হত্যাপুরী - সত্যজিৎ রায় Hatyapuri by Satyajit Ray

হত্যাপুরী - সত্যজিৎ রায় Hatyapuri by Satyajit Ray

হত্যাপুরী 
লেখক - সত্যজিৎ রায় 
চলচ্চিত্রের পরিচালক - সন্দীপ রায় 

স্বনামধন্য গোয়েন্দা শ্রী প্রদোষ চন্দ্র মিত্রকে নিয়ে লেখা বিখ্যাত ফেলুদা সিরিজের অন্যতম জনপ্রিয় কাহিনী এটি। হবে নাই বা কেনো, ভ্রমণরসিক ও ভোজনরসিক বাঙালির দুটি প্রিয় জিনিসের বর্ণনা বেশ ভালো করে দিয়েছেন এতে লেখক। তারপর গল্পের প্রেক্ষাপট পুরী। জগন্নাথদেবের পুরী। তার চেয়েও বড়ো কথা ভারতবর্ষের অন্যতম বড়ো পর্যটন কেন্দ্র এটি, সমুদ্র আছে বলে কথা; বিশেষ করে বাঙালিদের তো অতি প্রিয় ভ্রমণক্ষেত্র। 

এবার আসি ছবিটির কথায়, আর তার অভিনেতা এবং পরিচালকের কথায়। ফেলুদার ছবি বড়ো পর্দায় হলো প্রায় 6 বছর পর, স্বভাবতই সব ফেলুপ্রেমীর মতো আমারও উৎসাহ ছিলো; যদিও ছবির কলাকুশলীদের নাম ঘোষণার পরে আমার একটু হতাশাই লেগেছিলো, বিশেষ করে লালমোহনবাবুকে নিয়ে। তা যাই হোক, ফেলুদার ছবি বলে কথা, দেখতে যাবোই। বড়দিনেই দেখার ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু নন্দনের টিকিট পেলাম না, অগত্যা তার পরদিন অর্থাৎ আজকের(26 ডিসেম্বর) শো এর টিকিটই কেটে ফেললাম। আজ যাওয়ার আগে দুপুরবেলা হত্যাপুরী কাহিনীটি আরেকবার revise করে নিলাম। 
এই ছবির সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি আমার মতে ফেলুদার চরিত্রে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত; তার বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি, অভিনয় দক্ষতা বেশ ভালো লেগেছে। লালমোহন বাবুর চরিত্রে অভিজিৎ গুহ আমার প্রথম থেকেই নাপসন্দ; সে ছোটপর্দার জটায়ু অনির্বাণ চক্রবর্তীর অভিনয়ের কুশলতার জন্যই হোক, বা অভিজিৎ বাবুর আগের যেটুকু কাজ দেখেছি তার জন্যই হোক। তবে ছবিতে সত্যিকথা বলতে তিনি চেষ্টা করেছেন। জটায়ু মানে যে শুধুই একজন কমিক চরিত্র নন তা ফোটাতে পেরেছেন তিনি(যদিও এখনও বর্তমানের অভিনেতাদের মধ্যে অনির্বাণ চক্রবর্তীই আমার প্রথম পছন্দ জটায়ুর চরিত্রে)। তোপসেকে নিয়ে আলাদা করে বলার মতো কিছু নেই, বেশি সুযোগ পায়নি এ। বরঞ্চ অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতাদের কথা বলতে হয়। বর্ষীয়ান অভিনেতা পরান বন্দোপাধ্যায় ডিজি সেনের চরিত্রে হতাশ করেননি, দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন এই বয়সেও। বিলাস(সরকারের) এর চরিত্রে অভিনয় করা সাহেব চ্যাটার্জি অসাধারণ, ইন্দ্রনীলের পর এনার অভিনয়ই আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে। আর শুভাশীষ মুখোপাধ্যায় লক্ষণ ভট্টাচার্যের চরিত্রে বেশ বিশ্বাসযোগ্য। অন্যান্য ছোটোখাটো চরিত্রের অভিনেতারাও বেশ ভালো। গল্পকে আশির দশক থেকে বর্তমানে নিয়ে আসা হয়েছে, সামান্য কিছু পরিবর্তন করেছেন পরিচালক মশাই এজন্য। আমার যেটা খারাপ লেগেছে সেটা হলো ফেলুদার গল্প নিয়ে সিনেমা হলে একটা টানটান উত্তেজনা থাকে, সেটা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর ফেলুদাতে তো ছিলোই, সব্যসাচী চক্রবর্তীর ফেলুদাতেও পাওয়া গেছে; কিন্তু হত্যাপুরীতে সেটা পাইনি (আবিরের বাদশাহী আংটিতেও সেটা পেয়েছিলাম)। জানিনা অন্যকারোর এই অভিজ্ঞতা হয়েছে কিনা। 

মোটের ওপর এই সিনেমাকে আমি পাসমার্ক দেবো, অনেকটা bank PO র পরীক্ষায় mains এ টেনেটুনে cut-off পাস করার মতো। ইন্টারভিউ এখনো বাকি। কারণ ফেলুদা আবার ফিরবে শীঘ্রই। 

সবশেষে বলবো, বছরের শেষের ছুটির এই কটা দিনের মধ্যে ঘরের লোক / বন্ধুদের সাথে ফেলুদার নতুন বড়পর্দার adventure দেখে এলে ঠকবেন না।

রিভিউটি লিখেছেনঃ a_worshipper_of_goat_Messi

Post a Comment

0 Comments