ইন্দুবালা ভাতের হোটেল
লেখক : কল্লোল লাহিড়ী
সদ্য পড়ে শেষ করলাম ইন্দুবালা ভাতের হোটেল বইটি।ইন্দুবালা ভাতের হোটেল'- শুধু কেবল হোটেল নয়। এক নারীর জীবনের আটপৌরে গল্পের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে কেবল খাবার রান্না হয় না। বিনিময় হয় ভালোবাসার। তাই তো চিরকালের ভালোবাসার কাঙাল ইন্দুবালা কখনোও খাবারের পয়সা নিয়ে কাউকে কিছু বলতে পারেন না। এ জীবনে কত লোকের কাছে তিনি টাকা পান তার হিসেব নেই। আর এ নিয়ে তার আক্ষেপও নেই।নিজ হাতে খাওয়ানোতেই তার সকল তৃপ্তি।
পুরো উপন্যাস জুড়ে শুধু হরেক পদের রান্নার বিবরণ। সেই সাথে ক্ষণে ক্ষণে পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ। ভালো লেগেছে। বইটি পড়তে গিয়ে একবারও মনে হয়নি থাক, আর পড়বনা।
রিভিউটি লিখেছেনঃ 𝗦𝗮𝗺𝗿𝗮𝘁 𝗠𝗶𝘁𝗿𝗮
বই - ইন্দুবালা ভাতের হোটেল
লেখক - কল্লোল লাহিড়ী
প্রকাশক - সুপ্রকাশ
মুদ্রিত মূল্য - ২৩০ টাকা
"শুধু যে মানুষটি আজ উনুনের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি একজন শিল্পী। যিনি নতুন সৃষ্টির উন্মাদনায় মেতে উঠেছেন। তাঁর বুড়ো ডালপালাগুলো চারিদিক থেকে যেন শুষে নিচ্ছে তারুণ্যের আস্বাদ। যে স্বাদে রয়ে গেছে নতুন করে বেঁচে থাকার আকাঙ্খা " - এভাবেই সারা উপন্যাস ধরে বর্ণিত হয়েছে খুলনার কলাপোতা গ্রামের ইন্দুবালার জীবন।
গভীর জীবনদর্শন ধরা পড়েছে পুরো উপন্যাস জুড়ে। বাড়ির সবার আদরের "ইন্দু" র সাথে বিয়ে হয় দোজবর মাতাল মাস্টার রতনলাল মল্লিকের, যিনি বিকালে তাস পেটায়, রাতে বৌ পেটায়, ভোরে সোহাগ করে আর সকালে নারী ধরে। তাঁর বাবাকে সম্পূর্ণ অন্ধকার এ রেখে, ভুল বুঝিয়ে কলকাতায় বিয়ে দেওয়া হয় ইন্দুবালার, শ্বাশুড়ি তাঁর ছেলের ভুল বুঝতে পারলেও বৌমার মন কখনও বুঝতে পারেনি, বিয়ের সমস্ত গয়না যখন লম্পট স্বামীর কারণে খোয়া গেছে, এমন অবস্থায় ৩ সন্তানকে রেখে পরলোকের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেন রতনলাল।
এরপর থেকেই শুরু হয় ইন্দুবালার আসল লড়াই, বাজারের মাছবিক্রেতা লছমীর থেকে টাকা ধার করে খোলেন ইন্দুবালার হোটেল যা তাঁর কলিজার টুকরো, যত্ন করে রান্না করাকে তিনি নিয়ে যান শিল্পের পর্যায়ে। যাঁর হাতের রান্না খেতে দূরদূরান্ত থেকে ভিড় জমান শহরের বাবুরা, মেসের কচিকাঁচারা।
তাঁর "জীবনানন্দ" মনিরুল এর কথাও ধরা পড়েছে উপন্যাসে , কেবল ধর্ম যাদের সম্পর্কে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তী জীবনে নকশাল অলোক এর মধ্যে তাঁর মৃত ভাইয়ের ছায়া খুঁজে পেলেও সেও হারিয়ে যায় অচিরেই। তাই জীবনের সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ তিন ছেলে-মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করে নিজেই তাঁদের থেকে আলাদা হয়ে যান কারণ তিনি "বোঝা" হয়ে থাকতে চান না। চিরকালের সঙ্গী, কাজের লোক ধনঞ্জয় বা ধনাকে নিয়ে থেকেছেন ছেনু মিত্তির লেনের এই ভাতের হোটেল এ।
এত বিবিধ চরিত্র কে ব্যাখ্যা করা আমার মতো ক্ষুদ্র পাঠকের কাজ নয়। উপন্যাসের শেষের দিক পাঠকের হৃদয়কে উদ্বেলিত করে দেয় আর তার জন্যই হয়তো বইটা স্থান পেয়ে যায় ক্লাসিকের তালিকায়।
"বাড়ি থেকে অনেকদূরে স্বজন পরিজন ছেড়ে চলে আসা এক অচেনা অজানা শহরে শুধুমাত্র একটা ভাতের হোটেল কীভাবে তাদের বাড়ির কথা, মায়ের কথা, ঠাম্মার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে " - সেই নিয়েই এই উপন্যাস।
"পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছেন যাঁরা চিরকালের জন্য একা হয়ে যান। তখন তাঁরা সেই একাই একটা জগতের মধ্যে বাঁচতে ভালোবাসেন। ইন্দুবালার সেই নির্জন জগৎ হলো তাঁর ভাতের হোটেল।"
আর এই ইন্দুবালা ভাতের হোটেল এ আপনাকে স্বাগত।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Yudhistir সৌপর্ণ
নাম : ইন্দুবালা ভাতের হোটেল
লেখক : কল্লোল লাহিড়ী
প্রকাশনী : সুপ্রকাশ
পৃষ্ঠাসংখ্যা :১১১
উপন্যাসটি এক নারীর আত্মসম্মানের সঙ্গে আত্মপ্রতিষ্ঠার কাহিনী খুব সুন্দর ভাবে বর্ণিত হয়েছে। ইন্দুবালার জীবন সংগ্রামের কথা, তার বিবাহিত জীবন, সাংসারিক সুখ দুঃখ যেমন বর্ণিত হয়েছে তার থেকেও বেশি প্রকাশ পেয়েছে তার শেকড়ের টান, যেখানে তার বাল্যকালের ঠাকুরমা মা-বাবা ভাই বোন তাদের অকাল নিয়তি তাদের ভালোবাসা সঙ্গে বাংলাদেশের তার শৈশব কাল, ইন্দুবালার বেড়ে ওঠা সবটাই লেখক সুনিপুণভাবে পাঠকের মনে একটা ছবি আঁকতে পেরেছেন।পরিবেশ নদী-নালা ছেড়ে কলকাতার নগর কেন্দ্রিক পরিবেশে কিভাবে জীবন নির্বাহ করলেও তার মনের গভীরে রয়ে গেছে তার সেই বাল্যকালের গ্রাম, শৈশবের মানুষজন নদী নালা প্রকৃতি যা ইন্দুবালা কে সেই সহজ সরল নদীর মতই মন দিতে পেরেছে, যেখানে ব্যবসায়িক মানসিকতা ছেড়ে ইন্দুবালা শুধুমাত্র মানুষকে আপ্যায়ন করার মানসিকতায় বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। যা পাঠকদের মন ভরিয়ে দেয়।
সেভাবেই উপন্যাসের প্রতিটি পরিচ্ছদে সুন্দর সুন্দর বাংলার হারিয়ে যাওয়া রান্নার ও রন্ধন প্রণালী পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে ও নিখুঁত ভাবে চিত্রিত হয়েছে। যেখানে প্রত্যেকটি রান্নার সাথে সাথেই তার প্রিয় কোন মানুষের স্মৃতি চরনা করা হয়েছে। যা কখনো কখনো হৃদয়কে খুব বেদনাতুর করে তুলেছে যেখানে লেখক এর সার্থকতা।
সর্বোপরি লেখক এর সচ্ছল সাবলীল প্রকাশভঙ্গি ও বাস্তবতা উপন্যাসটি কে যথার্থ করে তুলেছে।
রিভিউটি লিখেছেনঃ দিব্যেন্দু
পাঠ প্রতিক্রিয়া
বই: ইন্দুবালা ভাতের হোটেল
লেখক: কল্লোল লাহিড়ী
প্রকাশক: সুপ্রকাশ
মুদ্রিত মূল্য: ২৩০ টাকা
প্রথম প্রকাশ: জুলাই, ২০২০
প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ: মেখলা ভট্টাচার্য্য
ISBN : 978-81-9460-090-9
রন্ধন শিল্প এক মহান শিল্প। আর বাংলার রন্ধন স্বাদ ও সুগন্ধে জগৎ জোড়া খ্যাতি। এখনও দিদা ঠাম্মার হাতের রান্নার যাদু বাঙালির ঘরে ঘরে।
বিভূতিভূষণ এর " আদর্শ হিন্দু হোটেল " এর হাজারী ঠাকুরের রন্ধন শিল্প বাঙালি পাঠক মাত্রই জানবেন।
এখানেও আর এক রন্ধন শিল্পী, ওপার বাংলার খুলনার অখ্যাত এক পল্লী গ্রাম 'কলাপোতা' থেকে বৈবাহিক সূত্রে আগত কলকাতার ছেনু মিত্তির লেন এর ইন্দুবালা। তারই জীবনের নানান স্মৃতি চারণার মধ্যে দিয়ে ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের গল্প এগিয়ে গেছে।
এই গল্পে লেখক ইংরেজি সাহিত্যের আধুনিকতার Stream of Consciousness ধরনে বর্ণনার জাল বুনেছেন সুনিপুণ ভাবে।
এই বই উপন্যাস হয়েছে নাকি ছোটো গল্প কেই টেনে বড় করা হয়েছে সেই বিতর্কে আমি যাবনা। পাঠক মাত্রই রুচি বৈচিত্র্য থাকবে। আমার অসাধারন লেগেছে এই বই।
একটাই ত্রুটি লক্ষ্য করেছি, গল্পের কয়েকটি বানান ভুল, পরবর্তি সংস্করণে সেগুলো ঠিক হবে আশা করা যায়। তাছাড়া বই এর প্রচ্ছদ আমার বেশ ভালো আকর্ষণীয় ও মানানসই লেগেছে।
ইন্দুবালা ভাতের হোটেল অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় লেখা। পড়তে কক্ষনোই ক্লান্তি অনুভূতি আসেনি। লেখকের অসাধারন গল্প বলার ভঙ্গিমা তে আমি মুগ্ধ।
ভালো লেগেছে গল্পের অল্প পরিসরে মাত্র আট'টি অধ্যায়ে ইন্দুবালা তার জন্ম ভূমির স্মৃতি চারণ করেছেন। মেয়েদের কাছে শিকড় যে কি জিনিস, বাপে র বাড়ী যে কি জিনিস, এতো টান... মেয়ে দের এতো টান, জন্ম ভূমির প্রতি এতো নিবিড় সম্পর্ক, সে কথা ইন্দুবালা ভাতের হোটেল এর সাক্ষাৎ দেবী অন্নপূর্ণা স্বরূপ বিধবা ইন্দুবালা'র ক্ষেত্রেও যেমন সত্য, হত দরিদ্র বিহারী কমলা গাঁও এর মেয়ে লছমী'র ক্ষেত্রেও ততটাই সত্য। এই বই না পড়লে জানতেই পারতাম না, শিকড় ছেঁড়ার যন্ত্রনা নারী হৃদয়ের কোন গহীনে আঘাত করে।
লেখক অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে আট টি অধ্যায় এর মধ্যে লিখেছেন সত্তর পেরিয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধ মায়ের ফেলে আসা অতীত জীবনের উপাখ্যান।
এখানে প্রতি অধ্যায়ের পাতায় পাতায় মিশে আছে জন্ম ভিটার নারীর টান, হারিয়ে যাওয়া দেশের প্রকৃতির আহ্বান। হারিয়ে যাওয়া কিশোরীর প্রেমের গল্প। সেই প্রেম কিশোরীর একান্ত আপনার। আজ সত্তর পেরিয়ে গেলেও, হাজার কাজের চাপের মধ্যে থেকেও ফেলে আসা কিশোরী বয়সের প্রেম কে ভোলা যায়না।
গল্পে স্থান পেয়েছে একাত্তরের আন্দোলন, খান সেনাদের নির্মম অত্যাচার, ভাষা আন্দোলন, দেশ ভাগের যন্ত্রণা, নকশাল আন্দোলনের টুকরো টুকরো স্মৃতি।
এই গল্প ঠাকুমা ঠাম্মার কাছে রান্না শেখার গল্প। সবজি ফলমূল চিনে নেওয়ার গল্প। হাতে বানানো বাংলার পিঠে পুলি চাটনি আচার এর গল্প।
গল্পের ছত্রে ছত্রে রয়েছে কিশোরী আবেগের সোনাঝরা সেই দিন গুলো, প্রেমের শিউলি ফুল,
প্রথম মন হারানো, মুসলিম মানব কিশোর মনিরুল এর মধ্যেও হিন্দু বংশী ধারী কানাই দর্শন।
এই গল্পে পাই এক নারী হৃদয় এর ব্যথা বেদনার নিটোল বর্ণনা। জীবন সংগ্রামে অসম্ভব জেদ, হার না মানার মানসিকতা। একলা হাতে, বিধবা মায়ের কঠোর পরিশ্রম ও সন্তান সন্ততি দের মানুষের মতো মানুষ করার গল্প।
এই গল্পে নারীর দেবী রূপ কে সাক্ষাৎ মা
অন্নপূর্ণা রূপে চিত্রায়িত করেছেন লেখক। মা এক শিল্পীর নিপুণ বর্ণনায় প্রাণবন্ত স্মৃতি চারন করছেন। বর্তমান ও অতীত মিলে মিশে একাকার।
এই গল্প চিরন্তন এক মায়ের গল্প। জীবে প্রেম ও সেবার গল্প।
অসৎ লম্পট জুয়াড়ি স্বামী ও শাশুড়ির সাথে অম্ল মধুর ঘরকন্না পাতার গল্প।
আর এই সমস্ত গল্পের মধ্যমণি — ইন্দুবালা, আর তার ভাতের হোটেল।
লেখকের নিপুণ লেখনীতে মানস পটে জ্বলজ্বল করে ওঠে না দেখা খুলনার কোনো এক অখ্যাত কলাপোতা গ্রাম, কপোতাক্ষ নদ , চুইঝাল এর মাচা, শিউলি ফুল মান কচুর বন, দুগ্গা ঠাকুর প্রতিমা।
ভাগ্যের সাথে এক সামান্য মেয়ের অসামান্য জেদ-লড়াই, দেশ ছেড়ে আসার যন্ত্রণা, ফেলে আসা প্রেম, সব যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। যেন চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে কলকাতার ছেনু মিত্তির লেনের এক বিধবা নারীর জীবনযুদ্ধের দিনলিপি। যেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ম ম করে ছাপোষা বাঙালির চিরন্তন ভালোবাসার বিউলির ডাল, আলুপোস্ত, চিংড়ি মাছ, কুমড়োর ছক্কা, জলপাই কতবেল এর চাটনি, মালপোয়া আর চন্দ্রপুলির মন মাতাল করা সুবাস আর ওপার বাংলা - এপার বাংলার কত শত চেনা অচেনা মুখ।
যাদের আনন্দে পাঠক হেসে ওঠে আবার যাদের দুঃখে মন ভার হয়ে যায়। চোখের কোনে জল জমে মুক্তার মতো।
ওপার বাংলার না দেখা প্রাণের প্রিয় ভাই, ঠাম্মা, স্বর্ণময়ী, মনিরুল, এপার বাংলার অলোক, উড়ে বামুন ধনঞ্জয়, বিহারী অসহায় মেয়ে লছমী —
বড়ছেলে প্রদীপ, সুনয়নি, ঝন্টু, সঞ্চারী।
সবাইকে যেন বড় বেশি আপনার মনে হয়, বড় বেশি নিজের মনে হয়।
রান্না, শুধু জঠরগ্নি নির্বাপণ এর জন্য নয়, একটা শিল্প — এটাই বারবার মনে হয় এই বই পড়তে গিয়ে।
বাড়ির লক্ষ্মী সব্জি বাগান, পুকুরের জল আর একরাশ ভালোবাসার ছোঁয়ায় আমাদের ঠাকুমা - দিদিমারা যুগে যুগে হেঁসেলে যে ম্যাজিক সৃষ্টি করে গেছেন, তার কথাই যেন বলে যায় এই বই।
ছোট ছোট কাহিনী, ছোট ছোট চরিত্রের মধ্য দিয়ে এক চির শাশ্বত বার্তা যা কিনা ইন্দুবালার মুখ দিয়ে লেখক আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন, তা হলো — '"জীবে প্রেম "'। জিব সেবা। নিখিল মানবের সেবা। সেবায় ধর্ম। ভোগের চেয়ে ত্যাগের মহিমা বেশি। প্রতি টা অভুক্ত প্রাণী কেই খাবার দাও। সবার প্রতি মায়া, দয়া প্রেম। প্রেম এক বড় সম্পদ।
এই প্রেম যেন শাশ্বত হয়, এই ইন্দুবালার ভাতের হোটেল এর মতো আরো এমন অনেক অনেক ভাতের হোটেল এর যেন শ্রীবৃদ্ধি হয়, এটাই কাম্য। যাদের সব থেকেও কিছু নেই সময়ের তাগিদে এক মুঠো ভাত এর জন্য হাহাকার করে তারা যেন "ইন্দুবালা ভাতের হোটেল" এর সন্ধান পায়।
আর ইন্দুবালা? গল্পের নায়িকা, সে তো রইলই অমর হয়ে আর তার কলাপোতা গ্রামের এক বুক স্মৃতি নিয়ে পাঠকের অন্তরে সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা দেবী হয়ে।
আর বিহারী মেয়ে হতভাগী অসহায় গরীব লছমী? মাছ বিক্রি করে যে কিনা সংসারের ভরণ পোষণ করে।
কাঁদিয়ে গেলো শেষটায়।চোখের জলে বিদায়। লক্ষ্মীর বিসর্জন। মাছের ঝুড়ি নিয়ে ট্রেন লাইন পারাপার। ভোরের কুয়াশা, না খাওয়া পেটে হয়তো মাথা চক্কর দেয়।দৈত্যাকার ট্রেনে দেহ থেকে মাথা আলাদা করে দেয় তার।
ইন্দুবালা ভাতের হোটেল এর সাক্ষাৎ লক্ষ্মী ছিল মেয়েটা। ইন্দুবালা র সঙ্গে যেন নিজের বোনের সম্পর্ক তার। তাই তো দেখি, দেহ সনাক্ত করার সময়, নিথর দেহের কাছে গিয়ে ইন্দুবালার শেষ আর্তনাদ যেনো নিজেরই বোনের জন্য ডুকরে কেঁদে ওঠেন:
"উনুন ধরিয়ে বসে ছিলাম তোর জন্য। তুই এলিনা। এমন তো কথা ছিলনা রে লছমী!"
এই গল্পের প্রতিটি শাক সব্জি ফল মূল মাছ চিংড়ী কুমড়ো কচুতে জড়িয়ে আছে ইন্দুবালা'র শৈশব। জন্মভূমির প্রতি মানুষের অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসা। মোহ মমতা। এক কিশোরী মেয়ের আবেগ বাবা, মা, ঠাম্মা, ভাই এর ভালোবাসা। আর প্রথম প্রেম মনিরুল। শিউলি ফুল। সহজ সরল এক চিরন্তন সুখপাঠ্য বই ইন্দুবালা ভাতের হোটেল। হৃদয়ে রয়ে যাবে...
পাঠ প্রতিক্রিয়া: বিশ্বজিৎ রায়
বাড়ির লক্ষ্মী সব্জি বাগান, পুকুরের জল আর একরাশ ভালোবাসার ছোঁয়ায় আমাদের ঠাকুমা - দিদিমারা যুগে যুগে হেঁসেলে যে ম্যাজিক সৃষ্টি করে গেছেন, তার কথাই যেন বলে যায় এই বই।
ছোট ছোট কাহিনী, ছোট ছোট চরিত্রের মধ্য দিয়ে এক চির শাশ্বত বার্তা যা কিনা ইন্দুবালার মুখ দিয়ে লেখক আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন, তা হলো — '"জীবে প্রেম "'। জিব সেবা। নিখিল মানবের সেবা। সেবায় ধর্ম। ভোগের চেয়ে ত্যাগের মহিমা বেশি। প্রতি টা অভুক্ত প্রাণী কেই খাবার দাও। সবার প্রতি মায়া, দয়া প্রেম। প্রেম এক বড় সম্পদ।
এই প্রেম যেন শাশ্বত হয়, এই ইন্দুবালার ভাতের হোটেল এর মতো আরো এমন অনেক অনেক ভাতের হোটেল এর যেন শ্রীবৃদ্ধি হয়, এটাই কাম্য। যাদের সব থেকেও কিছু নেই সময়ের তাগিদে এক মুঠো ভাত এর জন্য হাহাকার করে তারা যেন "ইন্দুবালা ভাতের হোটেল" এর সন্ধান পায়।
আর ইন্দুবালা? গল্পের নায়িকা, সে তো রইলই অমর হয়ে আর তার কলাপোতা গ্রামের এক বুক স্মৃতি নিয়ে পাঠকের অন্তরে সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা দেবী হয়ে।
আর বিহারী মেয়ে হতভাগী অসহায় গরীব লছমী? মাছ বিক্রি করে যে কিনা সংসারের ভরণ পোষণ করে।
কাঁদিয়ে গেলো শেষটায়।চোখের জলে বিদায়। লক্ষ্মীর বিসর্জন। মাছের ঝুড়ি নিয়ে ট্রেন লাইন পারাপার। ভোরের কুয়াশা, না খাওয়া পেটে হয়তো মাথা চক্কর দেয়।দৈত্যাকার ট্রেনে দেহ থেকে মাথা আলাদা করে দেয় তার।
ইন্দুবালা ভাতের হোটেল এর সাক্ষাৎ লক্ষ্মী ছিল মেয়েটা। ইন্দুবালা র সঙ্গে যেন নিজের বোনের সম্পর্ক তার। তাই তো দেখি, দেহ সনাক্ত করার সময়, নিথর দেহের কাছে গিয়ে ইন্দুবালার শেষ আর্তনাদ যেনো নিজেরই বোনের জন্য ডুকরে কেঁদে ওঠেন:
"উনুন ধরিয়ে বসে ছিলাম তোর জন্য। তুই এলিনা। এমন তো কথা ছিলনা রে লছমী!"
এই গল্পের প্রতিটি শাক সব্জি ফল মূল মাছ চিংড়ী কুমড়ো কচুতে জড়িয়ে আছে ইন্দুবালা'র শৈশব। জন্মভূমির প্রতি মানুষের অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসা। মোহ মমতা। এক কিশোরী মেয়ের আবেগ বাবা, মা, ঠাম্মা, ভাই এর ভালোবাসা। আর প্রথম প্রেম মনিরুল। শিউলি ফুল। সহজ সরল এক চিরন্তন সুখপাঠ্য বই ইন্দুবালা ভাতের হোটেল। হৃদয়ে রয়ে যাবে...
পাঠ প্রতিক্রিয়া: বিশ্বজিৎ রায়
উপন্যাস- ইন্দুবালা ভাতের হোটেল
লেখক- কল্লোল লাহিড়ী
প্রকাশনী- সুপ্রকাশ
প্রথম প্রকাশ- জুলাই, ২০২০
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ- মেঘলা ভট্টাচার্য
সালটা ১৯৭১। অনেক যুদ্ধ এবং রক্তারক্তির পর বাংলাদেশ স্বাধীন। ঠিক সেই সময় একটা মেয়ের সবেমাত্র বিয়ে হয়েছে কলকাতায়। এ উপন্যাস কিছুটা সেই গল্প বলে.......
আবার মাতাল স্বামীর মৃত্যুর পর বছর পঁচিশের একটা বউয়ের তিন সন্তানের নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার গল্প বলে এই উপন্যাস। আবার জীবনের শেষ লগ্নে, সন্তানদের সুস্থ জীবন দিয়ে একাকী একটা হোটেল চালানো এক বৃদ্ধার গল্প বলে এই উপন্যাস। একটা বৃদ্ধা যিনি কখনও কারোর কাছে হাত পাতেননি, এমনকি নিজের শিক্ষিত
সন্তানদের কাছেও না।
একটা মেয়ের বিয়ে থেকে বিধবা, সন্তান মানুষ থেকে যসম্মানে একা বেঁচে থাকার গল্প বলে এই উপন্যাস।
মেয়েটির নাম ইন্দুবালা, সবার ইন্দু। আর তার হোটেলের নাম ইন্দুবালা ভাতের হোটেল। যেখানে খেতে এলে শুধু মুখে ফিরে যেতে হয় না।
এই উপন্যাস, রান্নার প্রতিটি পদের সাথে সাথে ইন্দুবালার জীবনের গল্প বলে কখনও ছোটু ইন্দুর মুসলিম ছেলে মনিরুলের সাথে লুকিয়ে প্রেম, কখনও মাছওয়ালী লছমীর সাথে বনযুদ্ধ কখনও তার সহযোগী ওড়িয়ার ছেলে ধনঞ্জয়ের সাথে ছোটোখাটো গন্ডগোল, যে গন্ডগোল আসলে ভালোবাসার ছাপ।
আবার কখনও দেখা হয় পাশের মেসের ছেলে অলোকের সাহায্যে সাহসী ইন্দুবালা হয়ে ওঠে কমরেড ইন্দুবালা......।
এ উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রের সাথে ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে যে সম্পর্ক সমস্ত রক্তের সম্পর্ককে হার মানায়। স্বামী মারা গেলে নিজেই স্বামীর মুখাগ্নী করেন ইন্দুবালা। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আলাদা করে দেন।
আসলে এ উপন্যাস কখনও একটা মেয়ের বা কখনও একটা মায়ের গল্প বলে যিনি কখনও পরাজিত হতে জানেন না, যিনি ভালোবাসেন কিন্তু ধরা দিতে চান না। কিন্তু কেন ইন্দুবালাকে এমন হতে হলো !! পরিস্থিতির চাপে নাকি কোনো অভিশাপ কেন তিনি সন্তানদের আলাদা করে একা থাকতে চান সকলের ইন্দুবালা, কমরেড ইন্দুবালা হয়ে উঠলেন কীভাবে !!
এসব
প্রশ্নের উত্তর জানতে অবশ্যই পড়তে হবে কল্লোল লাহিড়ী রচিত এক লড়াকু নারীর কাহিনী অবলম্বনে রচিত ইন্দুবালা ভাতের হোটেল।
এ এক অন্য ধরণের উপন্যাস। পড়তে পড়তে কখনও যে শেষ হয়ে যাবে বুঝতেই পারবেন না। শেষের পরেও মনে হবে, আরও একটু বেশি হলে মন্দ হত না। যাই হোক, এই উপন্যাসের ভুল তেমন কিছুই নেই তবে কিছু কিছু জায়গায় টাইমিং মিসটেক আছে।
রিভিউটি লিখেছেনঃ শুভজিৎ বিশ্বাস
পাঠ প্রতিক্রিয়া
বই: ইন্দুবালা ভাতের হোটেল
লেখক: কল্লোল লাহিড়ী
প্রকাশক: সুপ্রকাশ
মুদ্রিত মূল্য: ২৩০ টাকা
প্রথম প্রকাশ: জুলাই, ২০২০
প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ: মেঘলা ভট্টাচাৰ্য্য
ISBN: 978-81-9460-090-9
রন্ধন শিল্প এক মহান শিল্প। আর বাংলার রন্ধন স্বাদ ও সুগন্ধে জগৎ জোড়া খ্যাতি। এখনও দিদা ঠাম্মার হাতের রান্নার যাদু বাঙালির ঘরে ঘরে।
বিভূতিভূষণ এর আদর্শ হিন্দু হোটেল এর হাজারী ঠাকুরের রন্ধন শিল্প বাঙালি পাঠক মাত্রই জানবেন।
এখানেও আর এক রন্ধন শিল্পী ওপার বাংলার খুলনার অখ্যাত এক পল্লী গ্রাম 'কলাপোতা থেকে বৈবাহিক সূত্রে আগত কলকাতার ছেন মিত্তির লেন এর ইন্দুবালা। তারই জীবনের নানান স্মৃতি চারণার মধ্যে দিয়ে ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের গল্প এগিয়ে গেছে।
এই গল্পে লেখক ইংরেজি সাহিত্যের আধুনিকতার Stream of Consciousness ধরনে বর্ণনার জাল বুনেছেন সুনিপুণ ভাবে।
এই বই উপন্যাস হয়েছে নাকি ছোটো গল্প কেই টেনে বড় করা হয়েছে সেই বিতর্কে আমি যাবনা। পাঠক মাত্রই রুচি বৈচিত্র্য থাকবে। আমার অসাধারন লেগেছে এই বই।
একটাই রুটি লক্ষ্য করেছি, গল্পের কয়েকটি বানান ভুল, পরবর্তি সংস্করণে সেগুলো ঠিক হবে আশা করা যায়। তাছাড়া বই এর প্রচ্ছদ আমার বেশ ভালো আকর্ষণীয় ও মানানসই লেগেছে।
ইন্দুবালা ভাতের হোটেল অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় লেখা। পড়তে কক্ষনোই ক্লান্তি অনুভূতি আসেনি। লেখকের অসাধারন গল্প বলার ভঙ্গিমা তে আমি মুগ্ধ।
ভালো লেগেছে গল্পের অল্প পরিসরে মাত্র আটটি অধ্যায়ে ইন্দুবালা তার জন্ম ভূমির স্মৃতি চারণ করেছেন। মেয়েদের কাছে শিকড় যে কি জিনিস, বাপের বাড়ী যে কি জিনিস, এতো টান... মেয়ে দের এতো টান, জন্ম ভূমির প্রতি এতো নিবিড় সম্পর্ক, সে কথা ইন্দুবালা ভাতের হোটেল এর সাক্ষাৎ দেবী অন্নপূর্ণা স্বরূপ বিধবা ইন্দুবালার ক্ষেত্রেও যেমন সত্য, হত দারিদ্র বিহারী কমলা গাঁও এর মেয়ে পহুমীর ক্ষেত্রেও ততটাই সত্য। এই বই না পড়লে জানতেই পারতাম না, শিকড় ছেঁড়ার যন্ত্রনা নারী হৃদয়ের
কোন গহীনে আঘাত করে।
লেখক অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে আট টি অধ্যায় এর মধ্যে লিখেছেন সত্তর পেরিয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধ মায়ের ফেলে আসা অতীত জীবনের উপাখ্যান। এখানে প্রতি অধ্যায়ের পাতায় পাতায় মিশে আছে জন্ম ভিটার নারীর টান, হারিয়ে যাওয়া দেশের প্রকৃতির আহ্বান। হারিয়ে যাওয়া কিশোরীর প্রেমের গল্প। সেই প্রেম কিশোরীর একান্ত আপনার। আজ সত্তর পেরিয়ে গেলেও, হাজার কাজের চাপের মধ্যে থেকেও ফেলে আসা কিশোরী বয়সের প্রেম কে ভোলা যায়না।
গল্পে স্থান পেয়েছে একাত্তরের আন্দোলন, খান সেনাদের নির্মম অত্যাচার, ভাষা আন্দোলন, দেশ ভাগের যন্ত্রণা নকশাল আন্দোলনের টুকরো টুকরো স্মৃতি।
এই গল্প ঠাকুমা ঠাম্মার কাছে রান্না শেখার গল্প। সবজি ফলমূল চিনে নেওয়ার গল্প। হাতে বানানো বাংলার পিঠে পুলি চাটনি আচার এর গল্প।
গল্পের ছত্রে ছত্রে রয়েছে কিশোরী আবেগের সোনাঝরা সেই দিন গুলো, প্রেমের শিউলি ফুল,
প্রথম মন হারানো, মুসলিম মানব কিশোর মনিরুল এর মধ্যেও হিন্দু বংশী যাত্রী কানাই দৰ্শন।
এই গল্পে পাই এক নারী হৃদয় এর ব্যথা বেদনার নিটোল বর্ণনা। জীবন সংগ্রামে অসম্ভব জেদ, হার না মানার মানসিকতা। একলা হাতে, বিধবা মায়ের কঠোর পরিশ্রম ও সন্তান সম্প্রতি দের মানুষের মতো মানুষ করার
গল্প।
এই গল্পে নারীর দেবী রূপ কে সাক্ষাৎ মা
অন্নপূর্ণা রূপে চিত্রায়িত করেছেন লেখক। মা এক শিল্পীর নিপুণ বর্ণনায় প্রাণবন্ত স্মৃতি চারন করছেন। বর্তমান ও অতীত মিলে মিশে একাকার।
এই গল্প চিরন্তন এক মায়ের গল্প। জীবে প্রেম ও সেবার গল্প।
অসৎ লম্পট জুয়াড়ি স্বামী ও শাশুড়ির সাথে অম্ল মধুর ঘরকন্না পাতার
গল্প।
আর এই সমস্ত গল্পের মধ্যমণি – ইন্দুবালা, আর তার ভাতের হোটেল।
লেখকের নিপুণ লেখনীতে মানস পটে জ্বলজ্বল করে ওঠে না দেখা খুলনার কোনো এক অখ্যাত কলাপোতা গ্রাম, কপোতাক্ষ নদ, চুইঝাল এর মাচা, শিউলি ফুল মান কচুর বন, দুগ্ধা ঠাকুর প্রতিমা।
ভাগ্যের সাথে এক সামান্য মেয়ের অসামান্য জেদ-লড়াই দেশ ছেড়ে আসার যন্ত্রণা, ফেলে আসা প্রেম, সব যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। যেন চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে কলকাতার ছেনু মিত্তির লেনের এক বিধবা নারীর জীবনযুদ্ধের দিনলিপি। যেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ম ম করে ছাপোষা বাঙালির চিরন্তন ভালোবাসার বিউলির ডাল, আলুপোস্ত, চিংড়ি মাছ, কুমড়োর ছড়া, জলপাই কতবেল এর চাউনি, মালপোয়া আর চন্দ্রপুলির মন মাতাল করা সুবাস আর ওপার বাংলা এপার বাংলার কত শত চেনা অচেনা মুখ।
যাদের আনন্দে পাঠক হেসে ওঠে আবার যাদের দুঃখে মন ভার হয়ে যায়। চোখের কোনে জল জমে মুক্তার মতো।
ওপার বাংলার না দেখা প্রাণের প্রিয় ভাই, ঠাম্মা, স্বর্ণময়ী, মনিরুল, এপার বাংলার অলোক, উড়ে বামুন ধনপ্রায়, বিহারী অসহায় মেয়ে পহুমী - বড়ছেলে প্রদীপ, সুনয়নি, ঝনটু সঞ্চারী।
সবাইকে যেন বড় বেশি আপনার মনে হয়, বড় বেশি নিজের মনে হয়।
রান্না, শুধু জঠরগ্নি নির্বাপণ এর জন্য নয়, একটা শিল্প এটাই বারবার মনে হয় এই বই পড়তে গিয়ে।
বাড়ির লক্ষমী সব্জি বাগান, পুকুরের জল আর একরাশ ভালোবাসার ছোঁয়ায় আমাদের ঠাকুমা-দিদিমারা যুগে যুগে হেঁসেলে যে ম্যাজিক সৃষ্টি করে গেছেন, তার কথাই যেন বলে যায় এই বই।
ছোট ছোট কাহিনী, ছোট ছোট চরিত্রের মধ্য দিয়ে এক চির শাশ্বত বার্তা যা কিনা ইন্দুবালার মুখ দিয়ে লেখক আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন, তা হলো – “জীবে প্রেম। জিব সেবা। নিখিল মানবের সেবা। সেবায় ধর্ম। ভোগের চেয়ে ত্যাগের মহিমা বেশি। প্রতি টা অভুক্ত প্রাণী কেই খাবার দাও। সবার প্রতি মায়া, দয়া প্রেম। প্রেম এক বড় সম্পদ।
এই প্রেম যেন শাশ্বত হয়, এই ইন্দুবালার ভাতের হোটেল এর মতো আরো এমন অনেক অনেক ভাতের হোটেল এর যেন শ্রীবৃদ্ধি হয়, এটাই কাম্য। যাদের সব থেকেও কিছু নেই সময়ের তাগিদে এক মুঠো ভাত এর জন্য হাহাকার করে তারা যেন ইন্দুবালা ভাতের হোটেল এর সন্ধান পায়।
আর ইন্দুবালা? গল্পের নায়িকা, সে তো রইলই অমর হয়ে আর তার কলাপোতা গ্রামের এক বুক স্মৃতি নিয়ে পাঠকের অন্তরে সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা দেবী হয়ে।
আর বিহারী মেয়ে হতভাগী অসহায় গরীব লছমী? মাছ বিক্রি করে যে কিনা সংসারের ভরণ পোষণ করে।
কাঁদিয়ে গেলো শেষটায়। চোখের জলে বিদায়। লক্ষমীর বিসর্জন। মাছের ঝুড়ি নিয়ে ট্রেন লাইন পারাপার। ভোরের কুয়াশা, না খাওয়া পেটে হয়তো মাথা চক্কর দেয়। দৈত্যাকার ট্রেনে দেহ থেকে মাথা আলাদা করে দেয় তার।
ইন্দুবালা ভাতের হোটেল এর সাক্ষাৎ লক্ষ্মী ছিল মেয়েটা। ইন্দুবালা র সঙ্গে যেন নিজের বোনের সম্পর্ক তার। তাই তো দেখি, দেহ সনাক্ত করার সময়, নিথর দেহের কাছে গিয়ে ইন্দুবালার শেষ আর্তনাদ যেনো নিজেরই বোনের জন্য ডুকরে কেঁদে ওঠেন:
উনুন ধরিয়ে বসে ছিলাম তোর জন্য। তুই এলিনা। এমন তো কথা ছিলনা রে লছমীঃ”
এই গল্পের প্রতিটি শাক সব্জি ফল মূল মাহু চিংড়ী কুমড়ো কচুতে জড়িয়ে আছে ইন্দুবালা'র শৈশব। জন্মভূমির প্রতি মানুষের অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসা। মোহ মমতা। এক কিশোরী মেয়ের আবেগ বাবা, মা, ঠাম্মা, ভাই এর ভালোবাসা। আর প্রথম প্রেম মনিরুল। শিউলি ফুল। সহজ সরল এক চিরন্তন সুখপাঠ্য বই ইন্দুবালা ভাতের হোটেল। হৃদয়ে রয়ে যাবে.....
পাঠ প্রতিক্রিয়া: বিশ্বজিৎ রায়
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।