শোণিত উপাখ্যান: বর্তমান
সৈয়দ অনির্বাণ
"ইতিহাস কথা বলে – বিজয়ীদের কথা। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় – অতীত গৌরবের সাক্ষ্য। কিন্তু কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া ঘটনাবলির কতটুকু তাতে অটুট থাকে?"
সত্যি বলতে শোণিত উপাখ্যান ট্রিলজির প্রথম বইটি পড়তে শুরু করেছিলাম কোনোরকম এক্সপেক্টেশন ছাড়াই। যদিও ভূমিকাতে "আরবান ফ্যান্টাসি" বলে অভিহিত করা ছিলো তবুও ঠিক ধারণা ছিলো না যে কেমন ধরণের বই হতে পারে। শুরুর করার পর রীতিমতো আটকে গেলাম। 35-36 পৃষ্ঠার পর থেকে দুরন্ত গতিময়। সবচেয়ে পজিটিভ ব্যাপার যেটা আমার লেগেছে সেটা হলো লেখার ডিটেইলিং। এই বইয়ের সবথেকে বিশেষ দিক মূল চরিত্রদের ডেভেলপমেন্ট। লেখক চরিত্র ডেভেলপমেন্ট ও ব্যাকস্টোরিতে মোটেও কার্পণ্য করেননি।
গল্পটি শুরু হয়েছে একটা ভয়াবহ খুন নিয়ে। ঘটনার তদন্তে জড়িয়ে পড়ে অসামাজিক অথচ সুদক্ষ পুলিশ অফিসার কায়েস হায়দার। দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন নিহত এবং অপরজন রাশেদুন যে মারাত্বক আহত হয়ে কোমায় চলে যায়। তার প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত হয়ে প্রথমেই এক অজানা আক্রমনের শিকার হতে হল তাকে। এরপরে আচমকা আবির্ভাব ঘটল অবলাল নামক এক রহস্যময় চরিত্রের। অবলালের সাথে কায়েস হায়দারের পরিচয় বছর চারেক আগে, এক অতিপ্রাকৃত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। পরিচয় থেকেই দু'জনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের শুরু। অবলাল নামক চরিত্রটাকে একদমই কোন ছকে ফেলা যাবেনা, তার গতিবিধি অথবা পরিচয় কোনটাই জানা নেই। পেশায় বলা যায় অতিপ্রাকৃত জগতের এবং অপশক্তির বিরুদ্ধে সাধারণের রক্ষক। রাশেদুনের ওপর হামলার ধরণটা স্বাভাবিক না ঠেকায়, তার সম্পন্ন হতে হয় কায়েস হায়দারকে। অবলাল হলো অতিপ্রাকৃত শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টকারী একজন যুবক যে কিনা হোয়াইট হ্যান্ডের হয়ে কাজ করছে! হোয়াইট হ্যান্ডের কাজ হলো অতিপ্রাকৃত শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া। আর শৈলেন ভট্টাচার্য হলো অতিপ্রাকৃত শক্তির উপাসক, কোন একটা বৃহৎ কার্যসাধনে তাদের যক্ষ নামাতে হয়েছে কিন্তু একটু ভুলের কারণে তারা ঝামেলায় পরে যায় আর সেই ঝামেলা বাড়তে থাকে অবলালের হস্তক্ষেপের কারণে। অতিপ্রাকৃত শক্তির সাথে দ্বন্ধ-সংঘাতে এগিয়ে যেতে থাকে গল্পের কাহিনী! উন্মোচিত হয় অপরিচিত জগতের ভয়াবহ রহস্যের স্বরুপ।
অতিপ্রাকৃত জগতের শত্রুগুলো কিন্ত বিদেশী ফ্যান্টাসির প্রাণী নয়। আমাদের উপমহাদেশের যক্ষ,পিশাচ, স্কন্ধকাটা, মায়াবিনী চুড়েল - এরাই ঘুরেফিরে এসেছে ভয়াবহ রুপে। পাশ্চাত্যের ডেমন, ভ্যাম্পায়ার আবার দেশজ পিশাচ, যক্ষ, বেতাল - সবকিছুকে অক্লেশে মিশিয়ে যে কাহিনিটি নির্মিত হয়েছে, তা অত্যন্ত রোমাঞ্চকর।
তবে বইটি লেখক শেষ করেছেন এমন জায়গায় যে পাঠক উদগ্রীব থাকবেন পরবর্তী ঘটনা জানার জন্য। গ্রুপের পাঠকদের অনুরোধ করবো পড়ে দেখার জন্য।
রিভিউটি লিখেছেনঃ Syed Ferdous
0 Comments
আপনার মতামত লিখুন।