স্বামী ও বন্ধুদল - আর. কে নারায়ণ Swami O Bindhudol by R K Narayan

স্বামী ও বন্ধুদল - আর. কে নারায়ণ Swami O Bindhudol by R K Narayan

বই - স্বামী ও বন্ধুদল (বাংলা অনুবাদ) 
লেখক- আর. কে নারায়ণ 
অনুবাদ : সমরেন্দ্ৰ সেনগুপ্ত 
ন্যাশনাল বুক ট্ৰাস্ট, ইণ্ডিয়া 
ISBN : 978-81-237-1737-1 
ভাষাঃ বাংলা


একেকটা লেখা থাকে যা পড়ার জন্য শুধু নিজের মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত করলেই চলে না নিজের সমস্ত সত্তা দিয়ে পড়তে হয়। আর. কে নারায়ণের বিখ্যাত সৃষ্টি স্বামী ও বন্ধুদলও সেই গোত্রেই পড়ে। ছোটবেলাই প্রথম পড়েছিলাম, তখন ইংরেজী ভাষাতে পড়েছিলাম। আমার বয়সী একটি ছেলে আমার মতই ভাবনাচিন্তা যার, দুস্টু বুদ্ধি যার, যে কখনও নিজের দুস্টুমিতে সফল হচ্ছে, আবার কখনও নিজের ফাঁদে নিজেই জড়িয়ে পড়ছে- তার কথা পড়তে গিয়ে ভারী মজা লেগেছিল। শেষ দৃশ্যে যেখানে রাজমের সঙ্গে স্বামীর বিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে সেই দৃশ্য পড়তে গিয়ে চোখে জল এসেছিল। 

       আজ অনেক বছর বাদে সেই একই বই আবার পড়লাম।লেখা এক কিন্তু সেই লেখার মধ্যেকার নির্যাসটাকে অন্যরকম ভাবে, অন্যরকম করে আবিষ্কার করতে পারলাম। বইয়ের প্রতিটা পাতায় ছোট্ট স্বামীনাথন ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে লেখক আর. কে নারায়ণের অসাধারণ সাহিত্য প্রতিভাকে উপলব্ধি করতে পারছিলাম। স্বামী ও বন্ধুদল শুধু একটি উপন্যাস মাত্র নয়- এ যেন স্বাধীনতাপূর্ব দক্ষিণ ভারতীয় সমাজের এক জলজ্যান্ত ছবি। শুধু সামাজিক চিত্রই নয়, প্রাকৃতিক চিত্রাঙ্কনেও লেখক অসামান্য। লেখকের কাল্পনিক শহর মালগুড়ি ও মালগুডির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সরযূ নদী কখন যে আমার শান্ত শহর মেদিনীপুর ও মেদিনীপুরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কাঁসাই নদীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেল টেরই পেলাম না। আমি কখনও নিজেই মালগুডির বাসিন্দা হয়ে গেলাম আবার কখনও স্বামীনাথনরা সদলবলে আমার শহরে এল। এ এক অসাধারণ অনুভূতি। প্রত্যেকটি চরিত্র  তাদের নির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গল্পে এতটাই প্রাঞ্জলভাবে উপস্থিত যে তাদেরকে আমাদের আপনজন বা পরিচিতজন ভাবা থেকে নিজেকে বিরত রাখা যায় না। স্বামীনাথন আর ঠাকুমার দৃশ্য পড়তে পড়তে মনে পড়ে যায় নিজের ছোটবেলায় ঠাকুমার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো। ঠাকুমা আর নেই এই উপলব্ধি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বামীর জন্যও বুক কেঁপে ওঠে- মনে হয় স্বামীকেও তো একদিন তার ঠাকুমাকে হারাতে হবে কারণ কোনো  মানুষই তো চিরকালীন নয়। পরমুহূর্তেই মনের মধ্যে আবার স্বস্তি আসে যখন উপলব্ধি করি স্বামীকে কোনোদিনও তার ঠাকুমাকে হারাতে হবে না, স্বামীনাথন তার ঠাকুমাকে নিয়ে শাশ্বত হয়ে থাকবে সাহিত্যে। এই স্বস্তিটাই সাহিত্যের জিত। যা কিছু বাস্তবে হেরে যায়, সাহিত্যে তা ঠিক জিতে যায়। 

     স্বামীনাথনের চরিত্রটি লেখক যেভাবে এঁকেছেন তা ভাবলে অবাক হতে হয়। একজন পরিণত বয়স্ক মানুষ হয়েও একটি ছোট্ট শিশুর মনস্তাত্ত্বিক দিক এত প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরা হয়ত আর. কে নারায়ণ বলেই সম্ভব হয়েছে। 

       শেষ দৃশ্যে এসে এই বড়বেলাতেও চোখে জল এল।আজকালকার প্রযুক্তির যুগে দূরত্ব বলে হয়ত কিছু হয় না কিন্তু সেই সময়কার প্রেক্ষাপটে যখন আমরা উপলব্ধি করি স্বামীনাথন হয়ত বরাবরের মত নিজের প্রিয় বন্ধু রাজমকে হারিয়ে ফেলল- বুকটা তখন হুহু করে ওঠে। কত না বলা কথা যে বলা হল না ভাবলেই নিজেদের মনের ভেতরে ঝড় ওঠে। পরমুহূর্তেই মনে হয় আজকালকার প্রযুক্তির যুগে হয়ত আমরা চাইলেই যোগাযোগ করতে পারি কিন্তু তবুও না বলা কথা কি সবসময় বলা সম্ভব হয়ে ওঠে! যে অহং বা অভিমানের প্রাচীর এত বছর আগে স্বামী আর রাজমকে আলাদা করেছিল সেই অহং বা অভিমান আজও আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্বমহিমায় বিরাজমান, হয়ত আগের চেয়েও আরও অনেক বেশি তীব্রতর। 

       আর বেশি কী বলব না বলব জানি না, হয়ত লেখাটা অগোছালো হয়ে গিয়েছে। এই লেখা সবার নিশ্চয় পড়া, যাদের পড়া নেই তাদেরও পড়তে অনুরোধ করব; আর পড়ার পর সবার নিজ নিজ অনুভূতি ভাগ করে নিতে অনুভব করব। ভীষণ জানতে ইচ্ছে করছে আমার মত কার কী অনুভূতি হয়েছে।

রিভিউটি লিখেছেনঃ Sinchan Nohara

Post a Comment

0 Comments