আখিদা - ত্রিজিৎ কর Akhida by Trijit Kar

আখিদা - ত্রিজিৎ কর Akhida by Trijit Kar

বই আখিদা :"In The Dark , don't take her name"
লেখক: Trijit Kar 


আমি অত্যন্ত ভীতু মানুষ, তাই দিনের বেলায় পড়তে বসেছিলাম। কিন্তু টানা পড়ে শেষ করলাম।

বইটিতে উপন্যাস টি দুটি ভাগে বিভক্ত-

১, আখিদা: দুঃস্বপ্নের রাত- এটি ফেসবুকে প্রকাশিত আখিদার প্রথম অংশ যা আমরা আগেই পড়েছি। তাই নতুন করে কিছু বলার নেই। উপন্যাসের প্রয়োজনেই বইটিতে কিছু পরিবর্তন হয়েছে।

২, কুড়ুল কন্যার অন্তিম অধ্যায়: আখিদা আবার ফিরে এসেছে বলা ভালো সে সবাইকে আবার ফিরিয়ে এনেছে টোপাগুড়ির সেই অভিশপ্ত জঙ্গলে, সঙ্গে আরও অনেক নতুন চরিত্র। অখিদার অতীত, তার সিরিয়াল কিলিং, আস্যাইলামে ঘটা তার সাথে অবিচার,আখিদা সংহার এবং আরও নানান মোচড় রয়েছে এই দ্বিতীয় খন্ডে। আছে 'পুনশ্চ' এর মতো একটা উপসংহার....💗

১. এটি হরর থ্রিলার গোত্রের লেখা হলেও আমার এটিকে হরর থ্রিলারের পাশাপাশি সারভাইভাল হরর মনে হয়েছে। আখিদার কোদালের কোপ থেকে বেঁচে ফেরা এবং ফিরলেও আখিদার নাগাল থেকে পালিয়ে বেড়ানো এই কারণে আমার এটিকে সারভাইভাল মনে হয়েছে।

২. লেখকের গল্প বলার কায়দাকে জানাই কুর্নিশ। অত্যন্ত সরল, সোজা ভাষায় লেখা এই উপন্যাস বুঝতে খুব সুবিধা হয়। চোখের সামনে সমস্ত দৃশ্যপট যেনো ভেসে ওঠে। এই দিনের বেলায় পড়তে পড়তে

 আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল😢।

৩. রাতের কাল্পনিক টোপাগুড়ির জঙ্গলের যে ভয়াবহ পরিবেশ উঠে এসেছে উপন্যাসে তা সত্যিই অসাধারণ।লেখকের কলম যাদু সৃষ্টি করেছে।কুয়াশা ঢাকা জঙ্গল যেনো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। উত্তরবঙ্গে যাবার সুযোগ কোনদিন হলে বইটি নিয়ে যাব আর ট্রেনে উঠেই পড়তে আরম্ভ করবো❤️।

৪. অনেক চরিত্র এসে ভীড় করেছে উপন্যাসে। চরিত্র গঠনও আমার বেশ ভালো লেগেছে।

🖍️ বইটির ৫২-৫৩ পাতায় লেখা আছে---

"রক্তিম এরপর কিছু বুঝে উঠবার আগেই একটা শক্ত হাত তৎক্ষণাৎ জানালা দিয়ে এসে ওর চুলের মুঠিটা চেপে ধরল। তারপর প্রচণ্ড জোরে একটা টান, রক্তিমের বীভৎস চিৎকার... ট্রেনের সেই অন্ধকার কামরায় উপস্থিত প্রত্যেকে দেখল ঠিক তাদের চোখের সামনে দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে রক্তিমের শরীরটা পুতুলের মতো এক হ্যাঁচকা টানে জানালা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল।"

কিন্তূ জানালায় তো শিক দেওয়া রয়েছে (৫৪ পাতার ছবি)। তাহলে কীভাবে একটা আস্ত দেহ জানালা দিয়ে বেড়িয়ে গেলো?

🖍️ ৮২ পাতায় লেখা আছে---

"......সে সেই দিকে গিয়ে একে একে আদিত্য, সোনালী দেবী, তার স্বামী অজিতবাবুকে বন্দুকের জোরে আখিদার নাম নেওয়াতে বাধ্য করে। পরে সেই দু-জন আখিদার হাতে মারা গেলে রোমিলা আবার পিছনে ফিরে গুড়িয়াদের দিকে আসে..."

আমার মনে হয় ওটা দুজন না হয়ে তিনজন হবে।

🖍️ দ্বিতীয় ভাগে আখিদার নৃশংস হত্যার আরো কয়েকটা বর্ণনা থাকলে খুব ভালো হতো। এই বিষয়ে প্রথম খন্ডের থেকে দ্বিতীয় খণ্ড কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে বলে আমার মনে হয়।

সব মিলিয়ে ভয় পেতে হলে পড়তেই পারেন👍👍😊 বইটি।

রিভিউটি লিখেছেনঃ 


আখিদা - ত্রিজিৎ কর।
বার্ণিং ট্রেন বা ট্রেন টু বুসান এই সিনেমাগুলোতে একটা পিভোটাল রোল থাকে মনস্তাত্ত্বিক ক্লস্ট্রোফোবিয়ার। একটা গতিময় নিশ্চিত মৃত্যুর সাথে নিরলস সংগ্রাম। কিন্তু পালানোর পথ নেই! তবে ক্রাইসিস শুরু হওয়ার আগে, তার বিস্তার বুনে দেওয়া হয় প্রারম্ভের আনাচে-কানাচেতে। চরিত্রগুলিকে আলাদা করে পরিচিতি তথা বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করা হয় যত্ন করে। যাতে দর্শক স্বল্প সময়ে আংশিক একাত্ম বোধ করেন চরিত্রগুলির সাথে। যাতে সময়ে এলে এঁদের বিপদে / আতঙ্কে দর্শকও ভয়-ভাবনায়ে সীট আঁকড়ে বসে থাকেন। অব্যর্থ ফরমুলা। ত্রিজিৎ করও এই ফর্মুলা দিয়ে একই পরিসর রচনা করেছেন। একটা ট্রেন। তাতে গুটিকয়েক যাত্রী। আর বাইরে জঙ্গলের অন্ধকারে রক্ত লুব্ধ অশরীরী আততায়ী। এক এক করে মৃত্যুর কোলে টেনে নেবে। বাংলা হরর থ্রীলারে এইরকম পরিসর আমি পাইনি আগে। স্বভাবতই দৃশ্যকল্পের ঠাসবুননের আশ্বাসে টান টান হয়ে ঢুকে পড়ি গল্পে। দুটি বড় গল্প আছে বইটিতে। দুটো ঘটনা। প্রথমটায় ভয়ালের সাথে পরিচয়। দ্বিতীয়টায় ভয়ালের বিনাশ। যথেষ্ট জায়গা ছিলো লেখকের, চরিত্রগুলির নির্মাণে আরও যত্নবান হওয়ার। যে চমৎকার পরিবেশ তিনি রচনা করেছিলেন, তার সাথে সাযুজ্য রাখতে গল্পের চরিত্রদের সাথে যথেষ্ট একাত্ম বোধ করতে পারিনি। কিন্তু গল্পের গতি আছে। ছাড়তে পারছিলাম না। তবে ফর্মুলা মেনে অনেকেই পরিবেশ রচনা করেন, কিন্তু খুব কমই আছেন যাঁরা সেই ফর্মুলাতেই নিজস্ব মুন্সিয়ানা পরিবেশন করে দেন, যেমন জেমস্ ওয়্যান বা স্ট্যানলি কুবরিক। রিভিউ লিখতে বসে বারবার সিনেমার প্রসঙ্গ চলে আসছে তার কারণ গল্পের আবহ পুরোদস্তুর সিনেম্যাটিক। অনায়াসে চিত্রনাট্য বানানো যায় এই গল্পের। তবে শেষটা লেখক একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলেছেন বলে আমার মনে হয়েছে। তা-ও, এতো ভিন্ন স্বাদের একটা লেখা, বাংলা ভাষায় আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। বইটা কিনে সংগ্রহ করবো ভেবেছি। 

বছরদুয়েক আগে মণিশ মুখোপাধ্যায়ের ধূমাবতী সিরিজটা পড়ে বেশ ভালো লেগেছিলো। পিডিএফ-এ পড়েছিলাম, তারপর বইদুটি কিনে রাখি। কিনতে গিয়ে ওনার নরক নামের আরেকটি বই কিনি আর তখন সদ্য বেরিয়েছিল অভীক সরকারের কাউরিবুড়ির মন্দির,  বিষয় কাছাকাছি বলে সেটাও সংগ্রহ করি। এইটা ভুল হয়ে যায়। শেষের দুটো বই বেশ বাজে। কাউরিবুড়ি তাও পড়া যায়। 'নরক' যাকে বলে অতীব খাজা! পয়সাটা জলে যায়। এই 'হিট-ইয়া-মিস্' খেলায়ে ত্রিজিৎ কর কেমন পারফর্ম করেন সেটা দেখার। আখিদা যেহেতু আমার ভালো লেগেছে, এইটা ছাড়া ওনার রিসেন্ট পাবলিশ্ড একটা বই কিনবো, মনস্থির করেছি।

শেষমেশ বর্ণপরিচয় অ্যাডমিনদের ধন্যবাদ। বিতাড়িত হওয়ার ভয়ে, রিভিউ লিখতে বসে, বেশ মজাই পেয়েছি। আবারও লিখবো। তবে দুমাস বাদে।

রিভিউটি লিখেছেনঃ Ratul

Post a Comment

0 Comments