পারেন না। বিবাহ পরবর্তীকালে স্ত্রীর কর্তব্যের দোহাই দিয়ে বিদ্যাপতি ললিতার থেকে বিশ্ববাসুর মধ্যরাতে যাত্রার গোপন রহস্য জানতে পারেন এবং পুলকিত হরষিত হৃদয়ে উদ্বেলিত হন প্রভু নীলমাধবের সন্ধান পেয়ে। এরপরে ঘটনা পরম্পরায় কিভাবে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন প্রভু নীলমাধবকে ধরায় প্রতিষ্ঠিত করেন, জগন্নাথের পুরী ধামের কাহিনী, প্রভুর মূর্তি প্রস্তুতের কাহিনী, নীলগিরি পর্বতের উপর প্রভুর দারুব্রহ্ম মূর্তি প্রতিষ্ঠার বিস্তারিত কাহিনী জানতে অবশ্যই বইটি পড়া প্রয়োজন।
বইয়ের বিশেষত্ব :
এই বইটি ঠিক কল্পিত উপন্যাস নয়। একটি প্রাচীন ধর্মীয় গাথাকে অবলম্বন করে গড়ে উঠেছে। অত্যন্ত সাবলীল ভাষা। শিক্ষণীয় বিষয়গুলির মধ্যে আমাকে যা আকর্ষিত করেছে তা হল প্রভুর প্রতি আত্মনিবেদন। মালব্যরাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন এমন একজন রাজা যিনি নিজের স্বার্থের থেকে দেশের ও দশের স্বার্থকে এগিয়ে রাখেন। জগতবাসীর মঙ্গল চিন্তায় সর্বদা নিয়োজিত প্রাণ। যে কোনও দেশের সর্বাধিকারীর চরিত্র এই প্রকার হওয়া একান্ত কাম্য। কয়েকটি বাক্য বই থেকে তুলে দিচ্ছি রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর মহত্ব প্রকাশের প্রমাণ রূপে —
রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন জগন্নাথদেবকে আভূমি প্রণতি জানিয়ে বললেন - "হে করুণাময় জগন্নাথ, এই মন্দির আমি সকলের জন্য তৈরি করেছি। সবজাতির নিমিত্ত মন্দিরের দ্বার উন্মুক্ত থাকবে। জগৎবাসীই এই মন্দিরের সেবক ও রক্ষক। ভবিষ্যতে রাজকুলের কেউ যাতে আপনার মন্দিরকে নিজের সম্পত্তি বলে দাবী করতে না পারে এবং মন্দির নির্মাণের জন্য গর্ব করার সুযোগ না পায় সেজন্য আমাকে বর দিন যাতে আমি নির্বংশ হতে পারি। আপনার করুণা আপনার ভক্তের ওপরই বর্ষিত হবে। ঈশ্বর কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না। আমি চাই, এই মন্দির সকলের হোক। সেই কার্যে ভবিষ্যতে যদি আমার বংশধররা বাধা দেয় তাই আমি নির্বংশ হতে চাই।"
জগন্নাথদেব মধুর দৃষ্টিতে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর দিকে ক্ষণকাল তাকিয়ে বললেন, "তথাস্তু। তোমার প্রার্থনা পূর্ণ হবে।"
রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন এরপর বহুকাল জীবিত ছিলেন ও পরম নিষ্ঠা ও ভক্তির সাথে প্রভু নীলমাধবের সেবা করে গেছেন। কলিকালের সূচনার পর অনেক রাজা এই মন্দিরে বিধিমত পুজো করে গেছেন। তাঁদের মধ্যে রাজা অনঙ্গ ভীমদেবের নামই সর্বাপেক্ষা বেশি পরিচিত। শ্রীজগন্নাথের বর্তমান মন্দির অনন্তবর্মণ চোড় গঙ্গাদেবের রাজত্বের ১০৪২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১১২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত। ইন্দ্রদ্যুম্নর মন্দির কালক্রমে ভগ্ন ও জীর্ণ হয়ে যাওয়ায় গংগ বংশীয় সম্রাট চোড়গঙ্গ সেই পুরাতন মন্দিরের উপরেই বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করেন। তারপর যোগজন্মা শ্রীঅনঙ্গভীমদেব বহু লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা ব্যয় করে মন্দিরের সুরক্ষা, সেবাপূজা ও নিয়োগ ব্যবস্থা প্রচলন করেন।
অন্যমতে অনঙ্গভীমদেবই এই মন্দির নির্মাণ করেন। শ্রীনীলকণ্ঠ রাজগুরু মহাপাত্র পরমহংস বাজপেয়ীর অধ্যক্ষতায় আনুমানিক ৫০ লক্ষ টাকায় তা নির্মিত হয়। ১১৮৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ শুরু হয় এবং ১২৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শেষ হয়।
বইয়ের কাহিনী সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে দ্বিমত দেখা দিলেও এই বইয়ের অলংকরণ সম্পর্কে অতি বড় নিন্দুকও নিন্দা করতে লজ্জা বোধ করবেন। এই বইয়ের সবথেকে আকর্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এতে প্রকাশিত অমূল্য অলংকরণ সমূহ। চিত্রশিল্পী সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের আঁকা চিত্রগুলি এই বইয়ের এক অমূল্য সম্পদ। আঁকার গুণে চরিত্ররা জীবন্ত হয়ে উঠেছেন। পাঠকের মনে বিদ্যাপতি, ললিতা, রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য প্রত্যেকের চেহারা এই আঁকাগুলির মাধ্যমে পরিস্ফুট। এক একটি ছবি চিত্রাঙ্কনের জগতেও সমানভাবে উল্লেখের দাবী রাখে।অসাধারণ উজ্জ্বল রঙের মিশ্রণ, সূক্ষ্ম তুলির টানে নিখুঁত অবয়ব ও গল্পের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ অলংকরণের জন্য শিল্পী পৃথকভাবে প্রশংসার দাবী রাখেন। অসাধারণ সমস্ত অলংকরণ মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়। বহুল চর্চিত - পরিচিত গল্পের গুণে নয়, এই বই শুধুমাত্র এই সমস্ত আঁকার জন্যই সংগ্রহে রাখা যায়। আমি কয়েকটি ছবি দিলাম। সব দেওয়ার তো সুবিধে নেই। বইটি পড়ে ভালোলাগার সাথে সাথে অলংকরণও অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। প্রতিটি পৃষ্ঠা লেখার সাথে কাহিনীর সামঞ্জস্যে একটি করে চিত্র দেওয়া হয়েছে, যা এই বইয়ের মূল্যকে সহস্রগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বই পড়ার পর থেকে মুগ্ধ হয়ে শুধু চিত্রগুলিই দেখতে হয়। মাত্র ৯৬ পৃষ্ঠার বইয়ের দাম ৩০০ টাকা দেখে অনেকেই ভ্রূ কুঞ্চিত করতে পারেন। কিন্তু বইয়ের ভেতরের ছবিগুলো দেখলে সেই খেদ দুর হতে এক মুহূর্তও লাগে না।
বাকি সকল চিত্র ও সম্পূর্ণ কাহিনী জানার জন্য বইটি অবশ্যই পড়তে হবে। বাংলা সাহিত্যে এই ধরণের গ্রন্থ বিরল নয়। কিন্ত ছবির প্রচ্ছদ ও অলংকরনের জন্য এই বইটি অতি অবশ্যই অন্য স্থান দখল করতে বাধ্য।
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।