তমস
ভীষ্ম সাহনী
অনুবাদ: সুভাষ মুখোপাধ্যায়
১৯৪৭ এর মার্চে অবিভক্ত ভারতের রাওয়ালপিন্ডিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পটভূমিতে রচিত এই উপন্যাস। সেই সময়কালের অধুনা পাকিস্তানের অন্তর্গত উত্তর পশ্চিম পাঞ্জাব প্রদেশের শহর ও পার্শ্ববর্তী গ্রাম্য এলাকার মানুষজন, হাটবাজার, মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বারা, হিন্দু-মুসলিম-শিখ জনগণের পারস্পরিক সম্পর্ক, কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মতপার্থক্য সেইসঙ্গে ওই অঞ্চলের তদানীন্তন বৃটিশ ডেপুটি কমিশনারের মনোভাব ও অবস্থান ইত্যাদি পুঙ্খানুপু্খভাবে ফুটে উঠেছে। এতটাই নিখুঁত বর্ণনা যে পড়তে পড়তে ওই সময়ের প্রেক্ষাপট মনের মধ্যে গেঁথে যায়। কিন্তু যতটা বিশদ বর্ণনা লেখক ওই অঞ্চল, সেখানকার মানুষজন এবং দাঙ্গা লাগার পটভূমি রচনা করতে ব্যক্ত করেছেন তত বিশদভাবে দাঙ্গার বিবরণ তাঁর লেখায় পাই না। তাই এই উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র যার কথা দিয়েই উপন্যাসের শুরু সেই নাথুর শেষ পরিণতি লেখক শুধু এককথায় বলে শেষ করে দিলেন। কিভাবে দাঙ্গায় তার প্রাণটি গেলো তার বর্ণনা নেই। নাথুর বউয়ের কি হলো লেখক তাও জানালেন না অথচ নাথু ও তার বউয়ের কথা শুরুতে কত বিশদে তিনি জানিয়েছিলেন। তারপর দানবীর প্রধানজির ছেলে রণবীর যে তার বন্ধুদের সাথে নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল তার কোনো কথাও আর জানা গেলো না। আরও অন্য অনেক চরিত্র সম্বন্ধেই এই কথা প্রযোজ্য।
উইকিপিডিয়া আর গুগলে সার্চ করলে রাওয়ালপিন্ডি দাঙ্গার বিভৎস বর্ণনা কিছুটা খুঁজে পাওয়া যায়, বিশেষ করে অগণিত হিন্দু ও শিখ নারী ও শিশুদের উপর অত্যাচারের যে কথা গুলো নেট থেকে জানা যায় সেই সম্বন্ধে বর্ণনাও সীমিত ভাবে লেখা এই উপন্যাসে। তবে সেই সময়কার রাজনৈতিক, সামাজিক জীবন সম্বন্ধে একটা সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এই বইটি থেকে। আর কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনুবাদ খুবই ভালো লেগেছে। সহজ প্রাঞ্জল অনুবাদ। কয়েক জায়গায় কিছু পাঞ্জাবী আর ওই অঞ্চলের স্থানীয় শব্দ অপরিবর্তিত রেখেছেন, তাতে বুঝতে কোনো অসুবিধে হয় না।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Sunibesh Mandal
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।