রক্ততৃষ্ণা, এক যোদ্ধার অসমাপ্ত প্রেমকাহিনী... - জিমি তানহাব Ek Juddhar Osomapto Premkahini Roktotrishna by Jimee Tanhab

রক্ততৃষ্ণা, এক যোদ্ধার অসমাপ্ত প্রেমকাহিনী... - জিমি তানহাব Ek Juddhar Osomapto Premkahini Roktotrishna by Jimee Tanhab

বইয়ের_নামঃ রক্ততৃষ্ণা, এক যোদ্ধার অসমাপ্ত প্রেমকাহিনী...
লেখিকাঃ Jimee Tanhab/ জিমি তানহাব
প্রকাশনীঃ ঐতিহ্য
প্রচ্ছদঃ Giusy D'Anna(Italy)
মুদ্রন মূল্যঃ ৫৫০ টাকা।


বই রিভিউঃ
এই মানুষটার বইয়ের রিভিউ লিখতে গেলে আমি খুব বেশি জিনিস লিখতে পারিনা। লেখার জন্য কোনো জায়গাই রাখেনা। 

একদম অল্প কথায় কিছু লেখার ছোট্ট একটা প্রচেষ্ঠা থাকবে।

রক্ততৃষ্ণা বইটি সিজার সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট নিরো সিজার আর তার শাসনামলের ভিত্তিতে লেখা। অত্যাচারী শাসক নিরো সিজারের উত্থান-পতন নিয়ে লেখা এই উপন্যাসে একটা বিস্তৃত অংশ জুড়ে ছিলো লিয়ামতিয়াস বা লিয়াম আর আলিসা। 

উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র লিয়াম নাকি নিরো তা লেখিকাই ভালো বলতে পারবেন। আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক শুধু বে-ঘোরে আস্বাদন করে গেছে বই। 

লিয়াম আর আলিসার ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা প্রণয় সেইসাথে একই সময়ে সিজার সাম্রাজ্যে চলতে থাকা অ্যাগ্রিপিনার ষড়যন্তের যুগলটা দারুন ছিলো স্টার্টিং হিসেবে। 

লিয়াম আর আলিসার প্রণয় রূপ নেয় ভালোবাসায়। বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাওয়া আলিসার জীবনে হঠাৎই নেমে আসে অন্ধকার। একটা ঘটনা বদলে দেয় সবগুলো জীবন, পাল্টে দেয় সমস্ত প্লট। সাধারন মেষপালক লিয়াম হয়ে ওঠে সম্রাট নিরোর রক্তের তৃষ্ণার্ত। প্রিয়তমা প্রণয়ীর জন্য কতদূর গিয়েছিলো লিয়াম? সে কি পেরেছিলো নিরোর জীবনে প্রতিশোধের কালো মেঘ নিয়ে আসতে? সিনেট আর প্রিটোরিয়ানদের নজর এড়িয়ে নিজের রক্ততৃষ্ণা লিয়ামকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলো?

শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিলো লিয়ামের? আলিসার? নিরোর? অ্যাগ্রিপিনার?
২৪৮ পৃষ্ঠার এই উপন্যাস একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে শেষ করে ফেলতে পারবেন। আর শুধু পড়বেনই না চোখের সামনে দেখতেও পাবেন সবকিছু, এটাই লেখিকার স্পেশালিটি।

 বইতে যে একটা জিনিস আমার কাছে একটু খটকা লেগেছে তা হলো লিয়াম যখন থেকে আলিসাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে তখন লিয়ামের বয়স সাত!! ১২ তম পৃষ্ঠার তথ্য অনুযায়ী পাঁচ বছর আগে যখন লিয়ামের মা কে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তার বয়স মাত্র দুই। তারমানে বর্তমানে তার বয়স সাত!! তবে এখানে একটা মজার ব্যাপার হলো ঐ সময়টাতে এই বয়সটা অনেক মিনিং রাখে। শেক্সপিয়রের "রোমিও জুলিয়েট" পড়া থাকলে জানবেন জুলিয়েটের বিয়ের কথা যখন চলছিলো তখন তার মা বললেন "তোমার মতন বয়সে তুমি আমার কোলে ছিলো" আর জুলিয়েটের বয়স তখন ১৪!!

আলিসার যে উপস্থাপনাটা দেখানো হয়েছে এক কথায় অনবদ্য। সর্বোচ্চ পর্যায়ের ধৈর্য্য সাথে ভালোবাসার মানুষটার প্রতি মান অভিমানের ছোট্ট ছোট্ট একটু পর্ব। লিয়ামকে সন্দেহ করা বা লিয়ামের প্রতি রাগ দেখানো এই পরিবর্তিত রূপগুলো আপনাকে মুগ্ধ করবে।

রক্ততৃষ্ণা শব্দটা লিয়ামের সাথে বেশি সম্পৃক্ত। উপন্যাসের কোনো পুরুষ চরিত্রের জন্য যদি খারাপ লেগে থাকে তাহলে লিয়াম তাদের দিকে প্রথম সারীতে। ভেতর থেকে মৃত একটা মানুষ ভালোবাসার এত কাছে থেকেও একটু প্রাণ পেলো না!! লিয়াম চরিত্র নিয়ে বলার মতন কিছু নেই শুধু অনেকটা মন খারাপের গল্প। আপু এতটা নিষ্ঠুর না হলেও পারতেন। 

লেখিকার তিনটা বই পড়া হয়েছে। তার উপন্যাসের সবচেয়ে স্ট্রং পয়েন্ট হলো খুব ছোট ছোট করে প্যারা তৈরী করেন। ছোট কিন্তু আকর্ষনীয়। একটা রহস্য সবসময় তৈরী করে রাখেন। আমাদের দেশে গল্প উপন্যাসে পারিপার্শ্বিকের  বর্ণনা দিয়ে বড় করে তোলার যে ধারা আছে তার বাহিরে ব্যতিক্রম আর সুন্দর একটা জিনিস।

 এরপর বইতে জাষ্ট ডুবে যাওয়া। লেখিকার সবচেয়ে বড় ক্ষমতা পাঠককে কল্পনার জগতে নিয়ে যেতে পারেন। কোনো তাড়াহুড়ো নেই। 

Nero fiddles while Rome burns এই প্রবাদটার সাথে উপন্যাসটা অনেক ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত

 ছোট্ট থেকে ছোট্ট তথ্যগুলোকেও কোনো না কোনো হিন্ট হিসেবে ব্যবহার করেন। সেই তথ্যটা পরবর্তীতে কোনো না কোনো ঘটনার সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। এই ছোট ছোট কাজগুলো বইয়ের মোহ তৈরী করে।

লিয়ামের এতগুলো বছরের তপস্যা হতাশায় পরিনত হতে দেখে খুব খারাপ লেগেছিলো। 

আলিসার জন্যও খারাপ লেগেছে। 

বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ হলে আরও ভালো লাগবে। কিছু জায়গা পড়ার সময় মনে হয়েছে এই জিনিসগুলো যদি ইংরেজিতে উপস্থাপন হতো তাহলে আরও প্রাণবন্ত লাগতো। স্পেশালি গসপেল থেকে দেয়া কোটগুলো আর তার প্রভাব আরও সুন্দর করে দেখানো যেতো হয়ত। 

এই বইটা আগে পড়া থাকলে আমি ইন্দ্রজাল পড়ার সাথে সাথে বলতাম এই সাময়নকে আমি চিনি। সায়মন কিন্তু এখানেও আছে। 

লেখার জন্য আর কিছু পাচ্ছি না। লেখিকা কোথাও কথা বলার জায়গা রাখেনি। 

কোনো বইকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিতে দেখলে অনেকের চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যায়। উৎকৃষ্ট সাহিত্যকর্মের বিষয়ে শুধু এটুকু বলতে হয় পড়বেন আর সাহিত্যের মাঝে হারিয়ে যাবেন।

রিভিউটি লিখেছেনঃ Saiful Islam

Post a Comment

0 Comments