দশরূপা - সৌমিত্র বিশ্বাস Dasharupa by Soumitra Biswas

দশরূপা - সৌমিত্র বিশ্বাস Dasharupa by Soumitra Biswas

বইঃ দশরূপা 
প্রথম প্রকাশঃ ২০২০ 
লেখকঃ সৌমিত্র বিশ্বাস 

প্রথমত, রিভিউ লেখার যোগ্যতা আমার নাই, নিতান্তই পাঠ প্রতিক্রিয়া হিসাবে লিখছি। হরর জনরার গল্প উপন্যাসে তেমন আগ্রহ পেতাম না, ডিটেকটিভ থ্রিলার জনরা পছন্দ করে পড়ি। হঠাৎ বেশ কিছুদিন আগে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা অত্যন্ত স্বাদু ভাষায় লেখা তারানাথ তান্ত্রিক / অলাতচক্র পড়ার পর অতিপ্রাকৃত গল্প উপন্যাস ভালো লেগে যায়, এই জনরার বই পড়ার জন্য খোঁজাখুঁজি করাতে দেখলাম সাম্প্রতিককালে অনেক নবীন লেখকই ঘোরতর তান্ত্রিক/তন্ত্র ভিত্তিক গল্প উপন্যাস লিখছেন,  তো সেই সুবাদে এই বইটি পেয়ে পড়ার সুযোগ হল। ২০২০ সালের বই, অনেকেই হয়তো পড়ে ফেলেছেন। বইটিতে নাতিদীর্ঘ ১০টি গল্প আছে, এবং প্রত্যেকটি গল্পের মূল চরিত্র হল, দশমহাবিদ্যার একেকটি দেবীরূপ, বইটির নামেও যেটি ধারণা দিচ্ছে।  দশমহাবিদ্যার দেবী নির্দিষ্ট ১০টি রূপে আবির্ভূতা হয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ধরা দেন, দেবী রূপের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ভয়ংকরী রূপ থেকে প্রেমময়ী থেকে মাতৃরূপে দর্শন দেন,  কখনও আশ্রয় কখনো প্রশ্রয় দেন কখোনাবা শাসন বারণ করেন। লেখক সুনিপুণ ভাবে এখানে প্রত্যেকটি গল্পে দেবীর আবির্ভাবের চিত্রকল্প সাজিয়েছেন, পাঠককে রহস্যের মধ্যে রেখে একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে লেখক পুরোপুরি সক্ষম।  প্রত্যেকটি গল্পই আলাদা বৈশিষ্টমণ্ডিত, পাঠকের মনোজগৎকে নাড়া দেয়,  নারী পুরুষের সম্পর্ককে নতুন ভাবে ভাবিয়ে তুলে, সাধারণ নারীর মাঝে দেবীরূপ দর্শন করায়। বিশেষ করে কয়েকটি গল্প যেমন, হাড়,  বিকরালক, অবগাহন, নাস্তিক  আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে, আগ্রহী পাঠক পড়ে দেখতে পারেন সময় নষ্ট হবে না আশা করি।

রিভিউটি লিখেছেনঃ Raihan Sharif


পুস্তক পরিচয় 
দশরূপা 
লেখক – সৌমিত্র বিশ্বাস 
পাবলিকেশন – বুকফার্ম 
দাম – ২৫০ টাকা

সাবধান !
আগে থেকেই বলে রাখছি, কারণ আজকের বইটা অনেকটাই প্রাপ্তবয়স্ক দের জন্য লেখা। কচি কাচারা, দূরে থাকো, এই কথা বলে আমি শুরু করছি, আজকের পুস্তক পরিচয়।

ভূতের গল্প কম বেশি আমরা সব্বাই পড়েছি। কখনও নিছক মজা পাবার জন্য, অথবা কখনও যেচে ভয় পাব বলে।
সে জন্য অনেকেই সকাল সময়টা বেছে নেয় এসব গল্পের স্বাদ নিতে। কিন্তু এগুলো যে আসল মজা রাত বিরেতে পড়েই, সেটা যারা উপলব্ধি করে তাদের কে নতুন করে কি বলবো আর।

আজকের গল্পের বইটা কিন্তু শুধু মাত্র ভূতের ওপর লেখা, তা নয়, ভূতের গল্পের বই নয় বললেই বেশি ভাল হয়।
বরং তার থেকেও গাঢ়, ভয়ঙ্কর, ঘুটঘুটে অন্ধকারের পরবর্তী ছবির ঝলকের থেকেও বিশেষ কিছু।
তন্ত্রবিদ্যা সম্পর্কে কম বেশি আমরা সব্বাই জানি।
তন্ত্র কথাটা কানে এলেই মনে হয়  অঘোরী বাবা, সাধক, মড়ার খুলি, শ্মশান ইত্যাদি।
কিন্তু এখানে আবাহাওয়া সম্পূর্ণটাই আলাদা।

গল্প আকারে লেখক নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলিকে নিজের মনের মত করে আকার দিয়ে বাস্তবের সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন, যেটা পড়লে মনে হবে, “ এটা সম্পূর্ণ নতুন কিছু পড়লাম ।“
এই কথাটা ১০বারই ভাবতে বাধ্য করবে, কারণ বই টিতে আছে ১০টি শিউরে ওঠা, শরীরে কাঁটা দেওয়া লেখনী, যা সত্যের মোড়কে ঢাকা গল্পকথা।

তন্ত্রমহাবিদ্যা এর সাথে যুক্ত আছেন দশ জন দেবী। তাই দশমহাবিদ্যা বলা হয়ে থাকে।দশ দিকেই তারা বিরাজমান।

উত্তরে কালি
পূর্বে ছিন্নমস্তা
দক্ষিণে বগলা
পশ্চিমে ভুবনেশ্বরি
অগ্নিকোণে ধূমাবতী
নইরিত কোনে ত্রিপুরসুন্দরী
বায়ু কোনে মাতঙ্গী
ঈশান কোনে ষোড়শী
উরধে তারা
অধঃকোনে ভৈরবী 

প্রতি দেবীর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে।

যেমন বগলা দেবী। শবদেহের ওপর বসে থাকেন, এক হাতে অসুরের জিভ জেনে রাখেন, বাকশক্তি হরণের জন্য। মূলত বেশিরভাগ সমস্যাই বাক্যের মাধ্যমেই হয়। কটুকথা বলা, গালমন্দ করা বা পরনিন্দা করা ইত্যাদি। বাক্য সংযম করে মিথ্যার নাশ করেন এই দেবী। 
আর একজন দেবী আছেন, যিনি মানুষের কু প্রবিত্তি গুলো কে লাগাম ছাড়া আলোড়ন করে ছেড়ে দেয়। কোন দেবী ? উহু, পড়তে হবে।

প্রসঙ্গত, প্রতিটি গল্পের নাম শুনে সাধারণ ভাবেই আমরা আন্দাজ করে নিতে পারি মোটামুটি, গল্পটা কিরকম ট্র্যাক এ চলতে পারে।
কিন্তু এই বইতে এর বিন্দু মাত্র ধরতে পারবে না, এটুকু নিশ্চিত ভাবে বলবো আমি। কিন্তু গল্পের শেষে নদী ঠিক মোহনাতে এসে মিশে যাবে।

বইটা যদি হাতে কখনও পেয়ে থাকো, তাহলে গল্প পড়ার আগে ভূমিকা অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই পড়তে হবে। কারণ 
শুধু অবাক করা তথ্য এখানে লেখা আছে তা নয়, ১০টি গল্পে ঠিক কোন কোন দেবীদের নিয়ে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে গল্পছলে, তার একটা আভাস পাওয়া যাবে। এটা গল্প পড়ার মজাটা কয়েকগুণে বাড়িয়ে দেবে।

ছোট বেলা থেকে অনেক ভূতের গল্প বই হাতে পেয়েছি, পড়েছি। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, এই বইটা আমার কাছে একটা অ্যান্টিক পিস হয়ে থাকবে, সারাজীবন।

যেমন গোয়েন্দার হাতেখড়ি ফেলুদা কে নিয়ে,
তেমনি তন্ত্রমহাবিদ্যা ও ভয় কাহিনীর প্রাকিতিক ঘটনার হাতেখড়ি এই বই টা, আমার মতে।
ধন্যবাদ লেখক মহাশয় কে, এরকম একটা উপহার আমাদের কাছে তুলে ধরার।

রিভিউটি লিখেছেনঃ Sam Samy

পাঠ প্রতিক্রিয়া / পাঠ অনুভূতি 
দশরূপা 
লেখক : সৌমিত্র বিশ্বাস। 

লেখকে সাথে প্রথম পরিচয় এই বইটির মাধ্যমে। কার্যতঃ বলাই বাহুল্য ভূমিকা পড়তে পড়তেই লেখকের লেখনীর জোড় অনুভব করছিলাম, মসৃণ ও তথ্যপূর্ণ লেখা পাঠককে অনেক সমৃদ্ধ করে। 
এবার আসি বইয়ের বিষয়ে। দশমহাবিদ্যার দশ দেবী কে নিয়ে দশটি পৃথক গল্প নির্মাণ করেছেন লেখক, যা বিপুল তথ্য সমৃদ্ধ। এখনকার বেশিরভাগ বইতে দেখা যায় দশমহাবিদ্যার কোনো একজন দেবীকে নিয়ে গল্প, সেখানে একটিমাত্র বইয়ের মধ্যে এই বিপুল কাজটি সম্পন্ন করার জন্য লেখককে সাধুবাদ না দিয়ে থাকা যায় না। গল্পগুলি প্রায় ১১ বছরের ধরে বিভিন্ন সময় লেখক লিখেছেন, বেশ কিছু প্রকাশিত এবং কিছু অপ্রকাশিত লেখা নিয়ে এই সংকলন। লেখক বেশ সুচারুভাবে গল্পের বুনন করেছেন এবং গল্পের মাঝে মাঝে চমক তৈরির চেষ্টা করেছেন, সেখানে পাঠক সত্যি চমকে ওঠে। প্রথম থেকে কয়েকটা গল্প পড়তে শুরু করলে বইটি সম্পূর্ণ না করে ওঠা যাবেনা। আমিও তাই কয়েক ঘন্টার মধ্যে বইটি শেষ করে ফেলি, ফলে একই ধরনের রূপকের ব্যবহার ও চমক কিছুটা রিপিটেশন তৈরি করেছিল। রয়েসয়ে, ভিন্ন সময়ে আলাদা আলাদা করে গল্পগুলো পড়লে এরকম নাও মনে হতে পারে। 
প্রত্যেকটি গল্পের স্বল্প পরিসরের মধ্যে লেখক নারী চরিত্রগুলো বেশ নিপুণ হাতে নির্মাণ করেছেন। গল্পগুলো পড়তে পড়তে মনে হয়েছে এগুলো মহাবিদ্যার গল্প নয় বরং বাস্তবের নারীদের মননের কথা। বইটি পড়ে খুব ভয় পাওয়ার আশা না রাখাই ভালো, তবে প্রত্যেকটি গল্পই কিছুটা শিরশিরে অনুভূতি দিতে পারে। আর পাঁচটা তন্ত্রের অতিলৌকিক গল্পের থেকে এটাই পার্থক্য। লেখকের দশমহাবিদ্যার প্রতি এবং আদি শক্তির প্রতি যে অনুভব তা তিনি পাঠকের মধ্যে বিস্তার করতে পেরেছেন। "ঠিক যেরকম একজন অভিনেতাই কখনো অপু, কখনো-বা ফেলু মিত্তির, কখনো-বা উদয়ন পন্ডিত আবার কখনো-বা ময়ূরবাহন, এই দেবদেবীরাও ঠিক সেরকম। বস্তুত যে কারণে ময়ূরবাহন এবং ফেলু মিত্তির আলাদা, সেই কারণেই নারদপঞ্চরাত্রের ত্রিপুরসুন্দরীদেবী এবং ভূতডামরতন্ত্রের সুরসুন্দরীদেবী আলাদা।" - এই লেখা থেকে তা স্পষ্টতই বোঝা যায়। পরিশেষে বলি এই বইতে বেশ কিছু ভালো গল্প ও বিপুল তথ্য পাঠকের জন্য অপেক্ষা করছে। অবশ্যই বইটি সংগ্রহ করার মতো একটি বই।  সম্পূর্ণ নিজস্ব অনুভূতি প্রকাশ করলাম, ভূল ত্রুটি মার্জনা করবেন। 
আর যেটা না বললেই নয়, অসংখ্য ধন্যবাদ বর্ণপরিচয়কে, অ্যাডমিন প্যানেল কে এত সুন্দর একটা বই পড়তে সাহায্য করার জন্য। আপনাদের অক্লান্ত পরিশ্রম কে কুর্নিশ। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আপনাদের এই সাহায্য অনেক মানুষকে জীবনমুখী করে তুলছে তাতে সন্দেহ নেই। 
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

রিভিউটি লিখেছেনঃ Subhadeep Chatterjee

Post a Comment

0 Comments