এভারেস্ট মানুষ তেনজিং
মূল বই: Man of Everest
(তেনজিং নোরগের কথিত আত্মজীবনী)
লেখা: জেমস র্যামজে উলম্যান
অনুবাদ: সুকুমার চক্রবর্তী
প্রকাশনা: গণমন প্রকাশন
আগেরবার হিমালয় অভিযান ও শেরপা তেনজিং বইয়ের পাঠ-প্রতিক্রিয়ায় এভারেস্ট জয় ও তেনজিং নোরগে সম্পর্কে ধারণা তৈরি হলেও তেনজিং নোরগে হয়ে ওঠার কাহিনি এবং এভারেস্ট জয়ের বিস্তারিত তথ্য এই আত্মজীবনীতে পাওয়া যায়।
মায়ের কাছে "ঐ দেখ সেই পাহাড় কোনও পাখি ওটাকে টপকাতে পারবে না " শুনে শেরপা পরিবারে জন্ম নেওয়া ছোট্ট নামগিয়াল ওয়াংদি (পরবর্তীতে তেনজিং নোরগে) চোমোলাংমা জয়ের স্বপ্ন দেখে। তিনটি এভারেস্ট অভিযানে শেরপাদের প্রথম অংশগ্রহণ শুনে সে উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পেটের টানে দার্জিলিংয়ে এসে ওঠে, অভিযানের সুযোগ খোঁজে এবং অবশেষে ১৯৩৫ সালে সেই সুযোগ আসে মালবাহক হিসেবে। এরপর একাধিকবার এভারেস্ট অভিযান হলেও জয় সম্ভব হয়নি, গাড়োয়াল হিমালয়, পাকিস্তানের চিত্রলে তেনজিং-কে কর্মসূত্রে যেতে হয়। ইতিমধ্যে আপনজনদের মৃত্যু সংবাদ, চোখের সামনে সাথী শেরপাদের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হলেও লড়াই জারি থাকে। নাঙ্গা পর্বতের অভিযানও ব্যর্থ হয়।
রবার্ট ব্রুস ও মাকড়শার গল্প তো আমরা জানি। এভারেস্ট জয়ের শিক্ষা এভাবেই তৈরি হয় বারবার চেষ্টা তাহলেই সফলতা আসবে। নন্দাদেবী জয়ের পর সুইসদলের সাথে এভারেস্ট জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলেও অবশেষে ১৯৫৩ সালে এভারেস্ট পরাজয় স্বীকার করে তেনজিং ও নিউজিল্যান্ডবাসী এডমন্ড হিলারির কাছে। কে আগে পা রেখেছে এভারেস্ট শীর্ষে সে নিয়ে জল্পনা শুরু হয় এবং ঘটনার চেয়ে রটনার ঘনঘটা দেখা যায়। দেশ-বিদেশ থেকে ডাক আসে জনপ্রিয়তার কারণে।
ইয়েতি সম্পর্কিত কিছু ঘটনাও এখানে রয়েছে।
অংশবিশেষ: একজন শেরপা বালক যখন চোখ তুলে উঁচুতে তাকায় তখন তার সামনে দিগন্ত বিস্তৃত তুষার শুভ্র পাহাড়ের চূড়া, মাথা নামিয়ে দেখে পায়ের কাছে নামানো আছে একটি ভারি বোঝা। ক্ষণিকের জন্যে সে বিশ্রাম নেয়, তারপর সেই ভারি বোঝাটা পিঠে তুলে নিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করে। এই জীবনে সে কি বিরক্ত? বোঝা কি তাকে ব্যতিব্যস্ত করে? সে কি পিঠ থেকে বোঝাটা ঝেড়ে ফেলে দিতে চায়? কিম্বা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে স্বস্তি পেতে চায়? না, এর কোনওটাই নয়। বোঝা নিয়ে হাঁটায় সে একটা ছন্দ খুঁজে পায়, চড়াই পথে উঠতে ঘামে ভেজা শরীরে পিঠের বোঝাটা কখন জানি তার জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে।
রেটিং: ফুল মার্কস
রিভিউটি লিখেছেনঃ
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।