কফিন রোড - পিটার মে, টিম ট্রান্সলেটর্স Coffin Road by Peter May

কফিন রোড - পিটার মে, টিম ট্রান্সলেটর্স Coffin Road by Peter May

বইয়ের নাম - কফিন রোড
লেখক - পিটার মে
অনুবাদক - টিম ট্রান্সলেটর্স (মাহীনূর মীম, এম এস আই সোহান)
জনরা - মিস্ট্রি, থ্রিলার
প্রকাশনা - নয়া উদ্যোগ
Goodreads rating: 3.99/5


কাহিনী সংক্ষেপ/ফ্ল্যাপের কথাঃ
আইল অব হ্যারিসের নির্জন সাগরের তীরে ভেসে আসে এক ব্যক্তি। জ্ঞান ফেরার পর পরই সে বুঝতে পারে কোনো স্মৃতিই মনে নেই তার। নিজের বাড়ি, নিজের জিনিসপত্র- সবকিছুই যেন অপরিচিত। অতীতের একমাত্র যোগসূত্র বলতে খুজে পায় একটা ম্যাপ, যেখানে কফিন রোড চিহ্নিত করা। তার হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির সাথে কী সম্পর্ক এই কফিন রোডের? এদিকে ডিটেকটিভ গোন ব্যস্ত আউটার হ্যাব্রিডের রহস্যময় লাউটহাউজে পাওয়া অজানা এক লাশের তদ্যন্তে। এমন নৃশংসভাবে কে খুন করলো লোকটাকে? আর লাশের হাতে এত মৌমাছির হুল ফোটানোর দাগই বা কেন? এডিনবার্গে থাকা ক্যারেন তার বাবার মৃত্যু রহস্য জানতে মরিয়া। কী নিয়ে গবেষনা করতো তার বাবা, যার জন্য বেঘোরে প্রাণটাই দিতে হলো?
কফিন রোড- ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাওয়া এই তিনজনের গল্প। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সবাই মুখোমুখি হয় কঠিন এক সত্যের, যা পুরো মানব জাতির জন্যই হুমকিস্বরূপ! সাধারণ কয়েকজন মানুষ কি একত্রে পারবে এই বিশাল বিপর্যয় ঠেকাতে?

  
                        𝓘 𝓪𝓶 𝔀𝓱𝓸
                           𝓘 𝓪𝓶.
                      𝓝𝓸𝓽 𝔀𝓱𝓸 𝔂𝓸𝓾 
                      𝓽𝓱𝓲𝓷𝓴 𝓘 𝓪𝓶.
                       𝓘 𝓪𝓶 𝓶𝓮.

                                       - 𝐵𝓇𝒾𝑔𝒾𝓉𝓉𝑒 𝒩𝒾𝒸𝑜𝓁𝑒

আমি...
                       একজন "আমি" গড়ে উঠে কীভাবে? অভিজ্ঞতা, স্মৃতি, ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ে। কিন্তু যদি কারো মানসপট থেকে "আমি"- কেই সযত্নে আলাদা করে ফেলা হয় তখন? স্মৃতিও তখন প্রতারণা করে বসে! আগের " আমি" আর এখনকার "আমি" যখন মুখামুখি হবে একে অপরের, কী হবে ফলাফল... 

               ● আখ্যান —

চারিদিকে নিঃছিদ্র অন্ধকার। অন্ধকার সয়ে আসতেই যখন আলোর মুখামুখি হতে হলো মনে হলো অন্ধকারই ভালো ছিল! নির্জন সাগর তীরে পড়ে থাকা ব্যক্তিটির মনোভাব এমনই ছিল। "আমি কে?"- এই প্রশ্নের জবাবে যখন সে মরিয়া, সন্ধান মেলে " কফিন রোড"- এর। কী সম্পর্ক তার কফিন রোডের সাথে? তার ব্যবহার্য সামগ্রী থেকে কেন তার পরিচয় মেলে না! এত গোপনীয়তা কেন... 

রহস্যময় লাইটহাউজ থেকে হারিয়ে যাওয়া নাবিকদের ফেলে যাওয়া জিনিসপত্রের সাথে মেলে বিভৎস লাশ! লাশের শরীরে অসংখ্য মৌমাছির হুল ফোটানোর দাগ। ডিটেকটিভ গোন ব্যস্ত যখন লাশের পরিচয় উদ্ধারে, জানতে পারে এক আজব তথ্য!

বাবার মৃত্যুতে নিজেকে দোষী ভাবে ক্যারেন। গত দু'বছর ধরে এইজন্য নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে চলেছে। কিন্তু বাবার রেখে যাওয়া শেষ চিঠি তার কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়! 

বিছিন্ন তিনটি ঘটনা কিন্তু আদোও কি বিছিন্ন? ঘটনাগুলোর সাথে মানবজাতির অস্তিত্ব জড়িয়ে যায় কীভাবে... 

               ● পর্যালোচনা ও প্রতিক্রিয়া —

সাধারণত দেখা যায় মোটামুটি বড় কলেবরে বইয়ের কাহিনী প্রথম দিকে কিছুটা স্লো হয়ে থাকে কিন্তু এইক্ষেত্রে "কফিন রোড" ব্যতিক্রম। শুরু থেকেই টেনে পড়ে যাওয়ার মতো একটি বই। 

মনস্তত্ব বড়ই আজব বিষয়। যার রহস্য আদোও কোনোদিন ভেদ হবে কিনা সন্দেহ। নিলের চরিত্র সেদিকেই ইঙ্গিত দেয়। পড়তে যেয়ে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম অতীত থেকে বাঁচতেই কি স্মৃতি মুছে গেছে নাকি অন্য কোনো কারণ আছে। শেষ অবধি না যাওয়া পর্যন্ত খুনির পরিচয় অস্পস্ট ছিল। টুইস্ট আর রহস্যের পরিমাণ ভালোই ছিল। যখনই মনে হচ্ছে বুঝে গেছি, গল্পের মোড় ঘুরে যাচ্ছে। বইয়ের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হলো কল্পপটের বর্ণনা। যেন চোখের সামনেই ঘটছে। বইয়ে অন্যমাত্রা যোগ করেছে মেডিক্যাল ও সায়েন্টিফিক টার্মগুলার আলোচনা। প্রতিটি বিষয় সুন্দরভাবে ব্যাখা করা হয়েছে। 

বইয়ে বিভিন্ন স্থানগুলোর নাম দাঁত ভাঙার মতো ছিল। অন্যরকম মিস্ট্রি থ্রিলার। মৌমাছিকে কেন্দ্র করে যে এমন গল্পও হতে পারে...! 

               ● লেখনশৈলী —

লেখনী এককথায় মারাত্মক। পোস্টমর্টেম ও মেডিক্যাল রিলেটেড বিষয়গুলো লেখক পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। মৌমাছির জীবনব্যবস্থা, কলোনি ও সায়েন্টিফিক দিকগুলোও ভালোভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে লেখকের গল্প বলার স্টাইল। কল্পপটের পর্যাপ্ত বর্ণনা করা হয়েছে আবার অতিরিক্ত কোনো আলোচনাও নেই। 

               ● অনুবাদ —

অনুবাদ বেশ সাবলীল। বই টেনে পড়ে যাওয়ার অনেকাংশে ক্রেডিট অনুবাদে দিতেই হয়। তবে কিছু জায়গায় অনুবাদ খটমটে লেগেছে। আবার দু-এক জায়গায় একই শব্দের বাংলা-ইংলিশ ব্যবহার রয়েছে। এছাড়া আর তেমন কোনো অসামঞ্জস্যতা পাইনি।

               ● চরিত্রায়ন —

বেশ কিছু চরিত্রের আলোচনা রয়েছে বইয়ে। নিল, আদোও কি তার নাম নিল কিনা সন্দিহান। আগের "আমি"- কে সে প্রতারণা, মিথ্যাবাদী হিসেবে দেখে। ক্যারেন, নিজের খারাপ ব্যবহারের জন্য বাবার মৃত্যুর কারণ হিসেবে নিজেকে দেখে। ডিটেকটিভ গোন, সমস্যা এড়িয়ে চলার বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও জড়িয়ে যায় বিভিন্ন ঝামেলার সাথে। কনর, ক্যারেনের গডফাদার। ক্যারেনের গার্ডিয়ান হওয়ার দায়িত্ব তার নেওয়ার কথা হলেও রহস্যজনকভাবে নিজেকে আড়াল করে ফেলে। এছাড়া আছে বিলি, জন, স্যালি, অ্যালেক্স আরও অনেকে।

               ● প্রোডাকশন —

বইয়ের প্রোডাকশন দারুণ হয়েছে। হার্ডকাভারের মান যথেষ্ট ভালো, সহজে কোণা ভেঙে যাওয়ার ভয় নেই। পেজের মান, বাঁধাই, জ্যাকেটের মানও ভালো। আমার জন্য সুবিধা হয়েছে জ্যাকেট বইয়ের সাথে আঠা লাগানো না থাকায়। আরামসে খুলে পড়া গেছে। 

               ● বানান ও সম্পাদনা —

বানানে অল্পবিস্তর ত্রুটি আছে। 'র', 'ড়', 'ই'- এর ব্যবহারে কিছু ভুল আছে। কিছু জায়গায় 'া' হবে কিন্তু অনুপস্থিত আবার যেখানে হবে না সেখানে দেওয়া। 

২৩৩ পেজ- যদি আপনি একটা আপনার লাইসেন্সটা দেখাতে পারেন।
এখানে " একটা" এর ব্যবহার কি দরকার বুঝলাম না। না হলেই তো মানানসই লাগে। এমন কিছু লাইন আছে কিছু। 

               ● প্রচ্ছদ ও নামলিপি —

প্রচ্ছদটা বইয়ের সাথে অর্থবহ। বেশ কিছু কল্পপট একসাথে ফুটে উঠেছে, সুন্দর। নামলিপিতে পানির ঢেউয়ের স্টাইলটা ভালো লেগেছে। 

কিছু বই থাকে, পড়ার পর রেশ থেকে যায়; "কফিন রোড" আমার কাছে এমনই একটা বই। মিস্ট্রি থ্রিলার পছন্দ করে এমন পাঠকের কাছে সুখপাঠ্য হবে বলে আশা করাই যায়।
রিভিউটি লিখেছেনঃ রাফিয়া রহমান

Post a Comment

0 Comments