বই- দি ডিভোশন অফ সাসপেক্ট এক্স
লেখক- কিয়োগো হিগাশিনো
অনুবাদক- সালমান হক
কী পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখব জানি না, এখনও যেন ঘোরের মধ্যে রয়েছি। বিগত দুই সন্ধেতে শেষ করলাম জাপানী লেখক কিয়োগো হিগাশিনো রচিত 'দি ডিভোশন অফ সাসপেক্ট এক্স'। বইটিকে ডিটেকটিভ গল্প বলব নাকি ক্রাইম থ্রিলার বলব জানি না। এরকম রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার আগে পড়েছি বলেও মনে হয় না। আঠারোটি অধ্যায়ে বিভক্ত এই উপন্যাসটি শুরুর থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠকের রোমকূপ খাড়া করে রাখার জন্য যথেষ্ট।
সারসংক্ষেপ: গল্পের শুরুতেই এক ডিভোর্সী মহিলা ও তার মেয়ে মিলে দুর্ঘটনাবশত খুন করে ফেলে মহিলার অত্যাচারী প্রাক্তন স্বামীকে। তারা যখন আত্মসমর্পণ করার কথা ভাবছে তখন তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন তাদের প্রতিবেশী এক গণিত শিক্ষক।
অন্যদিকে পুলিশ একটি অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিকৃত করে দেওয়া লাশ খুঁজে পায়। ঘটনার তদন্তে দিশেহারা অফিসার সাহায্য চান তাঁর বিজ্ঞানী বন্ধুর যিনি ইতিপূর্বে বহু কেসে পুলিশকে সাহায্য করে 'গোয়েন্দা গ্যালিলিও' উপাধি জোগাড় করে ফেলেছেন।
মধ্যবয়স্ক গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক, যাঁরা কিনা আবার পুরাতন বন্ধু, তাঁদের স্নায়বিক লড়াইতে শেষমেশ বিজয়ী হয় কে জানতে হলে উপন্যাসটি অবশ্যই পড়তে হবে।
ভালো লাগা: এতক্ষণ রিভিউটা পড়ে আপনি নিশ্চয় মনে মনে বিরক্ত হয়ে উঠেছেন, ভাবছেন এমন টানটান থ্রিলারের কেউ স্পয়লার দেয়! আর সবুর করুন মশাই, আমি যেটুকু বলেছি তা মূল গল্পের ছিটে ফোঁটা মাত্র। এই গল্প হচ্ছে পেঁয়াজের খোলসের মত, যতই ছাড়াতে থাকবেন ততই নতুন খোলস খুঁজে পাবেন। টুইস্টের পর টুইস্ট পেয়ে আপনার মাথা ঘুরবে। সাধারণ গোয়েন্দা গল্পে আপনাকে অপরাধী কে বোঝার জন্য মাথা খাটাতে হয়, কিন্তু এই গল্পে গোয়েন্দা পটভূমিতে আসার আগেই অপরাধ আপনার চোখের সামনে সংঘটিত হয়, অপরাধী আপনার চোখের সামনে ঘুরতে থাকে। তাহলে কি এ নিছক চোর পুলিশের ধরাধরি খেলা? আজ্ঞে না মশাই, আঠারোতম অধ্যায়ে যাওয়ার আগে এই গল্পের তল পাওয়া অসম্ভব। গল্পের মুখ্য চরিত্র ঈশিগামির বুদ্ধিমত্তা যেমন আপনাকে মুগ্ধ করবে তেমনই এই মানুষটার মনের তল পাওয়ার জন্য আপনি ছটফট করবেন অথচ তল খুঁজে পাবেন না।
শুরুতে মনে হবে কেবল রোমাঞ্চ গল্প কিন্তু ক্রমশ আপনি বুঝতে পারবেন গোয়েন্দাদের সঙ্গে আপনিও ঈশিগামির পাতা রহস্যের ফাঁদে পড়েছেন। টানটান রহস্য ও রোমাঞ্চ ছাড়াও যে জিনিসটা আমার ব্যক্তিগতভাবে ভাল লেগেছে তা হল লেখকের চরিত্র অঙ্কন। প্রতিটি চরিত্র লেখক যথাযত মনোযোগ দিয়ে তৈরী করেছেন যার ফলে প্রত্যেকটি চরিত্র আলাদা আলাদা ভাবে আপনার নজরে আসবে, আপনার ভাল লাগবে। ভালোবাসা- বন্ধুত্ব- এই বিষয়গুলোকেও লেখক অন্য রকমভাবে উপস্থাপন করেছেন।
অনুবাদের প্রসঙ্গ এলে সালমান হকের প্রশংসা না করলে অন্যায় হবে, উপন্যাসটি পড়তে পড়তে আপনার খুব একটা মনে হবে না যে আপনি অনুবাদ পড়ছেন। লেখক খুব প্রাঞ্জলভাবে ভাবানুবাদ করেছেন।
খারাপ লাগা: খারাপ লাগার বিশেষ জায়গা নেই যদিও তবুও বলতে হয় ভেতো বাঙালীর কাছে জাপানী নামগুলো বড় খটমট লেগেছে। তাছাড়া বাংলাদেশী লেখকের অনুবাদ যেহেতু তাই বাংলাদেশী টানে অনেক সময় কথাবার্তা হয়েছে যা ভারতীয় বাঙালীর কাছে একটু অন্যরকম লাগতে পারে। তবে আমার মত যারা হুমায়ুন আহমেদ বা বাংলাদেশী অন্যান্য থ্রিলারের ভক্ত তাদের কাছে বিষয়টা খুব একটা সমস্যার হবে না।
কথোপকথন অংশে কিন্তু লেখক ভাষানুবাদ করেছেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এই বিষয়টা আমার ভাল লাগেনি। যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ইংরাজীতে আমরা প্রায় বলি - 'really?' এটা ইংরাজীতে গ্রহণযোগ্য কিন্তু বাংলাতে যদি তাকে লেখা হয়- 'আসলেই?' জিনিসটা বড় চোখে লাগে।
মিশাতোর শেষ পরিণতিটা জানা হল না। শেষ দৃশ্যখানি মনে হল আরও কিছু থাকলে ভাল হত। হয়ত লেখক এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই করেছেন, তবুও মনটা কেমন যেন খুঁতখুঁত করছে আরকি।
বইটা পড়তে বলব কিনা? আরে মশাই এক্ষুণি পড়ুন, অবশ্যই পড়ুন, একশবার পড়ুন। আপনি যদি থ্রিলারের ভক্ত হন আর এই বই না পড়েন তাহলে কিন্তু আপনারই লোকসান।
আমার ব্যক্তিগত রেটিং থাকবে - ৯.৫/১০।
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।